১৬ মামলার আসামিকে চেয়ারম্যান হিসেবে চান না মেম্বাররা

সাভারের আশুলিয়ার ইয়ারপুর ইউনিয়ন পরিষদের তিন বারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান সৈয়দ আহমেদ ভূঁইয়া। সর্বশেষ দুইবার তিনি নৌকা মার্কার প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। তার আকস্মিক মৃত্যুতে চেয়ারম্যান পদ শূন্য হলে আগামী ২৯ ডিসেম্বর সেই পদের উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আর এ উপ-নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে আনারস মার্কায় নির্বাচন করছেন সৈয়দ আহমেদ ভূঁইয়ার ছেলে সুমন আহমেদ ভূঁইয়া। কিন্তু ইয়ারপুর ইউপির ৯ জন সদস্যের (মেম্বার) কেউই তাকে চেয়ারম্যান হিসেবে চান না।
কারণ জানতে চাইলে মেম্বাররা জানান, সুমন আহমেদ ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে হত্যা, ধর্ষণ, অস্ত্র, হত্যাচেষ্টা, দশ্যুতাসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। যার মধ্যে অনেক মামলা এখনো চলমান। চেয়ারম্যান হিসেবে এমন চরিত্রের কেউ জনগণের জন্য কল্যাণকর হতে পারে না। তাই তারা (মেম্বাররা) সুমন আহমেদ ভূঁইয়াকে চেয়ারম্যান হিসেবে চান না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সুমন আহমেদ ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে ঢাকার আশুলিয়া থানায় মামলা আছে ১০টি। যার মধ্যে ২০১০ সালের ৫ অক্টোবরে অস্ত্র আইনের ১৯ (খ) ধারায় ২১ নাম্বার এফআইআর, একই দিনে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ১৯ (১) এর ৭ (ক) ধারায় ২২ নাম্বার এফআইআর এবং ২০১২ সালের ৭ মার্চে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯ (১) ধারায় ১৮ নাম্বার এফআইআর উল্লেখযোগ্য।
এ ছাড়াও তার বিরুদ্ধে ডিএমপির দারুস সালাম থানায় ২০০৯ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারিতে দণ্ডবিধির ১৪৩/৪৪৮/৩৪২/৩০২/৩৪ ধারায় ১৪ নাম্বার এফআইআর, ঢাকার সাভার থানায় ২০১১ সালের ৩ মে তে দণ্ডবিধির ৩০২/৩৪ ধারার ৯ নাম্বার এফআইআর, ডিএমপির কদমতলী থানায় ২০১৪ সালের ২৬ জুলাইয়ে দণ্ডবিধির ৩৯৫/৩৯৭ ধারায় ২২ নাম্বার এফআইআর রয়েছে। তা ছাড়াও গাজীপুরের কালিয়াকৈর থানায় ২০১৪ সালের ২৬ জুলাইয়ে দণ্ডবিধির ১৪৩/৪৪৭/৪২৭/৩২৩/৩২৫/৩৭৯/৫০৬ ধারায় ২৬ নাম্বার এফআইআর, ডিএমপির তুরাগ থানায় ২০১২ সালের ৬ মে’তে দণ্ডবিধির ৩৯২ ধারায় ১৩ নাম্বার এফআইআর এবং গাজীপুরের জয়দেবপুর থানায় ২০১৪ সালের ২১ জুলাইয়ে দণ্ডবিধির ১৪৩/৪৪৭/৩৮৫/৩০৭/৩২৩/৩২৪/৩৭৯/৪২৭/৫০৬ ধারায় ৪৪ নাম্বার এফআইআর রয়েছে।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক মেম্বার বলেন, সুমন ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে যতগুলো মামলা হয়েছে সবই ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের আমলে। সুমন ভূঁইয়াও আওয়ামী লীগের নেতা। তাই তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক মামলা হওয়ার প্রশ্ন ওঠে না। বিএনপি-জামায়াতের আমলে মামলা হলে ধরে নিতাম মামলাগুলো ষড়যন্ত্রমূলক। ব্যক্তি হিসেবে খারাপ না হলে কোনো নেতার বিরুদ্ধে দল ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় এতগুলো মামলা হবে না।
এ প্রসঙ্গে ইয়ারপুর ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান বলেন, সৈয়দ আহমেদ ভূঁইয়া এবার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই অসুস্থ ছিল। চিকিৎসার জন্য তাকে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি থাকতে হয়েছে। তার অনুপস্থিতিতে আমি চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছি। কিন্তু সুমন ভূঁইয়ার জন্য আমি আমার দায়িত্ব কখনো ঠিকভাবে পালন করতে পারি নাই। সে সবসময় পরিষদে এসে বসে থাকত। পরিষদের সদস্য না হয়েও সকল কাজে ঝামেলা পাকাতো। তার বাবা চেয়ারম্যান, সে আওয়ামী লীগের নেতা। তাই তখন কিছু বলতে পারি নাই। কিন্তু এবার সুযোগ এসেছে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চেয়েও সে পায়নি। দল তাকে প্রত্যাখ্যান করেছে। বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় দল থেকেও সে বহিষ্কার হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ১৬ মামলার আসামিকে দল যেমন প্রত্যাখ্যান করেছে তেমনি আমরা ৯ জন মেম্বারও চাই না সে চেয়ারম্যান হোক। আশা করি ২৯ তারিখ ভোটের দিন জনগণও তাকে ভোট না দিয়ে প্রত্যাখ্যান করবে।
এসআইএইচ
