নতুন করে দখল হচ্ছে ভৈরব নদ
যশোরের ঐতিহাসিক ভৈরব নদের খনন কাজ শেষ হলেও উচ্ছেদ করা হয়নি অবৈধ দখলদারদের। নদের দুই পাড় তো দখলে রয়েছেই, নদের জায়গাও দখল করছে তারা। নদের পাড় ভরাট করে তৈরি হচ্ছে ঘরবাড়ি। ফলে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে নদের পানি প্রবাহ।
যশোরের ফতেহপুর ইউনিয়নের ভায়নায় ভৈরব নদের পাড় দখল করে ঘরবাড়ি নির্মাণ করেছেন আয়নাল নামে এক ব্যক্তি। কেবল স্থাপনা নির্মাণই করেননি, তারা নদের পাড় ভরাট করে সবজি চাষ করছেন। ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে নদের বাঁধ।
স্থানীয়রা বলছেন, এসব স্থাপনার কারণে আগামী বর্ষা মৌসুমে পানি প্রবাহ চরমভাবে বাধাগ্রস্ত হবে। ধসে পড়তে পারে বাঁধের একটি বড় অংশ। আয়নালের পক্ষে দখল কাজে সহায়তা করছেন হারুন নামে এক ব্যক্তি।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ভায়না তারাগঞ্জ পার হয়ে আবুলের ব্রিজের কাছে আনোয়ার হোসেনের তিন জামাই ভৈরব নদের ঢাল দখল করে মাটি ভরাটের পর বেশ কয়েকটি ঘর নির্মাণ করেছেন। গড়ে তুলেছেন কামারশালাসহ অন্যান্য দোকানঘর। নদের পাড় ও বাঁধ দখল করে রীতিমতো সবজি চাষ করছেন তারা। অবশ্য দখলদাররা বলছেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের অনুমতি নিয়ে তারা সেখানে স্থাপনা করেছেন। অথচ পানি উন্নয়ন বোর্ড বিষয়টি জানেই না বলে জানায়।
এলাকাবাসীর অভিযোগ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের একাধিকবার জানানো হয়। তবে তাতে কোনো ফল হয়নি। ইউপি সদস্য বাবুল হোসেনসহ স্থানীয় ব্যক্তিরা অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নিতে বলেন আয়নালকে। এ সময় আয়নালসহ অন্য দখলদাররা গণমাধ্যমকর্মীদের সামনে বলেন, তাদের কাগজপত্র আছে। তবে তারা তা দেখাতে পারেননি গণমাধ্যমকর্মীদের।
ইউপি সদস্য বাবুল হোসেন বলেন, আয়নাল অবৈধভাবে নদের পাড় ও বাঁধ দখল করে আছেন। দোকানও করেছেন সেখানে। আমরা ওই স্থাপনা সরাতে বললে তাদের কাগজপত্র আছে বলে জানান। কিন্তু কখনো কাগজপত্র দেখাতে পারেননি তারা। এভাবে স্থাপনা থাকলে বর্ষা মৌসুমে পানি নিষ্কাশন বাধাগ্রস্ত হবে।’
ফতেপুর ইউপি চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন বলেন, ভৈরব নদীর পাড় ও বাঁধ দখল হয়ে গেছে বলে জেনেছি। খোঁজখবর নিয়ে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করব।
খনন করার পরও ভৈরব নদের করুণ অবস্থা যেন কাটছেই না। বর্তমানে নদের যেটুকু প্রবাহ আছে সেইটুকুও বিপন্ন হওয়ার পথে। স্বাভাবিক পানি প্রবাহের পরিবেশ থাকছে না। প্রভাবশালী মহল নদের দু’পাশের জমি দখল করে আছে। ভূমিদস্যুদের আগ্রাসী মনোভাবে অবৈধভাবে নদী দখল করে নির্মাণ করা হচ্ছে নানা ধরনের স্থাপনা। ভৈরব নদের যশোর অংশের ২৫ কিলোমিটার এলাকা প্রায় শুকিয়ে যায়। নদকে অনেকেই ব্যবহার করেন ময়লাখানা হিসেবে। অনেকের বাড়ির বর্জ্য ও মলমূত্র ত্যাগ করেন ভৈরবে। এ অবস্থায় খনন কাজ শুরু করে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
তবে ভূমিদস্যুরা এখনো ভৈরব নদ দখলের প্রতিযোগিতায় রয়েছে। বর্তমানে অবৈধ দখলদাররা ভৈরবের বুকে ঘরবাড়ি তৈরি করে রীতিমতো বসতি স্থাপন করেছে। এদের দেখাদেখি বিভিন্নস্থানে বাঁশ খুঁটি দিয়ে ঘর করে দখল করছে নদের জমি। আবার অনেকে ট্রাকে করে মাটি ফেলে দখল করছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পৌর এলাকায় ভৈরব নদের ৫৪৬ ও ৩২২ দাগে মোট ১৫ একর জমি আছে। দখল হয়েছে পৌনে ৪ একর। উচ্ছেদ অভিযান সফল করতে জেলার রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা। শেষ পর্যন্ত উচ্ছেদ অভিযান সফল করা সম্ভব হয়নি।
ভায়নায় নদের ঢাল ও পাড় দখলের ব্যাপারে যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তাওহীদুল ইসলাম বলেন, ভৈরব নদের জমি ভায়না এলাকায় অবৈধভাবে দখল করা হচ্ছে বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এসএন