'আলী ইমাম শিশুসাহিত্য রচনার দক্ষ রাজকুমার'
খ্যাতিমান শিশু সাহিত্যিক ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব কবি আলী ইমামের স্মরণে সাতক্ষীরায় স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শিশুদের স্বপ্নডানা 'গোলপাতা' পত্রিকার আয়োজনে শহরের ম্যানগ্রোভ সভাঘরে এ স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতে আলী ইমামের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন ও তাঁর বর্ণাঢ্য জীবনের উপরে প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। এসময় অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট কথাশিল্পী বাবলু ভঞ্জ চৌধুরীর সঞ্চলনায় স্মরণসভায় উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন শিশু সাহিত্যিক আবুল হোসেন আজাদ।
ঢাকা থেকে ভার্চুয়ালি (ভিডিও) বক্তব্য রাখেন, শিশু সাহিত্যিক সুজন বড়ুয়া ও আক্তার হোসেন। এসময় আলী ইমাম স্মরণে ও তাঁর বর্ণাঢ্য জীবনের উপরে আলোকপাত করে বক্তব্য রাখেন, শিশু সাহিত্যিক আবুল হোসেন আজাদ, পল্টু বাসার, সুলতান মাহমুদ রতন, আহমেদ সাব্বির, হিমাদ্রি হাবিব প্রমুখ।
এসময় বক্তারা বলেন, কোমলমতি শিশু-কিশোরদের জন্য লেখালেখি করতে গেলে লেখককেও তাদের মতো কল্পনার জগতে ডানা মেলে উড়তে জানতে হয়। শিশু সাহিত্যিক আলী ইমাম একথা জানতেন। তাই নিজেকেও তিনি সরল ধাঁচে আনন্দময় করে রাখতেন। ভালো থাকার চাবিকাঠি মেনে চলতেন দৈনন্দিন জীবনে চর্চিত ইতিবাচকতাকে। আনন্দমূলক শিক্ষার পথ প্রসারিত করা ছিল তাঁর লেখালেখির অন্যতম মূলকথা। গত ২১শে নভেম্বর তাঁর জীবদ্দশার ইতি ঘটেছে ঠিকই, তবে সেইসব রেখে যাওয়া অভিজ্ঞতারা ছাপার অক্ষর হয়ে তরুণ প্রজন্মের জন্য পথ প্রদর্শক হয়ে থাকবে বলে প্রত্যয়ব্যক্ত করেন বক্তারা।
এসময় আলী ইমামের বর্ণাঢ্য জীবনের উপরে আলোকপাত করে বক্তারা বলেন, আলী ইমাম এবং শিশুসাহিত্য-দুটোই সমার্থক। স্বপ্নবিলাসী আলী ইমাম শিশুসাহিত্য রচনার এক দক্ষ রাজকুমার ছিলেন। শিশুমানস, শিশুজগত, শিশুকল্পনাকে ধারণ করে বহু বিচিত্র রচনা সম্ভারে সমৃদ্ধ করেছেন তিনি বাংলা শিশুসাহিত্যে। চিরায়ত রচনাভঙ্গি, ধ্রুপদ কাহিনি নির্মাণ এবং ক্লাসিক্যাল শিশুসাহিত্যের মর্মকে তিনি কর্মে রূপান্তর করেছেন।
পাঁচ শতাধিক গ্রন্থের আয়নায় আলী ইমামকে প্রতিবিম্বিত করলে বিস্মিত হতে হয় শিশুসাহিত্যে জানিয়ে বক্তারা আরও বলেন, জগতের যাবতীয় অনুষঙ্গ ও কলকজাকে সযত্নে তিনি আত্মস্থ করেছেন। শব্দজালে বন্দি করেছেন মধুর রূপকল্পনাকে। আলী ইমাম সেই বিরল বাক্য শ্রমিকদের একজন-ত্যাগ ও মোহের ছলনে যিনি শিশুসাহিত্যের স্বপ্নময় পথ থেকে কখনই সরে দাঁড়াননি।
কমপ্লিট শিশুসাহিত্যিক বলতে যা বোঝায় আলী ইমাম তারই স্বয়ম্ভ প্রতীক। শুধুই অর্থহীন কল্পনার উডীন ফানুস নয়, আলী ইমামের রচনা বাস্তব পৃথিবীর ধুলিকণাকেও স্পর্শ করেছে। আলী ইমামের মূল ক্ষেত্র গদ্য রচনা। গল্প, উপন্যাস, ফিচার, ভ্রমণকাহিনি, বিজ্ঞানবিষয়ক রচনা, প্রবন্ধ-বিন্দু বিন্দু বহু রত্নকণায় তিনি আমাদের শিশুসাহিত্যকে পত্রপুষ্প-পল্লবে সজ্জিত করেছেন। আলী ইমাম নিজস্ব অবস্থান তৈরি করেছেন স্বাধীনতা-পরবর্তী সময় থেকে।
নিষ্ফলা, অনুর্বর, উদ্দেশ্য প্রণোদিত অভিভাবকহীন আমাদের শিশুসাহিত্যকে তিনি সাবালক করেছেন। এক সামগ্রিক জীবন-মগ্নতায় শিশুচৈতন্যকে যিনি লালন করেন, তাঁর মতো সার্থকনামা শিশুসাহিত্যিক সমগ্র বাংলাসাহিত্যের প্রেক্ষাপটেই খুঁজে পাওয়া ভার। দ্বিধাহীন বাক্যে লেখা যায়, আলী ইমাম একমেবাদ্বিতীয়ম। যিনি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত শিশু-কিশোরের মনোনিবেশ গঠনে কাজ করে গেছেন।
এএজেড