ঘুষ-বাণিজ্যের অভিযোগ, রংপুরের সেই উপ-পুলিশ কমিশনারকে প্রত্যাহার

রংপুর মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার মোহাম্মদ শিবলী কায়সার। ছবি: সংগৃহীত
ঘুষ-বাণিজ্য ও থানায় মামলার বাদীকে মারধরের অভিযোগ ওঠার পর রংপুর মহানগর পুলিশের উপকমিশনার মোহাম্মদ শিবলী কায়সারকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। শনিবার দুপুরে রংপুর মহানগর পুলিশ থেকে তাঁকে প্রত্যাহার করে পুলিশের সদর দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়েছে।
রংপুর মহানগর পুলিশের আরেক উপকমিশনার (অপরাধ) হাবিবুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেন। এ ছাড়া পুলিশ সদর দপ্তরের উপমহাপরিদর্শক (প্রশাসন) কাজী মো. ফজলুল করিমের স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বলা হয়েছে, রোববার শিবলী কায়সার যেন সদর দপ্তরে রিপোর্ট করেন।
গত বৃহস্পতিবার বিকেলে রংপুর মহানগর পুলিশের উপকমিশনার শিবলী কায়সারের বিরুদ্ধে ঘুষ-বাণিজ্যের অভিযোগে থানায় মামলা করতে গিয়ে মারধরের শিকার হন এক ব্যবসায়ীর প্রতিনিধি। শিবলী কায়সারের বিরুদ্ধে কর্তব্যরত কনস্টেবলের রাইফেল কেড়ে নিয়ে মামলা করতে যাওয়া ব্যক্তিকে বেধড়ক পিটুনির অভিযোগ ওঠে। নগরের কোতোয়ালি থানায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় একটি অভ্যন্তরীণ সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। ঘটনার পর থানা-পুলিশ চাঁদাবাজির অভিযোগে ভুক্তভোগী ব্যক্তির একটি মামলা নিলেও আসামির তালিকায় ওই পুলিশ কর্মকর্তাকে রাখা হয়নি।
মোহাম্মদ শিবলী কায়সার নগর পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার (অপরাধ) হিসেবে কর্মরত ছিলেন। বৃহস্পতিবার সকালে তাঁকে ‘অপরাধ’ থেকে প্রত্যাহার করে ‘ক্রাইম অ্যান্ড অপসে’ সংযুক্ত করা হয়। মামলার বাদীকে মারধর ও ঘুষ–বাণিজ্যের অভিযোগের বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলার অভিযোগে গত ১৩ নভেম্বর রংপুরের হারাগাছের ব্যবসায়ী লিপি খান ভরসার বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়। মামলার পর রংপুর মেট্রোপলিটন চেম্বারের পরিচালক অমিত বণিকের মাধ্যমে লিপি খানের কাছে ১০ লাখ টাকা ঘুষ দাবির অভিযোগ ওঠে পুলিশ কর্মকর্তা শিবলী কায়সারের বিরুদ্ধে। বিষয়টি নিয়ে ১১ মার্চ পুলিশ সদর দপ্তরে শিবলী কায়সারের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন লিপি খান।
অভিযোগের সঙ্গে অমিত বণিকের সঙ্গে ঘুষ দাবির কথোপকথনের কয়েকটি অডিও রেকর্ড জমা দেন লিপি খান। এর পর বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে অমিত বণিককে থানায় ডেকে নেয় কোতোয়ালি থানার পুলিশ। এদিকে বৃহস্পতিবার বিকেল চারটার দিকে লিপি খানের পক্ষে কোতোয়ালি থানায় মামলা করতে যান তাঁর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক পলাশ হাসান (২৭)। ওই দিন বিকেল পাঁচটার দিকে থানায় যান উপপুলিশ কমিশনার শিবলী কায়সার। তখন থানায় আরেক উপপুলিশ কমিশনার (অপরাধ) হাবিবুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রের ভাষ্য, শিবলী কায়সার থানায় ঢুকেই পলাশ হাসানের ওপর চড়াও হন এবং তাঁকে বেধড়ক মারধর করেন। একপর্যায়ে কর্তব্যরত কনস্টেবলের রাইফেল কেড়ে নিয়ে তাঁকে (পলাশ) গুলি করতে উদ্যত হন। পরে চাঁদাবাজির অভিযোগে থানায় মামলা নেওয়া হলেও এতে আসামি করা হয় শুধু অমিত বণিককে। মামলায় আগে থেকেই থানা হেফাজতে থাকা অমিত বণিককে গ্রেপ্তার দেখিয়ে গতকাল শুক্রবার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
তদন্ত সূত্রগুলো জানায়, শিবলী কায়সারের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় তাকে হেডকোয়ার্টার্সে রিপোর্ট করতে বলা হয়েছে। এর আগে, গত বৃহস্পতিবার (১৩মার্চ) বিকেলে শিবলী কায়সারকে উপ-পুলিশ কমিশনার (অপরাধ) থেকে বদলি করে উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিবি) পদে সংযুক্ত করা হয়।
তদন্ত সূত্রগুলো আরও জানায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় বিএনপি, জামায়াত এবং শিক্ষার্থীদের নামে হওয়া মামলাগুলো ফাইনাল রিপোর্ট দেয়ার নির্দেশ দিলেও ওই কর্মকর্তা তা না দিয়ে কালক্ষেপণ করেন। সেই সময়কার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বার বার তাকে বললেও তিনি অপেশাদার আচরণ করেন।
এ বিষয়ে রংপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. মজিদ আলী জানান, থানার ঘটনার সাধারণ ডায়েরি হেডকোয়ার্টার্সে পাঠানো হয়েছে। এরপর তাকে হেড কোয়ার্টার্সে রিপোর্ট করতে বলা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়টি সদর দফতর বলতে পারবে।
তিনি আরও জানান, লিপি খানকে গ্রেফতারে অভিযান পরিচালনা করছে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হত্যাচেষ্টা মামলা ছাড়াও নিজের নাম মামলা থেকে বাদ দিতে অর্থ লেনদেনের যোগসাজেশের অভিযোগ রয়েছে।
