সৈয়দ আশরাফের মৃত্যুবার্ষিকী আজ

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত করতে যিনি বিভিন্ন সময়ে দলে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। তিনি ছিলেন শেখ হাসিনার দুঃসময়ের সহযাত্রী, একজন নির্ভরযোগ্য ও আস্থাভাজন মানুষ। বাংলাদেশের স্বচ্ছ ও পরিচ্ছন্ন রাজনীতির আইকন সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম না ফেরার দেশে পাড়ি দেওয়ার চার বছর আজ। ২০১৯ সালের এই দিনেই ব্যাংককের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।
তিনি ১৯৫২ সালের ১লা জানুয়ারি ময়মনসিংহে জন্মগ্রহণ করেন। সৈয়দ আশরাফের পৈতৃক গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার যশোদল ইউনিয়নের বীরদামপাড়া গ্রামে। তার পিতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম ১৯৭১ সালে মুজিবনগর সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি ছিলেন। এ ছাড়াও তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ছিলেন।
সৈয়দ আশরাফ ছাত্র জীবনে ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। স্বাধীনতার পর তিনি ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-প্রচার সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। এ ছাড়াও তিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার যুদ্ধে অংশ নেন এবং মুক্তিবাহিনীর একজন সদস্য ছিলেন। ভারতের দেরাদুনে মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন।
১৯৭৫ সালের ৩রা নভেম্বর এই রাজনীতিবিদের পিতা সৈয়দ নজরুল ইসলামসহ জাতীয় চার নেতাকে জেলখানায় নির্মমভাবে হত্যা করার পর তিনি যুক্তরাজ্য চলে যান। এরপর ১৯৯৬ সালে তিনি দেশে ফিরে আসেন এবং কিশোরগঞ্জ-১ আসন থেকে সপ্তম জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হিসেবে প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এ সময় তিনি বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
২০০১ সালের ১লা অক্টোবর অনুষ্ঠিত অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পুনরায় তিনি নির্বাচিত হন এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনেও তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৫ সালের ১৬ জুলাই থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ছিলেন। কিশোরগঞ্জ-১ (সদর-হোসেনপুর) আসনের নবম, দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি।
২০১৭ সালের ২৪ অক্টোবর সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের স্ত্রী শীলার মৃত্যুর পর প্রায়ই অসুস্থ হয়ে পড়তেন। ১৮ সেপ্টেম্বর স্বাস্থ্যগত কারণে সংসদের কার্যক্রম থেকে তিনি ৯০ কার্যদিবসের ছুটি নেন। ফুসফুসে ক্যান্সার ধরা পড়ার পর ২০১৮ সালের নভেম্বরে তার ফুসফুসের ক্যান্সার ৪র্থ ধাপে নেমে আসে।
ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় নির্বাচনেও বিপুল ভোটে বিজয় লাভ করেন আওয়ামী লীগের এই প্রবীণ নেতা। নির্বাচনী আসনের মানুষেরা বলেছিল অসুস্থ আশরাফ সুস্থ আশরাফের চেয়েও অনেক শক্তিশালী। ২০১৯ সালের ৩রা জানুয়ারি মৃত্যুবরণ করার পর ৬ জানুয়ারি ঢাকার বনানী কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৭ বছর।
জানা যায়, সৈয়দ আশরাফের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ ও তার সকল অঙ্গ-সংগঠনের নেতা-কর্মীরা সকালে আখড়া বাজারের ব্রিজ সংলগ্ন সৈয়দ নজরুল ইসলাম চত্বরে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাবে। তারপর বিকালে জেলা আওয়ামীলীগ কার্যালয়ে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের স্মরণে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে এবং বিভিন্ন মসজিদ, মাদ্রাসায় তাঁর আত্মার মাগফেরাত কামনায় বিশেষ দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।
এসআইএইচ
