প্রধান শিক্ষককে মারধরের প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের ক্লাস বর্জন
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ধুলিহর আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুস সালামকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত, মারধর ও নিয়ম বহির্ভূতভাবে বহিষ্কারের প্রতিবাদে এবং প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি ও খুলনা জেলা পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মাহাবুবর রহমানের শাস্তি ও বিচারের দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থীরা।
এসময় সড়কের কয়েক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে পুলিশ ও স্থানীয় সরকার দলীয় নেতা-কর্মীদের আশ্বাসে অবরোধ সরিয়ে বিদ্যালয় মাঠে ক্লাস বর্জন করে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। এসময় প্রতিষ্ঠানটির সভাপতির বিচার না হওয়া পর্যন্ত অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস বর্জনের ঘোষণা দেন। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে স্বপদে বহাল ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মাহাবুবুর রহমানকে বহিষ্কারের দাবি জানিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন।
এর আগে শনিবার (২০ আগস্ট) সকালে বিদ্যালয়ের ভেতরেই প্রধান শিক্ষক আব্দুস সালামকে শারীরিকভাবে লাঞ্চিত ও মারধর করেন বিদ্যালয়টির সভাপতি মাহবুবর রহমান। পরে শিক্ষককে মারধরের প্রতিবাদে ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করে আন্দোলন করেন। এসময় তারা আন্দোলনে মাহবুবর রহমানকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার করে শাস্তি ও বিচারের দাবি জানান।
বিদ্যালয়ের সভাপতি ও খুলনা জেলা পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মাহাবুবর রহমান
বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, এসএমসি কমিটির নির্বাচনে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুস সালাম কোনো পক্ষ অবলম্বন না করায় প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি ও খুলনা জেলা পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মাহাবুবর রহমানের সঙ্গে মনোমালিন্য হয়। একপর্যায়ে প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি তার অনুসারীদের দিয়ে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ আনেন। কোনো তদন্ত ছাড়াই শনিবার সকালে প্রধান শিক্ষককে দুই মাসের জন্য বহিষ্কার করেন সভাপতি মাহাবুবর রহমান। এসময় জোরপূর্বকভাবে গলা ধাক্কা ও টেনে হিঁচড়ে প্রধান শিক্ষককে রুম থেকে বের করেন তিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিদ্যালয়ের একাধিক সহকারী শিক্ষকসহ ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারীরা জানান, প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ এনে তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে সেগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা। পূর্ব শত্রুতার জেরে প্রধান শিক্ষককে সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করার উদ্দেশ্যে দীর্ঘদিন ধরে ষড়যন্ত্র করতে থাকেন বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মাহাবুবর রহমান। এরই অংশ হিসেবে প্রধান শিক্ষককে নিয়ম বহির্ভূতভাবে বহিষ্কারের পাশাপাশি তাকে মারধর করেন তিনি।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুস সালাম
প্রধান শিক্ষক দুর্নীতিগ্রস্ত নয় বরং প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি মাহাবুবর রহমান দুর্নীতিগ্রস্ত জানিয়ে তারা বলেন, পুরো বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি মাহাবুবর রহমানের জিম্মায়। তার বিরুদ্ধে একাধিক দুর্নীতির মামলা রয়েছে। তবে তার দুর্নীতিতে সাফাই না দেওয়ায় এ ঘটনা ঘটতে পারে বলে ধারণা তাদের।
প্রধান শিক্ষককে মারধর প্রসঙ্গে তারা বলেন, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক যদি দুর্নীতিগ্রস্ত হয় তাহলে তার জন্য দেশে প্রচলিত আইন রয়েছে। তবে আইনের ঊর্ধ্বে গিয়ে একজন শিক্ষককে মারধরের পাশাপাশি গলা ধাক্কা দিয়ে অফিস রুম থেকে বের করা সভাপতির ঠিক হয়নি। তা ছাড়া বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভায় সবার সর্বসম্মতিক্রমে প্রধান শিক্ষককে বহিষ্কার করা হয়েছে বলে জানানো হয়। তবে ওই মাসিক সভায় এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। সভাপতি তার একক ক্ষমতাবলে এসব করেছে বলে অভিযোগ করেন তারা।
মারধরের আঘাত
এ ব্যাপারে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে স্কুলের ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগে অনিয়ম, শিক্ষার্থীদের কাছে বই বিক্রিসহ স্কুল ফান্ডের টাকা উত্তোলনের মিথ্যা অভিযোগ সাজিয়ে কোনো তদন্ত ছাড়া প্রধান শিক্ষককে মারধরসহ তাকে বহিষ্কারের প্রতিবাদে তারা ক্লাস বর্জন করে বিক্ষোভ কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন। প্রধান শিক্ষককে স্বপদে বহাল রেখে স্কুল কমিটির সভাপতি মাহবুবুর রহমান বহিষ্কার করলে তারা আবার শ্রেণিকক্ষে যোগদান করবেন বলে জানান।
এ ব্যাপারে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুস সালাম বলেন, আমাকে গতকাল স্কুল কমিটির সভাপতি মাহবুবুর রহমান শারীরিকভাবে লাঞ্চিত করেন এবং আমার বিরুদ্ধে শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম, শিক্ষার্থীদের কাছে বই বিক্রি, স্কুল ফান্ডের টাকা উত্তোলনের মিথ্যা অভিযোগ সাজিয়ে কোনো তদন্ত ছাড়া আমাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিষয়টি শিক্ষার্থী জানতে পেরে সকাল থেকে ক্লাস বর্জন করে আন্দোলন করছে। আমি তাদের ক্লাসে যাওয়ার কথা বলেছি। কিন্তু তারা ক্লাস বর্জন করে আন্দোলন করছে।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত বিদ্যালয়ের সভাপতি মাহাবুবর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তার ব্যবহৃত নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।
এ প্রসঙ্গে সাতক্ষীরা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ্ আল মামুন বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফাতেমা তুজ জোহরা বলেন, বিষয়টি দুঃখজনক। খোজঁখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এসজি/