পড়াশোনা করতে সাহায্য চান প্রতিবন্ধী শাহিদা
মনের অদম্য ইচ্ছে শক্তি ও সাহসিকতা মানুষকে তার সাফল্যের কাছে নিয়ে যায়। শত বাঁধা তাকে আটকাতে পারে না। এমনকি মানুষের নানা মন্তব্যকে পেছনে ফেলে যারা এগিয়ে চলে তারাই আজ সফল। তেমনি এক সাহসী কন্যা প্রতিবন্ধী শাহিদা আক্তার। উচ্চতা পৌঁনে ৩ ফুট। বয়স ১৮। অন্যান্য সহপাঠীদের মতো চলাচল করে সে। কিন্তু শাহিদা প্রতিবন্ধী হলেও তাকে দমাতে পারেনি। কৃতিত্বের সঙ্গে পিএসসি ও জিএসসির গণ্ডি পেরিয়ে এখন এসএসসি শেষ করে ভালো কলেজে পড়ার স্বপ্ন দেখছেন।
শাহিদার বাড়ি টাঙ্গাইল সদর উপজেলার কাতুলী ইউনিয়নের উত্তর কাতুলী গ্রামের মৃত শামসুল হকের মেয়ে। তিন বোন, দুই ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট সে। এবার কাতুলী ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছেন তিনি।
জানা গেছে, দরিদ্র কৃষক পরিবারে জন্ম শাহিদার। জন্ম থেকে গ্রোথ হরমোনজনিত (সোমাটোট্রপিন) জটিলতার কারণে স্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠা হয়নি তার। এর ফলে শারীরিক গঠন নিয়ে প্রথম অবস্থায় সহপাঠী, প্রতিবেশী ও আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে কটুকথা শুনতে হয় তাকে। তবে যখন সে পিএসসিতে ভালো ফলাফল করে তখন তার সহপাঠী ও প্রতিবেশীদের ধারণা পাল্টে যায়। তারপর থেকে তাকে সবাই নানাভাবে উৎসাহ দিতে থাকে। তারপর ৭ম-৮ম শ্রেণিতে স্কুল কেবিনেট নির্বাচনে শাহিদাকে তার সহপাঠীরা উৎসাহিত করে নির্বাচনে দাঁড় করিয়ে দেন। ওই নির্বাচনে শাহিদা বিপুল ভোটে নির্বাচিত হন।
সহপাঠীরা জানান, স্কুলের যেকোনো কাজে শাহিদাকে পাওয়া যায়। আমরা সকলে নানাভাবে উৎসাহিত করেছি। স্কুলে যাওয়া-আসার পথে কোনো বখাটে ছেলেরা ছাত্রীদের উক্ত্যক্ত করত কিনা সে দিকেও নজর ছিল তার। স্কুলের যেকোনো অনুষ্ঠানে সুন্দর ও সাবলীলভাবে উপস্থাপনা করতেন তিনি। স্কুল সব সময় পরিস্কার-পরিছন্ন আছে কিনা সেদিকেও শাহিদা খেয়াল রাখতেন এবং আমাদের ভালো উপদেশ দিত।
সহপাঠী রাবেয়া আক্তার বলেন, আমরা এক সাথে ৫টি বছর পড়ালেখা করেছি। শাহিদা পড়ালেখায় অনেক ভালো। সবাইকে অনেক সাহায্য করত। আমাদের সাথে সব সময় মিলেমিশে চলত। সে সব সময় আমাদের ভালো উপদেশ দিত। কোনো বিপদে পড়লে শাহিদা আমাদের সেই বিপদ থেকে উদ্ধার করার চেষ্টা করত। শাহিদাকে যদি সরকারি ভাবে প্রতি মাসে সহযোগিতা করা হয় তাহলে তার জন্য পড়ালেখা করতে সুবিধা হবে।
শাহিদার মা জেবুনেসা বেগম বলেন, শাহিদা জন্ম থেকেই শারীরিক প্রতিবন্ধী। চিকিৎসা করেও আমরা সুফল পায়নি। শাহিদা প্রতিবন্ধী হওয়ার কারণে প্রথম অবস্থায় মানুষের কাছে অনেকেই নানা ধরনের কটুকথা বলত। শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়া স্বত্ত্বেও আজ পর্যন্ত তাকে কেউ সহযোগিতা করেনি। তার নিজ সাহসে এ পর্যন্ত এসেছে সে। পারিবারিকভাবে দরিদ্র আমরা। তাই আমার শারীরিক প্রতিবন্ধী মেয়ে শাহিদাকে যেন প্রতি মাসে সরকারিভাবে সহযোগিতা করা হয়, সেই দাবি জানাচ্ছি সরকারের কাছে।
শারীরিক প্রতিবন্ধী শাহিদা আক্তার বলেন, আমি পড়ালেখা করে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হতে চাই। প্রতিষ্ঠিত হয়ে সমাজের সবাইকে তাক লাগিয়ে দিতে চাই। যাতে করে সবার ভুল ধারণা যেন পাল্টে যায়, শারীরিক প্রতিবন্ধীরাও প্রতিষ্ঠিত হয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে। কারও যেন ভুল ধারণা সৃষ্টি না হয়, শারীরিক প্রতিবন্ধীরা দেশের বোঝা। সরকারি ভাবে যদি আমাকে প্রতি মাসে সহযোগিতা করা হয় তাহলে আমি পড়াশোনা করে আরও এগিয়ে যেতে পারব। এজন্য সরকারের কাছে সহযোগিতা কামনা করছি।
এ বিষয়ে কাতুলী ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক নিজাম উদ্দিন বলেন, শাহিদা এবার এসএসসি দিয়েছে। আশা করি বিগত দিনের মতো অনেক ভালো রেজাল্ট করবে। শাহিদাকে সরকারিভাবে সহযোগিতা করা হোক এটাই আমাদের দাবি।
এ ব্যাপারে টাঙ্গাইল সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা রানুয়ারা খাতুন বলেন, সরকারিভাবে প্রতিবন্ধীদের সব সময় সহযোগিতা করা হয়। যদি শাহিদা প্রতিবন্ধী ভাতা না পেয়ে থাকে তাহলে সে কাগজপত্র নিয়ে আসলে তাকে সহযোগিতা করা হবে।
এসআইএইচ