কলেজছাত্রীকে নিয়ে রিসোর্টে ওসি, পুলিশ সুপারের হস্তক্ষেপে বিয়ে
ছবি: সংগৃহীত
কিছু দিন আগে এক কলেজছাত্রী নিয়ে গাজীপুর জেলার রাজেন্দ্রপুরের একটি রিসোর্টে ওঠেন গাজীপুর জয়দেবপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ মিজানুর ইসলাম। পরে জেলা পুলিশ সুপারের হস্তক্ষেপে সেই কলেজছাত্রীকে বিয়ে করতে বাধ্য হন তিনি।
বুধবার (১৭ জানুয়ারি) রাতে গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুর এলাকায় গ্রীন শালবন নামের একটি রিসোর্টে এ ঘটনা ঘটে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সৈয়দ মিজানুর ইসলাম জয়দেবপুর থানায় ওসি হিসেবে যোগ দেন। এর আগে তিনি মানিকগঞ্জ সদর থানার ওসি হিসেবে কর্মরত ছিলেন। মানিকগঞ্জে থাকা অবস্থায় তিনি সিংগাইর থানায় এক বছর ও সদর থানায় তিন বছর দায়িত্ব পালন করেন। এ সময়ে তিনি ওই কলেজ ছাত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলেন।
জানা গেছে, কিছু দিন আগে ওই কলেজছাত্রীর অন্যত্র বিয়ে ঠিক হয়। এ খবর জানতে পেরে ওসি তার এক ঘনিষ্ঠ লোকের মাধ্যমে ওই কলেজছাত্রীকে বিয়ের কথা বলে জয়দেবপুর নিয়ে আসেন। ১০-১২ দিন ধরে ওই কলেজছাত্রীকে গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুর এলাকায় গ্রীন শালবন নামে একটি রিসোর্টের কক্ষে রাখেন। তিনি ওই কলেজছাত্রীর সঙ্গে ওই কটেজে রাত্রীযাপন করতেন। কিছুদিন পর কলেজছাত্রীকে তার গ্রামের বাড়ি মানিকগঞ্জে পাঠাতে চাইলে তিনি বাড়ি যেতে অস্বীকৃতি জানান এবং বিয়ের জন্য ওসিকে চাপ দিতে থাকেন। কিন্তু ওসি বিয়ে করবে না বলে জানায়। গত বুধবার ওসি ওই রিসোর্টে একদল যুবক পাঠিয়ে কলেজছাত্রীকে ভয়ভীতি দেখায়। ওই ছাত্রী গ্রামের বাড়ি না গেলে তার প্রাণনাশ হতে পারে বলে হুমকি দেয়। রাতেই ওই কলেজছাত্রী ওসির ওই ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিকে বিষয়টি জানায়।
কলেজছাত্রীর কিছু হলে ফেঁসে যেতে পারেন এ ভয়ে ওই ব্যক্তি গাজীপুর জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে বিষয়টি জানালে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মিরাজুল ইসলাম বুধবার রাতেই রিসোর্টে গিয়ে কলেজছাত্রীকে উদ্ধার করে এসপি অফিসে নিয়ে আসেন। পরে জয়দেবপুর থানার ওসিকে এসপি অফিসে ডেকে পাঠানো হয়। খবর পেয়ে ওসির প্রথম স্ত্রী এবং ওই কলেজছাত্রীর মা এবং এক ফুফা জয়দেবপুর ছুটে আসেন।
বৃহস্পতিবার দিনভর উভয় পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বিষয়টি সমঝোতার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু কলেজছাত্রী ওসির সঙ্গে বিয়ের জন্য অটল থাকায় বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে কলেজছাত্রীকে তার মায়ের জিম্মায় পাঠিয়ে গাজীপুর জেলা শহরের একটি কাজী অফিসে ১০ লাখ টাকার দেনমোহরে তাদের বিয়ে সম্পন্ন করা হয়। বিয়ের কাবিননামায় নগদ একলাখ টাকা পরিশোধ দেখানো হয়। বিয়েতে মেয়ে পক্ষের উকিল নিযুক্ত করা হয় মেয়ের ফুফা কছিম উদ্দিনকে। বিয়েতে উভয়পক্ষের আত্মীয়-স্বজন উপস্থিত ছিলেন।
কাজী অফিসের সহকারী কাজী মোস্তফা কামাল তাদের বিয়ে পড়ান। কাজী মোস্তফা কামাল তাদের বিয়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার রাতে বিয়ের পর শুক্রবার সকালে বিয়ের কাবিননামার কপি নেওয়ার জন্য ওই কলেজছাত্রী জয়দেবপুর শহরে কাজী অফিসে আসেন। কাবিনের কপি নিয়ে তার মা ও ফুফাসহ মানিকগঞ্জে যাওয়ার সময় চান্দনা চৌরাস্তায় ওসি তাদের গতিরোধ করেন এবং তাদের বাস থেকে নামিয়ে জয়দেবপুর থানায় নিয়ে যান।
ওসির ঘনিষ্ট ওই ব্যক্তি জানায়, ওসি তার নতুন স্ত্রীকে নিয়ে থানার অদূরে মনিপুর বাজার এলাকায় একটি ফ্ল্যাট বাড়িতে নিয়ে আছেন। সেখানে ওই কলেজছাত্রীর সঙ্গে তার মা ও ফুফাও আছে। সেখানে তাদের নানাভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। ওসি কলেজছাত্রীকে তার বিয়ের কাবিনের ১০ লাখ টাকা দিয়ে লিখিত স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়ে বিদায় করে দিতে চাচ্ছে।
এদিকে জয়দেবপুর থানা পুলিশের ওসি (তদন্ত) শরিফুল ইসলাম বলেন, শুনেছি ওসিকে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে। কোনো লিখিত কাগজ পাওয়া যায়নি। তবে বৃহস্পতিবার থেকে আমি ওসির দায়িত্ব পালন করছি।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত ওসি সৈয়দ মিজানুর ইসলাম বলেন, আমি দুইমাস আগে তাকে বিয়ে করেছি। বাসা ভাড়া না পাওয়ায় তাকে ওই রিসোর্টে রাখা হয়েছিল। বিষয়টি আমাদের পারিবারিক। একটা ঝামেলা হয়েছিল। সব ঠিক হয়ে যাবে। কলেজছাত্রীকে কোনো প্রকার নির্যাতন করা হয়নি বলেও তিনি দাবি করেন।
গাজীপুরের পুলিশ সুপার কাজী সফিকুল আলম বলেন, একটা ঘটনা ঘটেছে শুনেছি। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তদন্তে সত্য প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।