কেজি দরে বিক্রি হওয়া ভাস্কর্যটি মুক্তিযোদ্ধার নয়, আওয়ামী লীগের অপপ্রচার
ছবি: সংগৃহীত
রাজশাহীতে একটি ভাস্কর্য ভাঙারির দোকানে বিক্রি হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। তবে ভাস্কর্যটি মুক্তিযোদ্ধার নয়, বরং এটি পাক আর্মির আদলে হওয়ায় নিজেই এটি বিক্রি করে দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন ভাস্কর অধ্যাপক ড. আমিরুল মোমেনীন চৌধুরী ওরফে জোসি।
রোববার (২৪ নভেম্বর) গণমাধ্যমের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে খোলামেলা কথা বলেন তিনি।
তিনি অভিযোগ করেন, ‘ঘটনাটিকে বিকৃত করে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে মহান মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কোনো বিতর্ক নেই। তবে এটিকে একটি মহল রাজনৈতিক ইস্যু বানানোর অপচেষ্টা করছে।’
তিনি বলেন, ভাস্কর্যটির ঠিকমতো রূপ দেওয়া যায়নি। তাই এটি কাজে লাগানোর সুযোগ নেই। তাই ওয়েস্টেজ (অপচয়) হিসেবে আমি বিক্রি করে দিয়েছিলাম। রোববার আবার ফেরত নিয়ে এসেছি।
কিন্তু এই প্রচারণাকে অসত্য ও রাজনৈতিক দুরভিসন্ধি বলে দাবি করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাফিকস ডিজাইন, কারুশিল্প ও শিল্পকলার ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. আমিরুল মোমেনীন চৌধুরী। তিনি জানিয়েছেন, এক যুগ আগে নওগাঁর জেলা পরিষদের চাহিদার প্রেক্ষিতে ঠিকাদারের কথায় ভাস্কর্যটি নির্মাণ করেছিলেন। কিন্তু শর্ত না মেনে নির্মাণ করায় তারা এটি গ্রহণ করেনি। পরে তাদের রড-সিমেন্ট দিয়ে আরেকটি ভাস্কর্য নির্মাণ করে দেন। এরপর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারু অনুষদের পেছনে মেহেরচণ্ডী মধ্যপাড়ায় তার নিজের স্টুডিওতে রাখা ছিল এটি। নিজের জায়গাতেই এ স্টুডিওটি। এখানে নানা শিল্পকর্ম নির্মাণ করেন ড. আমিরুল মোমেনীন।
ড. আমিরুল মোমেনীন আরও বলেন, মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের ভাস্কর্যটিও কর্তৃপক্ষ পছন্দ করেনি। এ জন্য হস্তান্তর করা যায়নি। বেশ কয়েক বছর ধরে এখানে রাখা আছে। কিন্তু এখন স্টুডিওর এই জায়গাটি বিক্রির চেষ্টা করছি। তাই স্টুডিওর সব ওয়েস্টেজ বিক্রি করে দিচ্ছি। কয়েক দিন আগে কয়েকজন এসে বলল, মুক্তিযোদ্ধার ভাস্কর্যটি কিনতে চায়। তাদের কাছে ভাঙারি লোহার মতো কেজি দরে নামে মাত্র টাকায় বিক্রি করেছিলাম। আমি তখন জানতাম না তারা ভাঙারির দোকানের জন্য কিনছে। পরে পত্র-পত্রিকায় দেখেছি এ ঘটনা। তারা আসল ঘটনা না জেনেই এগুলো লিখেছে। আমি কখনোই কাউকে বলিনি, বর্তমান পরিস্থিতিতে মুক্তিযোদ্ধার ভাস্কর্য বিক্রি করা বা রাখা যাবে না। বর্তমান সরকার তো মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী নয়। আর কোথাও এ ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি। কিন্তু একটি মহল অপপ্রচার চালিয়ে এ ঘটনাকে রাজনৈতিক ইস্যু বানানোর চেষ্টা করছে। আমি এটার প্রতিবাদ করছি।
উল্লেখ্য, গেল ৫ আগস্টের পর বর্তমান প্রেক্ষাপটে মুক্তিযোদ্ধার ভাস্কর্যটি কোথাও বিক্রি করা সম্ভব নয়, তাই ভাঙারির দোকানে বিক্রি করে দিয়েছেন ভাস্কর ড. আমিরুল মোমেনীন চৌধুরী এমন সংবাদে গেল কয়েক দিন ধরেই গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এ ছবিটি পোস্ট করে কঠোর সমালোচনা করা হয়েছে আওয়ামী লীগের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ থেকে। ছবিটি শেয়ার করে তীর্যক কবিতা লিখে নিজের ফেসবুকে শেয়ার করেছেন বিতর্কিত লেখক তসলিমা নাসরিনও।