আধিপত্য নিয়ে দ্বন্দ্বে এলাকা ছাড়লেন চেয়ারম্যান, বেকায়দায় কৃষকরা

নরসিংদী জেলার সদর উপজেলায় ধান উৎপাদনের জন্য উর্বর এলাকা চরদীঘলদি ইউনিয়ন। কিন্তু এবার স্থানীয় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বর্তমান ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানের দ্বন্দ্বে কৃষি বিভাগ থেকে দেওয়া প্রনোদনার বীজ ও উপকরণ সংগ্রহ করতে না পেরে বেকায়দায় পড়েছেন ওই এলাকার কৃষকরা।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ বছর নরসিংদী সদর উপজেলার চরদীঘলদি ইউনিয়নে প্রায় ১৩০ জন কৃষকের জন্য ৫ কেজি করে বোরো ধানের বীজসহ ১০ কেজি করে ডিএপি ও পটাশ সার বরাদ্ধ করা হয়েছে। বরাদ্ধ মোতাবেক ধানের বীজ কৃষকদের মাঝে বিতরণের লক্ষ্যে গত ৭ ডিসেম্বর চরদীঘলদি ইউনিয়ন পরিষদে পাঠানো হয়েছে। প্রায় ৭ দিন অতিবাহিত হলেও এই বীজ কৃষকদের মাঝে বিতরণ করা সম্ভব হয়নি। কারণ এলাকার আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বর্তমান চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন সরকার ও সাবেক চেয়ারম্যান আবু মুনসুর সরকারের মধ্যে ইতিমধ্যে কয়েক দফা রক্তক্ষয়ী টেটাযুদ্ধ সংগঠিত হয়েছে। এতে প্রাণ গেছে কয়েকজনের। যার ফলে বর্তমান চেয়ারম্যান তার সমর্থকসহ এলাকা ছাড়া রয়েছেন। এদের মধ্যে প্রায় অধিকাংশ কৃষকরা এলাকায় প্রবেশ করতে না পারায় ধানের বীজ সংগ্রহ করতে পারছেন না। অপরদিকে বর্তমান চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন সরকার সাবেক চেয়ারম্যান আবু মুনসুর সরকারের সমর্থকদের হামলার ভয়ে এলাকায় প্রবেশ করতে পারছে না।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. দেলোয়ার হোসেন সরকারের মোবাইলে একাধিকবার কল দিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। পরে পরিষদের সচিব মো. লাইজুর রহমান ভূইয়ার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এলাকার অবস্থা বেশী ভালো নয়। যার ফলে চেয়ারম্যান নিয়মিত অফিস করতে পারছেন না। আর এই গ্রুপের কারণে এলাকার অবস্থা যেকোনো সময় উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে। ইউনিয়নের ছোট-খাটো কাজ করতে হলেও পুলিশ মোতায়েন করতে হচ্ছে।
চরদীঘলদি ইউনিয়নের কৃষি উপ-সহকারী মো. কামরুজ্জামান জানান, এলাকার কৃষকদের মাঝে বিতরণের জন্য ধানের বীজ আনা হয়েছিল কিন্তু চেয়ারম্যান না থাকা ও একপক্ষের কৃষকরা এলাকায় না থাকার কারণে বীজ বিতরণ করা সম্ভব না হওয়ায় উপজেলা কৃষি অফিসে ফেরত নেওয়া হচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় কয়েকজন কৃষক জানান, গত ইউপি নির্বাচনে বর্তমান ও সাবেক চেয়ারম্যানের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে রক্ষক্ষয়ী সংঘর্ষ বাধে। এতে প্রাণও হারায় কয়েকজন। এরপর থেকে বর্তমান চেয়ারম্যানের সমর্থকরা বাড়ি ছাড়া। এর মধ্যে প্রায় শতাধিক কৃষকও রয়েছেন। এখন বাড়িতে উঠতে না পারলে বীজ সংগ্রহ ও চাষাবাদ না করতে পারলে জমিগুলো অনাবাদি থাকবে বলে জানান তারা।
এদিকে বিষয়টি নিয়ে নরসিংদী সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মহুয়া শারমীন মুনমুন জানান, সরকারের প্রনোদনার অংশ হিসেবে কৃষকদের মধ্যে বোরো ধানের বীজ বিতরণের জন্য ১৩০ জন কৃষকের প্রত্যেকের জন্য ৫ কেজি করে বীজ এলাকায় পাঠানো হয়েছে। কিন্তু স্থানীয় আধিপত্য নিয়ে বর্তমান চেয়ারম্যানসহ তার সমর্থকরা এলাকা ছাড়া। এর ফলে এই বীজ বিতরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। উপায় না পেয়ে ধানের বীজ অফিসে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। অফিস থেকে বিতরণ করা হবে। এলাকার আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট সংঘর্ষের কারণে কৃষকরা বীজ না নিতে পারলে এলাকার প্রায় ১৩০ বিঘা ধানের জমি আবাদ থেকে বঞ্চিত হবে। শুধু পলাতক কৃষকই নয়। এ ঘটনায় প্রতিপক্ষের হামলার ভয়ে অন্যান্য কৃষকরাও তাদের জমিতে গিয়ে কাজ করতে শঙ্কায় রয়েছেন। এর ফলে খাদ্য উৎপাদনে কিছু ঘাটতি পড়তে পারে বলে আশা প্রকাশ করেছেন এই কর্মকর্তা।
কৃষি বিভাগ ও কৃষকদের দাবি, যত দ্রুত সম্ভব স্থানীয় কোন্দল মিটিয়ে কৃষকদের বীজ সংগ্রহের মাধ্যমে ধানের চাষাবাদের ব্যবস্থা করা হোক।
এসআইএইচ
