জিপিএ ৫ পেয়েছে চুয়াডাঙ্গার 'সাহসী কন্যা' বর্ষা
শ্রাবন্তী সুলতানা বর্ষার (১৬) বাবা ইকতার উদ্দিনের সঙ্গে মা বিউটি খাতুনের বিচ্ছেদ হয়েছে অনেক আগেই। তার মা স্থানীয় একটি সেমাই মিলে কাজ করে সংসার চালান। টানাটানির সংসার তাই দশম শ্রেণিতে অধ্যায়নরত অবস্থায় বর্ষার মামা-খালারা জোর করে তার বিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন।
মায়ের পক্ষে মেয়ের বিয়ে ঠেকানোর উপায় ছিল না। তাই বাধ্য হয়ে বর্ষা সদর থানায় যায় এবং ওসি মোহাম্মদ মহসীনকে বিস্তারিত জানালে তারা বিয়ে বন্ধ করে দেন। সেই 'সাহসী কন্যা' উপাধি প্রাপ্ত বর্ষা এবার চুয়াডাঙ্গা ঝিনুক মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ- ৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন।
বর্ষা বলেন, আজ দুপুরে রেজাল্ট পাওয়ার পর এতো খুশি হয়েছি, যে বলার ভাষা আমার নেই। অনেক কষ্ট করে পড়াশোনা করে আজ এ পর্যন্ত এসেছি। বাবা থেকেও নেই, অনেক সংগ্রাম করেছি। মা সেমাই মিলে কাজ করার সুবাদে এখনো জানেন না আমার রেজাল্ট এর খবর। কাজ শেষে রাতে বাড়িতে ফিরলে জানতে পারবেন। আমার থেকেও বেশি খুশি হবেন।
বর্ষা আরও বলেন, গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে জোর করে মামা-খালারা আমার আমার বিবাহ ঠিক করেন। তাদের জোড়াজুড়িতে আমার মা অসহায় ছিলেন। যাদের বাল্যবিবাহ হয়েছে, তাদের কেউ সুখে-শান্তিতে নেই। পড়াশোনা শিখে প্রতিষ্ঠিত হয়ে বিয়ে করতে চাই। তাই বাধ্য হয়ে আমি সদর থানায় গিয়ে ওসি মহসীন স্যারকে জানালে তিনি এসে বিয়ে বন্ধ করে দেন।
পড়াশোনার জন্য আমাকে সহযোগিতা করেন তিনি। আমি দুজন শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট পড়েছি। তারা আমার কাছ থেকে ফি নেননি। বড় ভাই হাসানুল হোসেন মাস খানেক আগে সংসারের হাল ধরতে সৌদি আরব গেছেন। এবার এইচএসসি ভর্তির খরচ জেলা প্রশাসন থেকে বহন করা হবে বলে জানানো হয়েছে। ইচ্ছে আছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ার।
তৎকালীন চুয়াডাঙ্গা সদর থানা এবং বর্তমান ঢাকা উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসিন বলেন, বর্ষাকে অভিনন্দন জানিয়েছি। তাকে এখনো ভুলিনি। বাল্যবিবাহ বন্ধে থানায় আসার জন্য অনেকে সমালোচনা করেছিল। এটা হলো সেই সমালোচকদের জবাব। এ রকম বর্ষাদের পাশে থাকলে তারা জাতির একটা গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় যেতে পারবে। আজকে আপনাদের মাধ্যমে সবাই জানবে মেয়েরা সাহসী হলে সব সম্ভব। বর্ষার জন্য শুভকামনা। আমার স্বপ্ন সে চিকিৎসক হবে। আমি তার পাশে থাকব।
এর আগে ২০২১ সালের ২৫ সেপ্টম্বর চুয়াডাঙ্গা সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন বাল্যবিবাহ ভেঙে ওই শিক্ষার্থীর পড়াশোনার দায়িত্ব নেন। তা বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারের পর উৎসাহিত হয়ে ২৮ সেপ্টেম্বর ওসির কাছে নিজের বাল্যবিবাহ ঠেকাতে লিখিত অভিযোগ জানায় বর্ষা। ওসি বর্ষাকে সাধুবাদ জানিয়ে তার বিয়ে বন্ধ করে দেন। এরপর স্কুলছাত্রী বর্ষাকে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসন ও জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে জাতীয় কন্যা শিশু দিবসের অনুষ্ঠানে তাকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। একই সঙ্গে তাকে সাহসী কন্যা উপাধি দেওয়া হয়।
এএজেড