ভুল চিকিৎসায় প্রসূতির মৃত্যু, গ্রেপ্তার ৬
গাজীপুরের কালীগঞ্জে ভুল চিকিৎসায় প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনায় জনসেবা হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বন্যা আক্তারসহ ছয় জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। মঙ্গলবার (২৩ আগস্ট) রাতে উপজেলার বালিগাঁও (বড়নগর) এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। র্যাব-১ (উত্তরা) সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) নোমান আহমেদ বুধবার (২৪ আগস্ট) বিকেল সাড়ে ৩টায় গ্রেপ্তারের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
র্যাব কর্মকর্তা সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) নোমান আহমেদ জানান, গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার তুমুলিয়া গ্রামের আব্দুর রাজ্জাকের স্ত্রী শিরিন বেগমের (৩২) প্রসব ব্যাথা উঠে। এসময় পূর্ব পরিচিত ওই হাসপাতালের পরিচালক বণ্যা আক্তারের সাথে পরামর্শ করলে সে তার মালিকানাধীন জনসেবা হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে সিজারিয়ান অপারেশন করার জন্য ভর্তি করার পরামর্শ দেয়।
পরে আব্দুর রাজ্জাক তার স্ত্রীকে রবিবার (২১ আগস্ট) সকালে ওই হাসপাতালে ভর্তি করেন। পরে হাসপাতালের ওটি বয় আশিকুর রহমানের তত্বাবধানে ভিকটিম শিরিন আক্তারকে আল্ট্রাসনোগ্রাম করে সিজার করার জন্য ওটিতে নিয়ে যায়। ওটিতে হাসপাতালের ডাক্তার মাসুদ গাইনোকলজিস্ট না হয়েও ভিকটিম রোগীর সিজার করনে।
অপারেশনের পর রোগীর ব্লিডিং হওয়ায় ডাক্তারের নির্দেশে আশিকুর রহমান ও বণ্যা আক্তার এবি পজেটিভ রক্ত সংগ্রহ করতে বলেন। ভিকটিমের ভাই ও ননদের ছেলের রক্ত এবি পজেটিভ হওয়ায় প্রথমে ভিকটিমের ভাইয়ের শরীর থেকে এক ব্যাগ রক্ত নিয়ে রোাগীর শরীরে পুশ করে। পরে আরো এক ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন হলে ভিকটিমের ননদের ছেলের শরীর থেকে রক্ত নেয়ার জন্য হাসপাতালের বেডে শোয়ানো হয়। এর ফাঁকে হাসপাতালের কর্তব্যরত নার্সরা রোগীর শরীরে বি পজেটিভ রক্ত পুশ করে।
এবি পজেটিভের পরিবর্তে বি পজেটিভ রক্ত পুশ করায় রোগী খিচুনি শুরু হলে ডাক্তারের অনুপস্থিতে ওটি বয় আশিকুর রহমান চিকিৎসা চালিয়ে যান। ভিকটিমের অবস্থার অবনতি হলে রোগীর স্বজনদের দ্রুত রোগীকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেয় বণ্যা আক্তার ও আশিকুর রহমান। স্বজনেরা অ্যাম্বুলেন্সে রোগীকে ঢাকা নেয়ার পথে রোগীর অবস্থা অবনতি হলে উত্তরার একটি হাসপাতালে নিয়ে যায়। ওই হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক অ্যাম্বুলেন্সে থাকায় অকস্থায় প্রাথমিক পরীক্ষা করে রোগীকে মৃত ঘোষনা করে।
ভুল চিকিৎসায় প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনা বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। পরে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার নির্দেশে ওই হাসপাতালের গাইনি চিকিৎসক সানজিদা পারভীনকে আহবায়ক করে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে। পরে র্যাব উত্তরার সহযোগীতায় পূবাইল ক্যাম্পের সদস্যরা ভুল চিকিৎসায় প্রসূতিকে হত্যায় জড়িতদের গ্রেপ্তার করে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা জানায়, জনসেবা হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়মিত কোনো চিকিৎসক থাকতো না। মেয়াদ উত্তীর্ণ কাগজপত্র দিয়ে চিকিৎসা সেবা চালিয়ে যাচ্ছিল হাসপাতালটি। এসব অনিয়মের ভিতর গড়ে প্রতি মাসে ২৫ থেকে ৩০টি সিজারিয়ান অপারেশনসহ প্রায় ৫০টির অধিক বিভিন্ন অপারেশন হতো।
হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বন্যা আক্তারের কোনো নার্সিং ডিগ্রী নেই। সে স্থানীয় একটি হাসপাতালে সত বছর নার্সিং ও আড়াই বছর ব্যাবস্থাপক হিসেবে চাকরি করতো। গ্রেপ্তারকৃত আশিকুর রহমান, সঙ্গিতা তেরেজা কস্তা, মেরী গমেজ, সীমা আক্তার এবং শামীমা আক্তার এসএসসি পাশ।
র্যাব কর্মকর্তা আরো জানায়, জনসেবা হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের লাইসেন্সের মেয়াদ গত বছরের ৩০ জুন এবং ট্রেড লাইসেন্সের মেয়াদ চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত ছিল। ফায়ার ও শিল্প প্রতিষ্ঠান লাইসেন্স মেয়াদ উত্তীর্ণ এবং কোনো পরিবশেগত ছাড়পত্র পাওয়া যায়নি। পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য গ্রেপ্তারকৃতদের সংশ্লিষ্ট থানায় সোপর্দ করা হয়েছে।
এএজেড