নিয়ামতপুর, পোরশা ও সাপাহারে ৪৬ প্রার্থীর ২৫ জনেই জামানত হারালেন
ছবি: ঢাকাপ্রকাশ
ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে গত মঙ্গলবার নওগাঁর তিন উপজেলায় চেয়ারম্যানসহ তিনটি পদে মোট প্রার্থী ছিলেন ৪৬ জন। এর মধ্যে ২৫ প্রার্থীই জামানত হারাচ্ছেন। গত মঙ্গলবার ভোটগ্রহণ শেষে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে ঘোষিত ফলাফল বিশ্লেষণ করে এ চিত্র পাওয়া গেছে।
নির্বাচনী বিধি অনুযায়ী, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদের জন্য একজন প্রার্থীকে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অনুকূলে ১ লাখ টাকা জমা দিতে হয়। এছাড়া ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদের জন্য ৭৫ হাজার টাকা জমা দিতে হয়। নির্বাচনে কোনো নির্বাচনী এলাকার প্রদত্ত ভোটের ১৫ শতাংশ ভোট যদি কোনো প্রার্থী না পান, তাহলে নির্বাচন কমিশনে তাঁর জামা দেওয়া টাকা (জামানত) বাজেয়াপ্ত হবে।
রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, পোরশা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যানসহ তিনটি পদে মোট ২০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এর মধ্যে ১৪ জন প্রার্থীই জামানত হারাচ্ছেন। পোরশা উপজেলায় মোট ভোটার ১ লাখ ৮ হাজার ১৭০ জন। চেয়ারম্যান পদে মোট চারজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। চেয়ারম্যান পদে ৪১টি কেন্দ্রে ভোট পড়েছে ৬৯ হাজার ৬৯৪টি। প্রদত্ত ভোটের ১৫ শতাংশ হচ্ছে ১০ হাজার ৪৫৪ ভোট, যা পাননি একজন প্রার্থী। ফলে ওই প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হতে যাচ্ছে। জামানত বাজেয়াপ্ত হওয়া ওই প্রার্থী হলেন, পোরশা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান কাজীবুল ইসলাম। তিনি ভোট পেয়েছেন ৮৯৫টি।
পোরশা উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শাহ মঞ্জুর মোর্শেদ চৌধুরী ২৬ হাজার ২০৮ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন পেয়েছেন ২২ হাজার ৪৬৭ ভোট। আরেক প্রার্থী পোরশা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ারুল ইসলাম পেয়েছেন ১৮ হাজার ৬০৮ ভোট।
পোরশায় ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এর মধ্যে বিজয়ী প্রার্থী ছাড়া বাকি ৯ জনই জামানত হারাচ্ছেন। ভাইস চেয়ারম্যান পদে মোট ভোট পড়েছে ৬৯ হাজার ৫৭৩টি। প্রদত্ত ভোটের ১৫ শতাংশ হচ্ছে ১০ হাজার ৪৩৫ ভোট। এই পরিমান ভোট পাননি ৯ প্রার্থী। এখানে বই প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে মাহমুদুল হাসান ১৬ হাজার ১৯৮ ভোট পেয়ে ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।
মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ছয়জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এর মধ্যে চারজন প্রার্থীই জামানত হারাচ্ছেন। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ভোট পড়েছে ৬৯ হাজার ৫২৬টি। প্রদত্ত ভোটের ১৫ শতাংশ হচ্ছে ১০ হাজার ৪২৮। এই পরিমান ভোট পাননি চারজন প্রার্থী। এখানে হাঁস প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে মমতাজ বেগম ২৯ হাজার ৯২৮ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন।
নির্বাচনের ঘোষিত ফলাফল বিশ্লেষণ করে জানা যায়, নিয়ামতপুর উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ছয়জন প্রার্থী ছিলেন। এর মধ্যে দুইজন প্রার্থী জামানত হারাচ্ছেন। এই উপজেলায় মোট ভোটার ২ লাখ ১১ হাজার ৭৫৬ জন। এখানে চেয়ারম্যান পদে মোট ভোট পড়েছে ১ লাখ ৫ হাজার ১২৭ ভোট। প্রদত্ত ভোটের ১৫ শতাংশ হচ্ছে ১৫ হাজার ৭৬৮, যা পাননি দুই প্রার্থী। তাঁরা হলেন, আবেদ হোসেন মিলন ও সোহরাব হোসেন। আবেদ হোসেন মিলন নওগাঁ জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য। সোহরাব হোসেনের কোনো দলীয় পরিচয় নেই। এখানে ৩৯ হাজার ৬৫৪ ভোট পেয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন ফরিদ আহমেদ। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ পেয়েছেন ২৩ হাজার ১৩৬ ভোট।
নিয়ামতপুরে ভাইস চেয়ারম্যান পদে পাঁচজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এর মধ্যে তিন প্রার্থীই জামানত হারাচ্ছেন। ভাইস চেয়ারম্যান পদে ভোট পড়েছে ১ লাখ ৫ হাজার ১৭ ভোট। প্রদত্ত ভোটের ১৫ শতাংশ হচ্ছে ১৫ হাজার ৭৫২ ভোট। এই পরিমান ভোট পাননি তিন প্রার্থী। এখানে রায়হান কবির চশমা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে ৪১ হাজার ২৪১ ভোট পেয়ে ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।
মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে চারজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এর মধ্যে জামানত হারাচ্ছেন এক প্রার্থী। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে মোট ভোট পড়েছে ১ লাখ ৪ হাজার ৯৭৪। এর ১৫ শতাংশ হচ্ছে ১৫ হাজার ৭৪৬ ভোট। এই পরিমান ভোট পাননি একজন প্রার্থী। এখানে হাঁস প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে নাজমিন আরা খাতুন ৪৩ হাজার ৪৯৯ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন।
সাপাহার উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে তিন প্রার্থীর মধ্যে একজন প্রার্থী জামানত হারাচ্ছেন। সাপাহারে মোট ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ৩৭ হাজার ৪৬৯। এখানে চেয়ারম্যান পদে ভোট পড়েছে ৭৭ হাজার ৪৮৩ ভোট। এর ১৫ শতাংশ হচ্ছে ১১ হাজার ৬২২ ভোট, যান পাননি একজন প্রার্থী। জামানত হারানো ওই চেয়ারম্যান প্রার্থীর নাম নার্গিস সরকার। তিনি উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। এখানে আনারস প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে শাহজাহান হোসেন মন্ডল ৩৯ হাজার ৯৫২ ভোট পেয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।
সাপাহারে ভাইস চেয়ারম্যান পদে চারজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এর মধ্যে দুইজন প্রার্থী জামানত হারাচ্ছেন। এখানে ভাইস চেয়ারম্যান পদে মোট ভোট পড়েছে ৭৭ হাজার ৪৮৩ ভোট। এর ১৫ শতাংশ ১১ হাজার ১৩ ভোট। এই পরিমান ভোট পানননি দুই প্রার্থী। এখানে নইমুদ্দীন টিউবওয়েল প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে ৪২ হাজার ২১ ভোট পেয়ে ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।
মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে চার প্রার্থীর মধ্যে দুই প্রার্থী জামানত হারাচ্ছেন। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ভোট পড়েছে ৭৭ হাজার ৪৮৩ ভোট। এর ১৫ শতাংশ ১১ হাজার ১৩ ভোট, যা পাননি দুই প্রার্থী। এখানে কলস প্রতীক নিয়ে ৪০ হাজার ৯৯২ ভোট পেয়ে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন মোছা. ফাহিমা।