কয়েক ঘন্টার মাছ বাজার, বদলেছে অর্থনৈতিক চিত্র
শুধুমাত্র মাছকে ঘিরেই কয়েক ঘন্টার বাজার। রুই, কাতলা, বোয়াল, বাইম, শিং, মাগুর, চিংড়ি, কই, পাবদা, টেংরাসহ প্রায় ৮০ থেকে ৯০ প্রজাতির দেশীয় মাছ বিক্রি হয় এ বাজারে। সকাল সাতটায় শুরু হওয়া মাছ বাজারটিতে বিক্রি চলে সকাল দশটা পর্যন্ত। আর এই তিন ঘন্টার মাছ বাজারে বিক্রি হয় কোটি টাকার মাছ। কখনও কখনও মাছের পরিমাণ বেশি হলে সেই অংকটিও ছাড়িয়ে যায়। এখানকার জেলেদের একমাত্র আস্থার জায়গা এই মাছ বাজারটি।
হাওরের প্রবেশ দ্বার হিসেবে পরিচিত কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার বালিখোলা। ধনু নদীর পাড়ে গড়ে উঠা বালিখোলা বাজারের খ্যাতি রয়েছে হাওরের তাজা মাছের জন্য। পাইকারি ও খুচরা এ বাজারে পাওয়া যায় হাওরের নদ-নদী ও মুক্ত জলাশয়ের তরতাজা সব মাছ। সারারাত হাওরে মাছ ধরে ভোরের আলো ফোটার আগেই ঘাটে ভিড়ে জেলেদের ছোট ছোট নৌকার বহর। তারপর জেলেরা তাদের পছন্দের আড়তে নিয়ে মাছ বিক্রি শুরু করেন।বাজারের যেদিক চোখ যায় শুধু মাছ আর মাছ। যেন প্রাকৃতিক মাছের এক বিশাল রাজ্য।
হাওরের মাছের কদর রয়েছে সারা দেশজুড়ে। চাহিদার কারণে মিঠাপানির সুস্বাদু এই মাছকে ঘিরে বালিখোলার ব্যবসা-বাণিজ্যও রমরমা।তাইতো শুধু কিশোরগঞ্জ জেলার হাওরাঞ্চল নয় বরং আশে পাশের জেলা গুলো থেকেও জেলেরা মাছ নিয়ে আসেন বালিখোলা বাজারে।ন্যায্য মূল্যে বিক্রি করে বিক্রেতারা খুশি। অন্য দিকে সঠিক দামে মাছ কিনতে পেরে ক্রেতাও খুশি।তবে শুধু মাছ ব্যবসায়ী নয়, যে কেউ চাইলে মাছ কিনতে পারেন এখান থেকে।
শতবছর পুরোনো বালিখোলা বাজারটি একসময় এত জমজমাট ছিলনা। কিন্তু যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হওয়ায় দিন দিন এ বাজারের মাছ ক্রয়-বিক্রয়ের চাহিদা বেড়েই যাচ্ছে। এতে করে ইটনা-অষ্টগ্রাম-মিঠামইনের জেলেদের একটি আস্থার জায়গা তৈরি হয়েছে এই মাছের বাজারকে ঘিরে। সারারাত মাছ ধরে জেলেরা ভোরেই এসে ন্যায্য দামে মাছ বিক্রি করতে পারছে। মাছ বিক্রিতে জড়িয়ে আছে কয়েক হাজার জেলে পরিবারের জীবন-জীবিকা। জেলেদের জীবনমান উন্নোয়নের পাশাপাশি, বদলেছে তাদের আর্থিক সক্ষমতা।
প্রতিদিনই বালিখোলা বাজারের মাছ, পাইকারীদের মাধ্যমে চলে যায় ঢাকা,চট্টগ্রাম সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।বিভিন্ন জেলার মাছ ব্যবসায়ীরা ভোর থেকেই মাছের গাড়ি নিয়ে ভিড় করেন বাজারে।পাওয়া যায় শুধু হাওর কিংবা নদনদীর মাছ।চাষের কোন মাছ পাওয়া যায়না এ বাজারে। মাছ বেচাকেনায় বাজারটিতে প্রতিদিন গড়ে দেড় থেকে দুই কোটি টাকা লেনদেন হয়। তবে সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হলে, এ বাজার স্থানীয় অর্থনীতিতে আরো বেশি অবদান রাখতে পারবে।
জানা যায়,বালিখোলা মাছের বাজারে অন্তত ৬০টি আড়ৎ রয়েছে। কিশোরগঞ্জের বৃহত্তম হাওর ছাড়াও পার্শ্ববর্তী হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনার হাওরের মাছও এই বাজারে বিক্রি হয়। কিশোরগঞ্জ জেলায় ৩৪ লক্ষ মানুষের বসবাস। সে মোতাবেক ৬৫ থেকে ৬৬ হাজার মেট্রিক টন মাছের চাহিদা থাকলেও উৎপাদন হচ্ছে ৮২ থেকে ৮৫ হাজার মেট্রিক টন মাছ। এর মাঝে হাওর এবং নদ-নদীর মাছই রয়েছে প্রায় ৫৪ হাজার মেট্রিক টন। হাওরের মাছের উৎপাদন বাড়ানো এবং বালিখলাসহ মাছের বড় বাজারগুলোর অবকাঠামো উন্নয়ন ও মৎস্য অভয়াশ্রম তৈরি সহ বিভিন্ন পরিকল্পনা নিয়ে মৎস্য বিভাগ কাজ করছে।
এএজেড