১৫ বছর ধরে বাঁশের সাঁকোতে যাতায়াত ১০ গ্রামের মানুষের

জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ১৫ বছর ধরে নিয়মিত বাঁশের সাঁকোতে যাতায়াত করছেন মাগুরার ১০ গ্রামের ৫ হাজার মানুষ। এর মধ্যে প্রাইমারি ও মাধ্যমিক স্কুলের প্রায় ২ হাজার শিক্ষার্থীরাও অনেকটা ঝুঁকি নিয়ে বাঁশের সাঁকোতে নিয়মিত যাতাযাত করছে।
সরেজমিনে মাগুরা সদরের ভাবনহাটি বাজারে গিয়ে দেখা যায়, বাজার সংলগ্ন এলাকায় রয়েছে একটি ফটকি নদী। নদীর এই পাড়ে রয়েছে সদরের ভাবনহাটি বাজার আর নদীর অপর অংশে রয়েছে শালিখা উপজেলা।
জানা গেছে, ভাবনহাটি বাজারটি মাগুরা সদরের একটি গুরুত্বপূর্ণ বাজার। এখানে রয়েছে ১টি প্রাইমারি স্কুল, ১টি মাধ্যমিক স্কুল, ১টি পোষ্ট অফিস, ১টি ভূমি অফিস, ১টি কৃষি ব্যাংক এবং ১টি কমিউনিটি ক্লিনিক, নূরানী ও হাফেজি মাদ্রাসা। এ ছাড়াও ধান ও পাটের বড় মোকাম হিসেবে পরিচিত জেলার এই বাজারটি।
শালিখা উপজেলার টিকার খালি, ভাটাইল, উজগ্রাম, চুকি নগর, শেওজগাতি, দীর্ঘলগ্রাম, গোবিন্দপুর, তালখড়ি, সাতঘরিয়া ও ধনেশ্বরগাতি-এই ১০ গ্রাামের মানুষ প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাঁশের সাঁকো পার হয়ে বিভিন্ন কাজে আসে ভাবনহাটি বাজারে। বাজারটি গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানিয়ে আসছেন একটি ব্রিজ করার জন্য। কিন্তু আজও তাদের দাবি পূর্ণ না হওয়ায় তারা ক্ষোভ প্রকাশ করছেন অনেকে।
ভাবনহাটি গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দা রেজাউল শিকদার (৬০) জানান, মাগুরা সদরের ভাবনহাটি বাজারটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বাজার। এ বাজারে স্কুল, মাদ্রাসা, ব্যাংক, ভূমি অফিসসহ নানা ধরনের দোকানপাট রয়েছে। তাছাড়া নদীর ওই পাড়ে শালিখা অংশের ১০ গ্রামের মানুষ প্রতিদিন বাঁশের সাঁকো পার হয়ে আসে এই বাজারে। এখানে নদীর উপরে যদি একটি ব্রিজ থাকত তাহলে মানুষের যাতায়াত খুবই সুবিধা হতো।
তিনি বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে চেয়ারম্যানসহ যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি কিন্তু সমাধান এখনো পায়নি। তাই আগামীতে যদি এখানে একটি ব্রিজ হয় তাহলে মাগুরা সদর ও শালিখা অংশের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি পূর্ণ হবে।
স্থানীয় বাসিন্দা ইসরাইল, আলমগীরসহ অনেকে জানান,পাকিস্তান আমলে আমাদের গুরুজনদের কাছে শুনেছি এই নদীতে ছোট ছোট জাহাজ চলত। ভারত থেকে অনেক জাহাজ এই বাজার এলাকায় নোঙর করত। বর্তমানে আমাদের এ বাজারটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এখানে সব কিছুই আছে। বিশেষ করে নদীর ওই পাড়ের শালিখা অংশের প্রায় ১০টি গ্রামের প্রায় ২ হাজার শিক্ষার্থী এই বাজার সংলগ্ন প্রাইমারি ও মাধ্যমিক স্কুলে পড়তে আসে। তারা অনেক কষ্ট করে ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হয়। আমাদের দাবি, অতি সত্বে এখানে একটি ব্রিজ হোক। এতে মাগুরা,শালিখা ও পাশ্ববতী ঝিনেদা কালিগঞ্জ অঞ্চলের ব্যবসা-বানিজ্যের উন্নয়ন ঘটবে।
এ ব্যাপারে মাগুরা সদরের মঘী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাসনা হেনা জানান, সদরের ভাবনহাটি বাজারটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বাজার। এখানে সব ধরনের প্রতিষ্ঠান রয়েছে। বাজার সংলগ্ন ফটকি নদীতে রয়েছে বাশেঁর একটি সাঁকো । এই সাকো দিয়ে শালিখা অংশের স্কুলের শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষ দীর্ঘদিন যাতাযাত করছে। এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে মাগুরা-১ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট সাইফুজ্জামান শিখরের প্রচেষ্টায় ইতিমধ্যে একনেকে একটি ব্রিজ পাশ হয়েছে। ঢাকা ও খুলনা থেকে প্রকৌশলীরা এসে পরিদর্শন করে গিয়েছে। চলতি বছরের নভেম্বর-ডিসেম্বর কাজের টেন্ডার হওয়ার কথা ছিল কিন্তু এখনো হয়নি
তিনি আরও জানান, নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকার নতুন কোনো প্রকল্প হাতে নেবে না শুনছি। তবে নির্বাচনের পর সরকার যদি ক্ষমতায় যায় তাহলে আমরা আবার চেষ্টা চালিয়ে যাব কাজটি যথাযথ ভাবে
করতে।
এসআইএইচ
