যশোর-বেনাপোল মহাসড়ক সুরক্ষায় অকার্যকর বেনাপোল এক্সেল লোড কন্ট্রোল স্টেশন

বেনাপোল এক্সেল লোড কন্ট্রোল স্টেশন। ছবি: ঢাকাপ্রকাশ
যশোর-বেনাপোল মহাসড়ক সুরক্ষায় অতিরিক্ত পণ্য পরিবহন বন্ধে বেনাপোল এক্সেল লোড কন্ট্রোল স্টেশনটি পরিচালনায় বছরে সরকারের ২ কোটি ২৩ লাখ টাকা খরচ হলেও কোন সুফল নেই। সড়কে পণ্য পরিবহনকারী বাণিজ্যিক সংগঠনগুলোর সহযোগিতা না পাওয়ায় সেবা দিতে পারছে না।
এদিকে ব্যবসায়ীদের অভিযোগ ভোমরা ও নওয়াপাড়া বন্দর সড়ক বাদ রেখে কেবল বেনাপোল সড়কে স্কেল চালু করলে এ রুটে বাণিজ্য কমার আশঙ্কায় স্কেল ব্যবহারে তাদের আপত্তি রয়েছে। প্রতিবছর সড়ক উন্নয়নে সরকারি, বেসরকারি সংস্থা হাজার, হাজার কোটি টাকা ব্যয় করছেন।
তবে পণ্য পরিবহনকারী ট্রাক চালকেরা সড়ক আইন না মানায় অল্প দিনেই সড়ক গুলি ব্যবহারের অনুপোযোগী হয়ে পড়ছে। এতে সড়ক ব্যয় যেমন বাড়ছে তেমনি বাড়ছে দুর্ঘটনা। সড়ক পথে ভারতের সাথে যে বাণিজ্য হয় যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়াতে তার ৮০ শতাংশ হয় বেনাপোল স্থলবন্দর ব্যবহার করে। বাংলাদেশ-জাপান বন্ধুত্ব সম্পর্ক বাড়াতে জাপানি এনজিও সংস্থা জায়কার অর্থায়নে ১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০২২ সালে যশোর-বেনাপোল মহাসড়ক সুরক্ষায় বেনাপোল পৌর গেট এলাকায় সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) ওয়িং স্কেল স্থাপন করেন। পরবর্তীতে ২০২৪ সালের ১৫ আগস্ট ওয়িংস্কেল পরিচালনায় ৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা চুক্তিতে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ইউডিসিকে টেন্ডার দেয় সরকার।
গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে কর্মকর্তা প্রকৌশলী ও কর্মচারীসহ স্কেল পরিচালনায় ৪২ জন কাজ করছেন। নিরাপত্তায় রয়েছে ৭ জন আনসার সদস্য। অতিরিক্ত পণ্য পরিবহনে প্রথম টনে ৫ হাজার ও দ্বিতীয় টন প্রতি ১০ হাজার টাকা জরিমানা বিধান রাখা হয়েছে। তবে স্কেলে অতিরিক্ত পণ্য শনাক্ত হলেও জরিমানা আদায় বা ওভারলোড বন্ধে কোন প্রতিরোধ মুলক পদক্ষেপ নিতে পারছেনা কর্তৃপক্ষ। এতে সরকারের বিপুল পরিমাণে অর্থ বিফলে যাচ্ছে তেমনি অতিরিক্ত পণ্য বহনে সড়ক নষ্ট হচ্ছে। পরিবহন ব্যবসায়ীরা বলছেন নওয়াপাড়া ও ভোমরা বন্দর সড়ক বাদ রেখে কেবল বেনাপোলে স্কেল চালু করলে এ রুটে ব্যবসা কমে আসবে। পার্শ্ববর্তী বন্দরগুলোতে স্কেল চালু হলে বেনাপোল এক্সেল লোড কন্ট্রোল স্টেশনটি ব্যবহার করবেন ব্যবসায়ীরা।
বেনাপোল ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি মালিক সমিতির সভাপতি আতিকুজ্জামান সনি বলেন, আমাদের পদ্মা নদীর এপারে বেনাপোল সহ আরো চারটি বন্দর রয়েছে। ভোমরা বন্দর, নওয়াপাড়া বন্দর ও মংলা বন্দর। ভোমরা বন্দর, নওয়াপাড়া বন্দর ও মংলা বন্দরে ওজন নিয়ন্ত্রণ স্কেল স্থাপন না করে বেনাপোল বন্দর সংলগ্ন সড়কে ওজন নিয়ন্ত্রণ স্কেল স্থাপন করে আমাদের সাথে বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয়েছে। সড়ক সু-রক্ষায় রক্ষায় বেনাপোল যশোর সড়কে ওন স্কেল স্থাপনকে আমরা সাধুবাদ জানাই। তবে অন্য তিনটি বন্দরে ওজন স্কেল স্থাপন করে একত্রে চারটি বন্দর সংলগ্ন সড়কে ওজন স্কেল চালু করার দাবি জানায়। শুধুমাত্র বেনাপোলে সড়কে ওজন স্কেল চালু করা করা হলে ব্যবসায়ীরা বেনাপোল বন্দর ছেড়ে অন্য বন্দরে চলে যাবে। ক্ষতিগ্রস্ত হবে বেনাপোল বন্দর। এ জন্য এ স্কেল ব্যবহার করা সম্ভব হচ্ছেনা।
বেনাপোলের ব্যবসায়ী সাজেদুর রহমান জানান, বেনাপোল যশোর সড়কের পৌর গেট এলাকায় যে ওজন নিয়ন্ত্রণ স্কেল স্থাপন করার ফলে ব্যবসায়ীদের মাঝে প্রতিবন্ধকতার সৃস্টি হয়েছে। প্রতিবেশী মংলা, ভোমরা ও নওয়াপাড়া বন্দরে কোনো ওজন নিয়ন্ত্রণ স্কেল স্থাপন করা হয়নি। বেনাপোল সড়কের ওজন স্কেল চালু করা হলে এ বন্দর দিয়ে ব্যবসা করা সম্ভব নয়। অন্য বন্দর দিয়ে ট্রাকে মাল একটু কম বা বেশি হলেও কোনো সমস্যা হবে না। তাহলে কেন আমি এ বন্দর দিয়ে মাল এনে জরিমানা দিব! পার্শ্ববর্তী অন্য বন্দর গুলিতে ওজন নিয়ন্ত্রণ স্কেল চালু করা হলে আর কোনো সমস্যা থাকবে না।
নাভারন হাইওয়ে পুলিশের ওসি রোকনুজ্জামান জানানা, বেনাপোল দেশের বৃহত্তম স্থল বন্দর। এ মহাসড়ক দিয়ে প্রতিদিন শত শত পণ্যবাহী ট্রাক যাতায়াত করে থাকে। এ বন্দরে আসা পণ্যবাহী ট্রাক গুলি বেনাপোল যশোর সড়ক ব্যবহার করে থাকেন। ট্রাক গুলিকে অতিরিক্ত পণ্য বহন করলেও কোন ওজন স্লিপ না থাকার কারণে অঅমরা তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারছি না। পণ্যবাহী ট্রাকের ওজন নিয়ন্ত্রণ করার জন্য বেনাপোল পৌর গেটে ওজন নিয়ন্ত্রণ স্কেল স্থাপন করা হয়েছে। তবে ব্যবসায়ীদের অসহযোগিতার কারণে কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ওজন নিয়ন্ত্রণ স্কেলটি চালু করা সম্ভব হচ্ছেনা। এ স্কেলটি চালু করার জন্য আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
