‘মাইরের ওপর ওষুধ নাই ’ বক্তব্য দেওয়ায় নরসিংদী ছাত্রলীগের সভাপতি গ্রেপ্তার
ছবি: সংগৃহীত
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নরসিংদী-১ সদর আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের পেটানোর হুমকির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। বক্তব্যে নরসিংদী-১ সদর আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের উদ্দেশে নরসিংদী জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আহসানুল ইসলাম রিমন বলেন ‘মাইরের ওপর ওষুধ নাই’ ।
নিবার্চনী আচরণবিধি ভঙ্গ করে এরকম আক্রমণাত্নক বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগে দায়ের কৃত মামলায় নরসিংদী জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আহসানুল ইসলাম রিমনকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি পুলিশ। শুক্রবার (১ ডিসেম্বর) দুপুর ১টার দিকে ঢাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এর আগে নরসিংদী-১ সদর আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের উদ্দেশে ‘মাইরের ওপর ওষুধ নাই’ বলে বক্তব্য দেওয়া সহ আচরণ বিধির অভিযোগে বৃহস্পতিবার (৩০ নভেম্বর) রাতে নরিসংদী নির্বাচনী কর্মকর্তা সহকারী রিটানিং অফিসার ওমর ফারুক বাদী হয়ে সদর মডেল থানায় এ মামলা দায়ের করা হয়। একইসঙ্গে জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি আহসানুল ইসলাম ওরফে রিমনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। নির্বাচনী আইন লঙ্ঘনের এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে কেনো আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, জানতে চেয়েছে ওই আসনের নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি।
এদিকে বৃহস্পতিবার রাতে কারণ দর্শানোর ওই নোটিশ দেন নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির সদস্য নরসিংদীর যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ নাহিদুর রহমান নাহিদ। নোটিশ পাওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে লিখিত জবাব দিতে বলা হয়েছে।
গত বুধবার নরসিংদী ক্লাবে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সংসদ সদস্য মো. নজরুল ইসলাম (বীর প্রতিক) একটি মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সভায় আহসানুল ইসলাম রিমন তার বক্তব্যে নৌকার বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া সতন্ত্র প্রার্থীদের পেটানোর হুমকি দেন তিনি। মুহুর্তেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয় ওই ভিডিও।
ভিডিওতে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি বলেছেন, ’কোনো স্বতন্ত্র মতন্ত্র আমরা চিনি না, মাইরের ওপর কোনো ওষুধ নাই। ছাত্রলীগের কোনো পোলাপান স্বতন্ত্ররে মানবে না। সতন্ত্ররে কেমনে পিডাইতে হয়, হেই দেখাইছে। হেরে আমরা হেমনেই পিডামো। এই শহরে, এই সদরের কোনো এলাকায় স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কোনো জায়গা দেওয়া যাবে না। তারা নৌকার বিরোধী, মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী, তারা দেশ বিরোধী। ‘
গ্রেপ্তার হওয়ার আগে দেওয়া এক বক্তব্যে নিজেকে আওয়ামী লীগ তথা দলের নিবেদিত প্রাণ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভ্যানগার্ড উল্লেখ করেন নরসিংদী জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আহসানুল ইসলাম রিমন বলেন, দলীয় যারা নৌকার বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হবে, নৌকাকে ডুবাতে যারা অবস্থান নিবে, আমি মনে করি তারা আওয়ামী লীগের বিরোধী। মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা বিরোধী। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরোধী। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের বিরুদ্ধে তারা অবস্থান করতেছে। আমি তাদের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি দিয়েছি। নৌকাকে বিজয়ী করতে যা যা করার দরকার তাই করবো।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. রবিউল আলম বলেন, নিবার্চনী আচরণবিধি ভঙ্গ করে ঊসকানিমূলক বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগে নরিসংদী সহকারী রিটানিং কর্মকর্তা ওমর ফারুক বাদী হয়ে সদর মডেল থানায় এ মামলা দায়ের করেন। একই সাথে তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি। তিনি আরও বলেন, এমন বক্তব্য হুমকি-ধমকি সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট করে। নির্বাচনী আইন লঙ্ঘনের এমন ঘটনা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না।
নরসিংদী জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খোকন চন্দ্র সরকার বলেন, সদর থানার মামলার প্রেক্ষিতে নরসিংদী জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আহসানুল ইসলাম রিমনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হবে।