কুষ্টিয়ায় এমএলএম কোম্পানির ৮ প্রতারক গ্রেপ্তার
কুষ্টিয়ার কুমারখালী ও দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতারণার মাধ্যমে গ্রাহকদের কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া এসবিএসএল নামের একটি মাল্টি লেভেল মার্কেটিং কোম্পানির চেয়ারম্যানসহ আটজন প্রতারককে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
জেলার গ্রাহকদের অধিক মুনাফার লোভ দেখিয়ে ১০ কোটির অধিক টাকা আত্মসাত করে পালিয়ে যায় সানরাইজ বিজনেস সার্ভিস লি. (এসবিএসএল) নামের একটি মাল্টি লেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) কোম্পানির কয়েকজন ব্যাক্তি। এই কোম্পানির প্রতারণার শিকার হয়ে নিঃস্ব হয় প্রায় ৩ শতাধিক পরিবার। কুষ্টিয়া ছাড়াও ওই কোম্পানি ঝিনাইদহ, মাগুরা, যশোর, খুলনা, চুয়াডাঙ্গা, পাবনা, রাজশাহী জেলা শাখা খুলে গ্রাহককে অতিরিক্ত মুনাফার লোভ দেখিয়ে প্রতারণা করে আসছিল।
শনিবার (২৭ আগস্ট) বেলা সাড়ে ১১টায় এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাব-১২ সিপিসি-১ কুষ্টিয়া ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার স্কোয়াড্রন লিডার মোহাম্মদ ইলিয়াস খান।
এ সময় তিনি আরও জানান, এসবিএসএল কোম্পানির মালিকরা প্রতারণার জন্য নিজস্ব ওয়েবসাইট ও মোবাইল অ্যাপ্লিক্যাশন তৈরি করে গ্রাহকদের বিভিন্নভাবে প্রলুব্ধ করে ১২০০ টাকা দিয়ে কোম্পানির আইডি খুলতে বলা হতো। প্রতি আইডি থেকে প্রতিদিন ১০ টাকা ও আইডি বাবদ প্রদানকৃত ১২০০ টাকার সমমূল্যের পণ্য দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হতো। শুরুর দিকে কিছু গ্রাহক টাকা ও পণ্য পাওয়ার কারণে অনেকেই আইডি খুলতে উৎসাহিত হয়। এর এক পর্যায়ে গ্রাহকদের লভ্যাংশের টাকা দিতে ব্যর্থ হয়ে আত্মগোপনে চলে যায় প্রতারক চক্রটি। এর ফলে অর্থ বিনিয়োগকারীরা তাদের কষ্টার্জিত টাকা হারিয়ে শত শত গ্রাহক দিশেহারা হয়ে পড়েন।
পরবর্তীতে এসবিএসএল কোম্পানির প্রতারণার শিকার হয়ে এক ভুক্তভোগী গ্রাহক চলতি বছরের ২৬ আগস্ট কোম্পানির চেয়ারম্যানসহ একাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে কুমারখালী থানায় দণ্ডবিধি ৪০৬/৪২০/৩২৩/ ৩০৭/৫০৬ ধারায় একটি মামলা দায়ের করেন। প্রতারণার ঘটনাটি বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রচারিত হলে প্রতারক চক্রকে গ্রেপ্তার করতে তৎপরতা শুরু করে র্যাব-১২ সিপিসি-১ কুষ্টিয়ার একটি দল। এর অংশ হিসেবে র্যাব-১২ সিপিসি-১ কুষ্টিয়া ক্যাম্পের একটি আভিযানিক দল ও র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখার সহযোগিতায় ২৬ আগস্ট রাতে কুষ্টিয়া জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে এসবিসিএল এমএলএম কোম্পানির প্রতারক চক্রের ৫ সদস্য কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের বেতবাড়িয়া গ্রামের জলিল বিশ্বাসের ছেলে মো. হাসান আলী, কুমারখালী উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের মহেন্দ্রপুর গ্রামের মৃত আমজাদ হোসেনের ছেলে মো. আব্দুল হান্নান, উপজেলার পান্টি ইউনিয়নের ওয়াসী গ্রামের মৃত লিয়াকত আলীর ছেলে মো. মোস্তফা রাশেদ পান্না, উপজেলার বাগুলাট ইউনিয়নের বাঁশগ্রামের মৃত আলাউদ্দিন বিশ্বাসের ছেলে মো. আয়ুব আলী, উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়নের বহলবাড়িয়া গ্রামের মৃত আলতাফ শেখের ছেলে মো. হাফিজুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-১২ সিপিসি-১ কুষ্টিয়ার সদস্যরা।
কোম্পানি কমান্ডার স্কোয়াড্রন লিডার জানান, গ্রেপ্তারকৃত ব্যাক্তিদের তথ্যের ভিত্তিতে এসবিএসএল কোম্পানির চেয়ারম্যান ঝিনাইদহ জেলার শৈলকুপা উপজেলার চরআউশিয়া গ্রামের মো. মনিরুল ইসলামের ছেলে মো. সাজ্জাদ হোসেন ও কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর উপজেলার পদ্মপুকুর গ্রামের আব্দুল গফুরের ছেলে মহসীন আলী এবং ফিন্যান্স ডাইরেক্টর কুষ্টিয়ার চাঁদপুর ইউনিয়নের গোবরা গ্রামের মো. তোফাজ্জেল হোসেনের ছেলে মো. ইমরান হোসেনকে ঢাকার মিরপুর এলাকা হতে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
তিনি আরও জানান, গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা প্রতারণার বিষয়টি স্বীকার করেছে। এসবিএসএল কোম্পানির বিরুদ্ধে কুষ্টিয়া জেলার মিরপুর ও কুমারখালী থানায় ২টি মামলা রয়েছে। এ ছাড়া কোম্পানির চেয়ারম্যান সাজ্জাদ হোসেনের বিরুদ্ধে ২টি চেক জালিয়াতির মামলা, ম্যানেজিং ডাইরেক্টর মহসিন আলীর বিরুদ্ধে ১টি চেক জালিয়াতি ও ৫টি স্ট্যাম্প জালিয়াতির মামলা এবং ফিন্যান্স ডাইরেক্টর ইমরান হোসেনের বিরুদ্ধে ২টি চেক জালিয়াতির মামলা রয়েছে।
এসআইএইচ