মানিকগঞ্জে ভাতার টাকার দাবিতে ইউপি সদস্যদের মামলা
ভাতার টাকা প্রাপ্তির দাবিতে আদালতে মামলা করেছে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার পুটাইল ইউনিয়ন পরিষদের সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত সদস্যরা। ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান মহিদুর রহমানের সহায়তায় সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল এই টাকা আত্মসাৎ করেছে বলে দাবি ভুক্তভোগীদের।
টাকা আত্মসাতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পুটাইল ইউনিয়ন পরিষদের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য মো. তোফাজ্জল হোসেন টুটুল।
মেম্বার টুটুল বলেন, ২০১৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ইউপি সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। করোনা ভাইরাসের অজুহাতে এই সময়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল ২০২০ সালে সকল ইউপি সদস্যদের ভাতা প্রতি মাসে ৪ হাজার ৪০০ টাকা করে পরিশোধ করতে বিলম্ব করেন। পরবর্তীতে এই টাকা দেই দিচ্ছি করে নানা অজুহাতে গড়িমসি করতে শুরু করেন। এরই মধ্যে ফের ইউপি নির্বাচন চলে আসে এবং নির্বাচনের পরে সকলের প্রাপ্য টাকা পরিশোধ করবে বলে মৌখিকভাবে সকল সদস্যদের আশ্বস্ত করেন তিনি। কিন্তু নির্বাচনে পরাজয়ের পর তিনি আর ওই টাকা পরিশোধ না করে নবাগত চেয়ারম্যানের নিকট দায়িত্ব হস্তান্তর করেন।
তিনি আরও বলেন, নবাগত চেয়ারম্যান মহিদুর রহমানকে ভাতার টাকার বিষয়টি জানালে তিনি সকল সদস্যদের টাকা অচিরেই পরিশোধ করবেন বলে মৌখিকভাবে অবগত করেন। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে তিনিও এই টাকা পরিশোধ না করায় বর্তমান চেয়ারম্যান মহিদুর রহমান, সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল এবং সচিব নজরুল ইসলামকে আসামি করে মামলা করা হয়। সকল ইউপি সদস্যদের পক্ষ থেকে বাদী হয়ে মানিকগঞ্জের অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে মামলাটি দায়ের করেন ইউপি সদস্য আক্কাচ আলী। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে মানিকগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি-তদন্ত) কে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দেন।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে মামলার বাদী আক্কাচ মেম্বার বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের আয় থেকে প্রতি মাসে ৪ হাজার ৪০০ টাকা সম্মানি পায় প্রত্যেক ইউপি সদস্য। নির্বাচনের পর থেকে নিয়মিতভাবে চেয়ারম্যান এই টাকা পরিশোধ করলেও করোনার অজুহাতে ২০২০ সালে কোনো সদস্যদের টাকা না দিয়ে তিনি নিজেই এই টাকা আত্মসাৎ করেন।
তিনি আরও বলেন, এ বিষয়টি নিয়ে অনেকবার স্থানীয়ভাবে সমাধানের চেষ্টাও করা হয়েছে। এরই এক পর্যায়ে ইউপি নির্বাচন চলে আসে এবং নির্বাচনে পরাজিত হয় জলিল চেয়ারম্যান। পরবর্তীতে নবাগত মহিদুর চেয়ারম্যানকে বিষয়টি জানালে তিনি ইউনিয়ন পরিষেদের তহবিল থেকে এই টাকা পরিশোধ করবেন বলে মৌখিকভাবে আশ্বস্ত করেন। পরে তিনিও এই টাকা পরিশোধ না করায় পরবর্তীতে বাধ্য হয়েই আদালতে মামলা করতে হয়েছে।
এ ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত সাপেক্ষে সকল ইউপি সদস্যরা তাদের প্রাপ্ত সম্মানির জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা কামনা করেন বলে জানান এই মেম্বার।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পুটাইল ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান মহিদুর রহমান বলেন, সাবেক চেয়াম্যান ক্ষমতা হস্তান্তর করার সময় ইউনিয়নের তহবিলে কোনো টাকা রেখে যাননি। বর্তমানে ইউনিয়ন পরিষদের আয়ও কম। যে কারণে কোনোভাবেই সাবেক মেম্বারদের বকেয়া টাকা পরিশোধ করা সম্ভব নয়।
এ বিষয়ে সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল বলেন, ২০১৭ সালে আমি চেয়ারম্যান হিসেবে ক্ষমতা বুঝে নেওয়ার পর থেকে নিয়মিতভাবে ইউপি সদস্যদের সম্মানি ভাতা পরিশোধ করেছি। তবে ২০২০ সালে করোনায় ইউপির আয় কমে যাওয়ায় সম্মানি ভাতা দেওয়া সম্ভব হয়নি বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, পুটাইল ইউপি’র আয়ের বড় একটি উৎস্য ১৪/১৫টি ইটভাটা। করোনাকালে ভাটা মালিকরা ক্ষতিগ্রস্ত ছিল বিধায় ইউপি রাজস্ব দিতে না পারায় সদস্যদের সম্মানির ওই টাকা দিতে পারেননি। বিষয়টি মেম্বাররা বুঝতে না পেরে আদালতে মামলা করেছে। সদস্যদের টাকা তিনি আত্মসাৎ করার বিষয়টিও অস্বীকার করেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে মানিকগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি-তদন্ত) কহিনুর মিয়া বলেন, উক্ত বিষয়ে তদন্ত করার জন্য আদালত থেকে তিনি এখনো কোনো নির্দেশনা পাননি। তদন্ত প্রতিবেদনের নির্দেশনা পেলে অবশ্যই সুষ্ঠভাবে তদন্ত করা হবে।
এসআইএইচ