ফসলের মাঠ ফেটে চৌচির, দুশ্চিন্তায় কৃষক
আষাঢ় গেলো বৃষ্টিহীনতায়। চলে গেছে শ্রাবণও। বৃষ্টির দেখা মেলেনি ভাদ্র মাসের অর্ধেকেও। তীব্র খরা আর ভ্যাপসা গরমে মানুষের জনজীবন অতিষ্ট। তপ্ত রোদে ফেটে চৌচির হচ্ছে আমনের ক্ষেত। বৃষ্টির দেখা মেলেনি বর্ষা ঋতুর আড়াই মাসেও। মাঠের পর মাঠ জুড়ে চলছে সেচ যন্ত্র। তারপরও কৃষকের স্বস্তি নেই। সেচ দেওয়া পানিও জমিতে বেশিক্ষণ থাকছে না। এমন পরিস্থিতিতে যেন দিশেহারা কৃষক।
এমতাবস্থায় শুক্রবার (২ সেপ্টেম্বর) ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডু উপজেলার জোড়াপুকুরিয়া-মান্দারতলা এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে নিচু বা বিল এলাকার জমিও পানি শূন্য। পানির অভাবে উঁচু জমির ধান ক্ষেত ফেটে চৌচির। পানির অভাবে পোকা মাকড়ের উপদ্রব বেড়ে যাচ্ছে।
এদিকে সেচ আর কীটনাশক খরচ মেটাতে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে। তথ্য নিয়ে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে জেলায় আমন আবাদ হয়েছে এক লাখ তিন হাজার ১৫৫ হেক্টর জমিতে। যেখানে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক লাখ চার হাজার ৭৫০ হেক্টর জমির। লক্ষ্যমাত্রার বাকি জমিতে পাট থাকার কারণে আবাদে দেরি হচ্ছে বলে জানায় জেলা কৃষি বিভাগ।
ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডু উপজেলার বিভিন্ন মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, পানির অভাবে ফসলের জমিগুলো ফেটে চৌচির। এতে অনেক জমির ধান মরে যাচ্ছে। অনেক কৃষক ধান বাঁচাতে জমিতে সেচ দিচ্ছেন। আর প্রতিবার সেচ দিতে বিঘাপ্রতি গুনতে হচ্ছে এক হাজার টাকা।
হরিণাকুন্ডু গ্রামের কৃষক আনোয়ার হোসেন বলেন, পানির অভাবে জমি ফেটে চৌচির। আমরা ধান লাগিয়েছি প্রায় এক মাস হয়ে গেছে, এখনো কোনো উন্নতি নেই। আর ফসলের জন্য সার তো পাওয়াই যাচ্ছে না। বাজারে সারের অভাব থাকলেও তা আবার মেলে অতিরিক্ত টাকার বদলে। তিনি আরও বলেন, চার বিঘা জমিতে ধান লাগিয়েছি। এখন সব ধান প্রায় মরে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে ধানের জমি চাষ বাদ দিয়ে অন্য আবাদ করি।
শিতলীর কৃষক সুলতান বলেন, ধান লাগানোর পরে পানির অভাবে সার দিতে পারিনি। ধানের জমি সব ফেটে গেছে। আর বৃষ্টি না হলে সেচ দিয়ে ধানের আবাদ করলে তেমন লাভ হবে না। তারপরও বাধ্য হয়ে আমরা পানি সেচ দিচ্ছি।
মান্দারতলা গ্রামের কৃষক আইজাল জানান, এবছর উৎপাদন খরচ বেশি হবে। ধান চাষ করে দেনা দিতে দিতে কৃষক নিঃস্ব হয়ে যাবে।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. জাহিদুল করিম বলেন, ঝিনাইদহে আমন ধান রোপণ প্রায় শেষ। এবছর আবহাওয়ার পরিবর্তন দৃশ্যমান। আষাঢ়-শ্রাবণ চলে গিয়ে ভাদ্র মাস চলছে, কিন্তু বৃষ্টির দেখা নেই। তিনি বলেন, কৃষকদের জমি ফেটে যাচ্ছে। তারা মেশিন দিয়ে সেচ দিচ্ছে। সেচের সঙ্গে বৃষ্টির খুব প্রয়োজন। বৃষ্টি পেলে ধানের আবাদ ভালো হবে। তারপরও সেচের মাধ্যমে যতটুকু সম্ভব কি ভাবে ধান উৎপাদন এগিয়ে নেওয়া যায়, সে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
টিআর