যশোরে মিনিকেট চালের নামে ক্রেতাদের সঙ্গে প্রতারণা
যশোর অঞ্চলে মিনিকেট চাল নিয়ে ক্রেতাদের সঙ্গে চলছে প্রতারণা। প্রকাশ্যে দিনের পর দিন এ ধরনের প্রতারণা চললেও কর্তৃপক্ষ যেন উদাসিন। ফলে ক্রেতারা অধিক দামে চাল কিনে বঞ্চিত হচ্ছেন প্রয়োজনীয় পুষ্টি থেকে। অন্যদিকে প্রতারণা থেকে অধিক লাভবান হচ্ছেন বিক্রেতারা।
যশোর আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডক্টর সাইয়েদ আলী বলেন, মিনিকেট নামে ধানের কোনো জাত নেই। আশির দশকে ভারত থেকে উচ্চ ফলনশীল জাতের চিকন ধান মিনিপ্যাকে করে বাংলাদেশে আসে। একটা সময় মিনিপ্যাক থেকে মিনিকেট নাম ধারণ করে। সেই থেকে মিনিকেট ধান হয়েছে। সময়ের আবর্তনে কথিত মিনিকেট চালের প্রতি ক্রেতাদের আগ্রহ বেড়ে যায়। আর এ কারণে বিক্রেতারা তাদের কৌশল পরিবর্তন করেন। ক্রেতা চাহিদা মেটাতে বিভিন্ন ধরনের মোটা চাল মিলে চিকন করে পলিশ করে মিনিকেট বানাচ্ছেন।
তিনি আরও বলেন, পলিশ করলে মূলত চালের উজ্জ্বলতা বাড়ানো হয়। এরপর তা মিনিকেট, সুপার মিনিকেট, একাধিক নামে বিক্রি করা হচ্ছে বাজারে।
তবে মিলাররা বলছেন, চাল অটোমেটিক কালার সর্টার মেশিনে দিলে আরো পরিষ্কার হয় ও পাতলা হয়ে যায়। তখন দেখতে চকচকে মনে হয়। এই চাল দেখেই মানুষ ধারণা করে চাল কেটে সরু করা হয়েছে।
বিক্রেতাদের কেউ কেউ বলছেন, চাল কাটা যায় না, প্রোসেস করা হয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মূলত হাইব্রিড জাতের হীরা-২, হীরা-৫, হীরা-১৯ সহ কয়েক জাতের ধান থেকে তৈরি হওয়া চাল পলিশ করা হচ্ছে। পলিশ করা হচ্ছে ব্রি ধান-২৮ ও ব্রি ধান-২৯ এর চালও। এগুলো থেকে তৈরি মিনিকেট চাল ক্রেতারা বেশি পছন্দ করেন বলে সূত্র জানিয়েছে।
এ বিষয়ে ডিভাইন গ্রুপের অটো রাইস মিল চৌগাছার ম্যানেজার এইচএম হাদিউজ্জামান বলেন, চাল আসলে চিকন করা হয় না। তাদের কাছে বিভিন্ন মিলার এবং ব্যবসায়ী চাল পলিশ করতে দেন। সেই চাল তারা সিরিয়ালি প্রথমে চালি টাইপের মেশিনের মাধ্যমে পাথর বা ঝিল বাছাই করেন। পরে বাছাই করা হয় রুগ্ন, অপুষ্ট কালো চাল। এরপর হালকা পলিশ করা হয়। এর ফলে চালে আসে চকচকে ভাব। এতে চাল খুব বেশি চিকন হয় না বলে দাবি এই কর্মকর্তার।
যশোর চালের বাজার ঘুড়ে দেখা যায়, প্রতি কেজি স্বর্ণা চাল বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৪৮, ব্রি-২৮ চাল ৬০ থেকে ৬৪, কাজল লতা ৬০-৬৬, মিনিকেট ৬৫-৭০, বাসমতি ৭০-৮০ ও নাজিরশাইল ৭৮-৮২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অপেক্ষাকৃত মোটা চাল পলিশ করে মিনিকেট বলে বিক্রি করলে কেজিতে অতিরিক্ত ৭-৮ টাকা অতিরিক্ত লাভ হয় বলে সূত্র জানিয়েছে।
এ প্রসঙ্গে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউট্রিশন অ্যান্ড ফুড টেকনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আশরাফুজ্জামান জাহিদ বলেন, চালের উপরিভাগের আবরণেই প্রোটিন, ভিটামিন ও মিনারেল বেশি থাকে। আর পুরো চালেই থাকে কার্বোহাইড্রেট। চাল সরু করতে উপরের আবরণ তুলে ফেলায় হারিয়ে যায় প্রোটিন, ভিটামিন ও মিনারেল।
তিনি আরও বলেন, আগে ঢেঁকিছাঁটা চালে ভাত রান্নার সময় মাড় হতো। এখন হয় না, কারণ যা থেকে মাড় হবে তা পলিশ মেশিনে বের হয়ে যাচ্ছে। ফলে এটা আর পুষ্টিকর থাকছে না।
এ ব্যাপারে যশোর ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর যশোরের সহকারী পরিচালক ওয়ালিদ বিন হাবিব বলেন, চাল পলিশ করে চিকন করার খবর তাদের কাছেও আছে। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া গেলে অভিযান পরিচালনা করা হবে।
এসআইএইচ