যমুনায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের মহোৎসব!

শুকনো মৌসুম। এ মৌসুমে যমুনা নদীতে জেগে ওঠেছে বালুময় আবাদি ফসলি জমি ও চরাঞ্চল। যমুনা নদীতে আর এসব ফসলি জমি মালিকদের জিম্মি করে জেগে ওঠা বালুময় চরাঞ্চলের জমিতে ভেকু (মাটিকাটার যন্ত্র) বসিয়ে রাত-দিন ২৪ ঘণ্টা অবাধে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের মহোৎসবে মেতেছে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে স্থানীয় কিছু অসাধু বালু খেকো, আওয়ামী লীগের কতিপয় কিছু নেতাসহ ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মী। তবে স্থানীয় প্রশাসন মাঝে মধ্যে বালু উত্তোলন বন্ধে অভিযান করলেও অদৃশ্য কারণে কয়েক দিন পরে পুনরায় শুরু হয় বালু উত্তোলন।
অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে বর্ষাকালে নদীর তীরবর্তী এলাকাগুলোতে ব্যাপক ভাঙন দেখা দেয়। এতে প্রতি বছর বিলীন হয় ফসলি জমি, বসতভিটা, ঘরবাড়ি, মসজিদ-মন্দির, সড়ক, স্কুলসহ নানা স্থাপনা। সেসময় ভাঙনরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড জিও ব্যাগ ফেললেও ভাঙন রোধ করা সম্ভব হয়ে উঠে না। ফলে বালু উত্তোলনের কারণে হুমকির রয়েছে বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব-ভূঞাপুর সড়কের গোবিন্দাসী কাকুদাইর পর্যন্ত সেতু রক্ষা বাঁধ, বঙ্গবন্ধু সেনানিবাস গাইড বাঁধ ও ভূঞাপুর-তারাকান্দি মহাসড়ক। এছাড়া বালু উত্তোলনের ফলে প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক জোন এলাকায় সৃষ্টি হচ্ছে গভীরতা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বন্ধবন্ধু সেতু এলাকার সারপলশিয়া থেকে গোবিন্দাসী পর্যন্ত ৪-৫টি পয়েন্টে নিষিদ্ধ বাংলা ড্রেজার দিয়ে দেদারছে বালু করা হচ্ছে। জিগাতলা, কষ্টাপাড়া, ভালকুটিয়া, চিতুলিয়াপাড়া, পাটিতাপাড়া এলাকায় যমুনা নদী থেকে বাংলা ড্রেজার বসিয়ে দিন-রাত বালু উত্তোলন করে। অপরদিকে, ভূঞাপুর-তারাকান্দি মহাসড়ক সংলগ্ন অর্জুনার কুঠিবয়ড়া থেকে নলিন বাজার পর্যন্ত ৫-৬টি পয়েন্টে অবৈধ বালুঘাট তৈরি করে গাইড বাঁধের কাছ থেকে ভেকু (মাটি কাটার যন্ত্র) দিয়ে উত্তোলন এবং তারাকান্দি মহাসড়কের প্যালাসাইডিং ভেঙে রাস্তা তৈরি করে শতশত ট্রাকে বালু বিক্রি করছে।
জগৎপুরা এলাকার ভুক্তভোগী মানিক হোসেন ও রায়ের বাসালিয়া গ্রামের শেফালী বেওয়াসহ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ভুক্তভোগীরা জানান, স্থানীয় আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কতিপয় কিছু নেতাকর্মী ও প্রভাবশালী ব্যক্তিরা গাইড বাঁধের কাছ থেকে রাত-দিন ভেকু (মাটিকাটার যন্ত্র) দিয়ে অবৈধভাবে ফসলি জমির বালুমাাটি কেটে ট্রাকযোগে বিক্রি করছে। তাদের ভয়ে কাউকে কিছু বলতে পারি না। প্রতি বছর নদীর পানি শুকিয়ে গেলে জেগে উঠা চর কেটে বিক্রি করছে তারা। এভাবে বালু মাটি কেটে ফেলা হলে বন্যার সময় বাঁধ ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. বেলাল হোসেন জানান, বালু উত্তোলনের বিষয়ে স্থানীয়দের একাধিক অভিযোগ পেয়েছি। আইনশৃঙ্খলা সভায় আলোচনা করা হবে।
এছাড়া অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। টাঙ্গাইল জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সাজ্জাদ হোসেন জানান, ভূঞাপুর উপজেলার অর্জুনা, কুঠিবয়ড়া, জগৎপুরা ও গুলিঁ পেচা এবং গোবিন্দাসী ও নিকরাইল ইউনিয়নের কষ্টাপাড়া, ভালকুটিয়া, চিতুলিয়াপাড়া, পাটিতাপাড়াসহ যেসব এলাকায় গাইড বাঁধ সংলগ্ন থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে সেসব এলাকায় সরেজমিনে পরিদর্শন করে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে অবহিত করা হবে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এএজেড
