সাতক্ষীরার দেবহাটা হানাদারমুক্ত দিবস আজ
আজ ঐতিহাসিক ৬ ডিসেম্বর, সাতক্ষীরা জেলার দেবহাটা মুক্ত দিবস। মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিগাঁথা এই দিনে দেবহাটা উপজেলা পাক হানাদার মুক্ত হয়েছিল। উড়েছিল বিজয়ের পতাকা। উপজেলার বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ খুঁজে পেয়েছিল দীর্ঘদিনের যুদ্ধ বিজয়ের আনন্দ।
মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে সমগ্র দেবহাটা উপজেলা ছিল ৯ নম্বর সেক্টরের অন্তর্ভুক্ত। সাতক্ষীরা কোর্ট চত্বরের ট্রেজারীর ৪০০ রাইফেল লুট করে তৎকালীন সময়ে ৯ নম্বর সেক্টর গঠন করেন আবদুল গফুর, এম এল এ আয়ুব হোসেন ও ক্যাপ্টেন শাহাজান মাস্টার। আর এই ৯ নম্বর সেক্টরের আওতায় ৩টি সাব-সেক্টর গঠন করা হয়। তার মধ্যে প্রথম সেক্টরটি ছিল শমসের নগর। যার নেতৃত্বে ছিলেন ক্যাপ্টেন নুরুল হুদা। দ্বিতীয়টি হেঙ্গলগঞ্জ ও তৃতীয়টি ছিল টাকী। তৃতীয়টির নেতৃত্বে ছিলেন মরহুম ক্যাপ্টেন শাহজাহান মাস্টার।
বাংলাদেশের ১১টি সেক্টরের মধ্যে ৯ নম্বর সেক্টরটি ছিল সর্ববৃহৎ। ক্যাপ্টেন শাহজাহান মাস্টারের উদ্যোগেই ভারতের টাকীতে গড়ে তোলা হয় ৯ নম্বর সেক্টর। সেজন্য তাকে ৯ নম্বর সেক্টরের প্রতিষ্ঠাতা ও সাব সেক্টর কমান্ডারের খেতাব দেওয়া হয়। সমগ্র দেবহাটা উপজেলা ৯ নম্বর সেক্টরের অধীনে ছিল। সেক্টর কমান্ডার ছিলেন মেজর জলিল।
শাহজাহান মাস্টারের নেতৃত্বেই এই অঞ্চলের যুবকেরা মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। তিনি দেশ মাতৃকার টানে এলাকার যুবকদের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের প্রেরণা যুগিয়েছিলেন। তখন দেবহাটা এলাকার খানজিয়া ক্যাম্প, দেবহাটা ক্যাম্প, টাউনশ্রীপুর ক্যাম্প, সখিপুর ক্যাম্প, পারুলিয়া ক্যাম্প, কুলিয়া বাজার ও পুষ্পকাটি ইটের ভাটাসহ বিভিন্ন এলাকায় পাক সেনারা ঘাঁটি গড়ে তোলে।
দেবহাটা এলাকায় টাউন শ্রীপুর ফুটবল মাঠে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পাক সেনাদের প্রচণ্ড যুদ্ধ হয়। এই যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের খবর এক রাজাকার পাক সেনাদের কাছে পৌঁছে দেয়। ফলে পাক সেনারা মুক্তিযোদ্ধাদেরকে চারিদিক থেকে ঘিরে ফেলে। বিষয়টি ক্যাপ্টেন শাহজাহান মাস্টার বুঝতে পেরে অসীম সাহসের সঙ্গে যুদ্ধ করেন। প্রায় ২ ঘণ্টাব্যাপী যুদ্ধে পাক সেনারা পরাস্ত হয়। এই যুদ্ধে বহু পাক সেনা নিহত হয়। এ ছাড়াও ভাতশালাসহ বিভিন্ন যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন মরহুম ক্যাপ্টেন শাহজাহান মাস্টার।
ভাতশালা যুদ্ধের শেষ দিকে হঠাৎ একটি বুলেট এসে মুক্তিযোদ্ধা গোলজারের মাথায় লাগে। সেখানেই তিনি নিহত হন। এক পর্যায়ে টাউন শ্রীপুরের সেনা ঘাটির পতন হয়। তখন প্রধান সেনাপতি এম এ জি ওসমানী, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহম্মেদ ও সেক্টর কমান্ডার এম এ জলিল সকলে মিলে ক্যাপ্টেন শাহজাহান মাস্টারকে নিয়ে বিজয় উল্লাস করেন।
তবে পাক সেনারা এখান থেকে যাওয়ার সময় শাহজাহান মাস্টারের বাড়ি জ্বালিয়ে দেয়। অক্টোবর মাসে পাক সেনারা খাঁনজিয়া ক্যাম্প ছেড়ে পালিয়ে যায়। তারা যাওয়ার সময় ওই এলাকায় মাইন পুতে রেখে যায়। ওই মাইনগুলো অপসারণ করতে গিয়ে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল ওহাব শহীদ হন। পরে পারুলিয়া, সখিপুর ও কুলিয়াসহ বিভিন্ন এলাকায় যুদ্ধে পরাস্ত হয় পাক সেনারা। তারা চলে যাওয়ার সময় বহু মানুষের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয় এবং পারুলিয়া ব্রিজ ধ্বংস করে দেয়। এভাবে দেবহাটা উপজেলা পাক হানাদার মুক্ত হয় এবং উঠে বিজয়ের পতাকা।
এসআইএইচ
