ছেলেকে না পেয়ে বাবাকে আটকে রেখে দিনভর নির্যাতনের অভিযোগ
নরসিংদীর মনোহরদীতে ছাগল চুরির অভিযোগে ছেলেকে না পেয়ে বাবাকে ধরে নিয়ে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে খিদিরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. কাউছার রশিদ বিপ্লবের বিরুদ্ধে। এ ঘটনাটি ঘটেছে নরসিংদী মনোহরদী থানার খিদিরপুর ইউনিয়নের কটিয়াদি এলাকায়।
ভুক্তভোগী ওই ব্যক্তির নাম আঙ্গুর মিয়া (৫০)। তিনি কটিয়াদি এলাকার আওয়াল নবীর ছেলে। তার পরিবারের অভিযোগ, চেয়ারম্যানের ১০ থেকে ১৫ জন লোক আঙ্গুর মিয়াকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায়। পরে ইউপি চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে সারাদিন আটকে রেখে তার উপর অমানষিক নির্যাতন চালায়। তাকে ছাড়িয়ে আনতে গেলে পরিবারের কাছে চেয়ারম্যান কাউছার রশিদ এক লাখ টাকা দাবি করেন। টাকা দিতে ব্যর্থ হলে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়।
মঙ্গলবার (২৮ মার্চ) রাত ১২টায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আঙ্গুর মিয়াকে চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে আটকে রাখা হয়েছে। তিনি মেঝেতে শুয়ে আছেন এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে মারধরের চিহ্ন দেখা যায়। তাকে কোনো ধরনের চিকিৎসাও দেওয়া হয়নি।
ভুক্তভোগীর স্ত্রী রিমা আক্তার বলেন, আমার ছেলে সাদেকুল ইসলাম (২৩) নাকি ছাগল চুরি করেছে- এমন মিথ্যা অভিযোগে ছেলেকে বাড়িতে না পেয়ে সকাল ৯টার দিকে চেয়ারম্যানের লোকজন তার বাবাকে ধরে নিয়ে যায়। পরে তাকে আটকে রেখে নির্যাতন করে। রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত চেয়ারম্যানের কার্যালয় থেকে স্বামীকে ছাড়িয়ে আনার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু আমাদের শত অনুরোধ চেয়ারম্যান রাখেননি। উল্টো তিনি এক লাখ টাকা দাবি করেন। টাকা না দিলে ছেলের বাবাকে পুলিশের হাতে তুলে দিবে বলে জানায়।
তিনি আরও বলেন, ছেলে অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকলে সাক্ষী প্রমাণের ভিত্তিতে বিচার করতে আমার কোনো বাধা নেই। কিন্তু নিরপরাধ স্বামীকে ধরে এনে কেন মারপিট করা হবে। এর জন্য চেয়ারম্যানের বিচার দাবি করেন তিনি।
এই বিষয় জানতে চাইলে খিদিরপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো. কাউছার রশিদ বিপ্লব জানান, আঙ্গুর মিয়ার ছেলে সাকিব এর আগে এলাকা থেকে প্রায় ১০০ গরু-ছাগল চুরি করেছে। ছাগল চুরির সহযোগী মাহমুদুল হাসানকেও (১৬) আমরা আটক করেছি। মাহমুদুল স্থানীয় একটি স্কুলের এসএসসি পরীক্ষার্থী। সে এখন আমার কার্যালয়ে রয়েছে।
আঙ্গুর মিয়াকে সকালে আটক করার কথা অস্বীকার করে তিনি জানান, ছেলেকে বাড়িতে না পেয়ে বিকাল ৫টার দিকে লোকজন আঙ্গুরকে ধরে নিয়ে এসেছে।
ছেলের জায়গায় বাবাকে আটক করার প্রশ্নে ইউপি চেয়ারম্যান জানান, ছেলেকে বাড়ি থেকে পালিয়ে যেতে সাহায্য করায় বাবাকে আটক করা হয়। তবে তাকে মারধর করা হয়নি এবং টাকাও দাবি করা হয়নি। স্বজনদের এসব দাবি ভিত্তিহীন। ছেলের বাবাও চুরির সাথে জড়িত। আমি মনোহরদী থানা পুলিশকে জানিয়ে তারপর ধরে এনেছি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মনোহরদী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. ফরিদ উদ্দিন জানান, খিদিরপুর ইউপি চেয়ারম্যান আমাকে রাতে কল করে জানান-কটিয়াদি গ্রাম থেকে ছাগল চুরির অভিযোগে দুইজনকে আটক করা হয়। প্রত্যন্ত অঞ্চল হওয়ায় আমরা তখন ঘটনাস্থলে যেতে পারিনি। আর ছেলেকে না পেয়ে পিতাকে আটক করার বিষয়ে আমি জানি না। খোঁজ-খবর নিয়ে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এসআইএইচ