তাজরীন ট্রাজেডির ১০ বছর, সাক্ষীর অভাবে মামলার ধীরগতি
আজ ২৪ নভেম্বর বাংলাদেশের ইতিহাসে পোশাক শিল্পের বিভীষিকাময় অধ্যায় তাজরীন ট্রাজেডির ১০ বছর পূর্ণ হলো। ২০১২ সালের এই দিনে সাভারের আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরে অবস্থিত তাজরীন পোশাক কারখানায় অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যান ১১৭ জন শ্রমিক। এই ঘটনায় আহত হন দুই শতাধিক শ্রমিক।
ভয়াবহ ওই ঘটনার পরদিন আশুলিয়া থানার উপপরিদর্শক (এস.আই) খায়রুল ইসলাম কারখানা কর্তৃপক্ষের অবহেলা অভিযোগ তুলে হত্যা মামলা দায়ের করেন। কিন্তু মামলা দায়েরের ১০ বছর পেরিয়ে গেলেও শেষ হয়নি বিচার কাজ। এতে অসন্তুষ্ট নিহতের স্বজনরা। এই মামলার বিচারকাজ অতি দ্রুত শেষ করার জন্য সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করছেন তারা।
বর্তমানে মামলাটি ঢাকার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ দিলারা আলো চন্দনার আদালতে বিচারাধীন। সর্বশেষ গত ১৮ মে মামলাটিতে পোশাক শ্রমিক হালিমা খাতুন ও সুপারভাইজার সিরাজুল ইসলাম সাক্ষ্য দেন। এরপর থেকে আর কোনো সাক্ষী আদালতে আসেননি। ১০ বছরে মামলায় ১০৪ সাক্ষীর মধ্যে ১১ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে।
এবিষয়ে সংশ্লিষ্ট আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর একেএম শাহনেওয়াজ জানান, সাক্ষী না পাওয়ার কারণে মামলার ধীর গতি। মামলার যারা সাক্ষী তারা অধিকাংশই তাজরীন ফ্যাশনের কর্মী। অগ্নিকাণ্ডের পর অনেকেই এলাকা ছেড়ে চলে গেছেন। কেউ কেউ বাসা বদল করেছেন। তাদের স্থায়ী ঠিকানাও নেই। তাই তাদের খুঁজে পাওয়া কষ্টকর।
মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর তাজরীন গার্মেন্টসে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে। এতে ১১৭ পোশাক শ্রমিক মারা যান। ওই কারখানাটিতে ১ হাজার ১৬৩ শ্রমিক কাজ করতেন। কিন্তু দুর্ঘটনার সময় ৯৮৪ জন শ্রমিক সেখানে কর্মরত ছিলেন। এই ঘটনার পরদিন আশুলিয়া থানার উপপরিদর্শক (এস.আই) খায়রুল ইসলাম কারখানা কর্তৃপক্ষের অবহেলার অভিযোগ এনে হত্যা মামলা দায়ের করেন।
পরবর্তীতে এই মামলার তদন্তের দায়িত্বভার পরে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) উপর। ২০১৩ সালের ২২ ডিসেম্বর প্রতিষ্ঠানটির মালিক, ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে ঢাকার মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পরিদর্শক মহসিনুজ্জামান খান। অভিযোগপত্রভুক্ত আসামিরা হলেন- তাজরীন ফ্যাশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন, চেয়ারম্যান মাহমুদা আকতার, কারখানার লোডার শামীম, স্টোর ইনচার্জ (সুতা) আল আমিন, সিকিউরিটি ইনচার্জ আনিসুর রহমান, সিকিউরিটি সুপারভাইজার আল আমিন, স্টোর ম্যানেজার হামিদুল ইসলাম লাভলু, প্রশাসনিক কর্মকর্তা দুলাল উদ্দিন ও প্রকৌশলী এম মাহবুবুল মোর্শেদ, ফ্যাক্টরি ম্যানেজার আবদুর রাজ্জাক, কোয়ালিটি ম্যানেজার শহীদুজ্জামান দুলাল, প্রডাকশন ম্যানেজার মোবারক হোসেন মঞ্জু, নিরাপত্তারক্ষী রানা ওরফে আনারুল।
অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, কারখানা ভবনটি ইমারত নির্মাণ আইন মেনে করা হয়নি। শ্রমিকদের বের হওয়ার জন্য ভবনটিতে জরুরি বহির্গমন পথ ছিল না। তিনটি সিঁড়ির মধ্যে দুটি নিচতলার গুদামের ভেতরে এসে শেষ হয়েছে। ওই গুদামে আগুন লাগার পর শ্রমিকেরা বের হতে চাইলে কারখানার ম্যানেজার শ্রমিকদের বাধা দিয়ে বলেন, আগুন লাগেনি অগ্নিনির্বাপণের মহড়া চলছে। তিনি বের হওয়ার পথ বন্ধ করে দেন।
এই মামলায় অভিযুক্ত আসামিদের মধ্যে আল আমিন, রানা ওরফে আনারুল, শামীম ও মোবারক হোসেন পলাতক। অপর আসামিরা জামিনে রয়েছেন।
এসএন