নওগাঁয় ধান ব্যবসায়ী ও কৃষকদের ৩৫ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ
ভুক্তভোগীদের মানববন্ধন। ছবি: ঢাকাপ্রকাশ
নওগাঁর মহাদেবপুরে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ওসমান এগ্রো ইন্ডাষ্ট্রিজ (প্রাঃ) লিমিটেডের চেয়ারম্যান ওসমান গণির বিরুদ্ধে ধান ব্যবসায়ী ও কৃষকদের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। কৌশল হিসেবে তার প্রতিষ্ঠানটি একটি কোম্পানিকে ভাড়া দিয়ে পরিবারসহ ঢাকায় অবস্থান করছেন। এদিকে ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীরা টাকা না পেয়ে হন্য হয়ে ঘুরছেন।
বাধ্য হয়ে ভুক্তভোগী পাওনাদাররা রবিবার (১২ মে) বেলা সাড়ে ১১টায় মহাদেবপুর উপজেলার মডেল স্কুল মোড়ে ‘ভুক্তভোগী সকল পাওনাদার গং’ এর ব্যানারে মানববন্ধন করেছেন। এসময় এ বিষয়ে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন ভুক্তভোগীরা।
মানববন্ধনে আড়ৎদার আবু আহসান হাবিব এর সভাপতিত্বে আড়ৎদার সামিউল আলম, ইমতিয়াজ হোসেন সরদার, মাসুদ মোল্লা সহ ১০-১২ জন ব্যবসায়ি বক্তব্য রাখেন। মানববন্ধনে প্রায় দুইশতাধিক ব্যবসায়ী ও কৃষকরা উপস্থিত ছিলেন।
জানা গেছে, জেলার মহাদেবপুর উপজেলার নওগাঁ-মহাদেবপুর সড়কের আখেড়া এলাকায় ওসমান গণি গত প্রায় ৪০ বছর আগে চালকল গড়ে তুলে ব্যবসা শুরু করেন। পর্যায়ক্রমে চালকলটি অটোমেটিকে রুপান্তর করে ওসমান এগ্রো ইন্ডাষ্ট্রিজ (প্রাঃ) লিমিটেড নাম দেন। যেখানে কয়েক একর জায়গার ওপর পাঁচটি ইউনিট গড়ে তুলেন। যা টাকার অঙ্কে কয়েক কোটি টাকার সম্পদ। ধানের আড়ৎদারদের কাছ থেকে নগদ ও বাঁকীতে ধান কিনে চালকল পরিচালনা করা হতো। এতে ব্যবসার সুবাদে আড়ৎদারদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে উঠে। এভাবে জেলা ও জেলার বাহিরের প্রায় ২৬০ জন ধান ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নগদ ও বাঁকীতে ধান কিনতেন তিনি।
এক পর্যায়ে প্রায় ৩৫ কোটি টাকা ধান ব্যবসায়ীদের কাছে বকেয়া রাখেন। গত ৩-৪ মাস থেকে ধান ব্যবসায়ীদের সাথে ওসমানের দুরুত্ব বাড়তে থাকে এবং টাকা আত্মসাতের চেষ্টা করা হচ্ছে। ওসমান গণি পরিবারসহ ঢাকায় অবস্থান করতে থাকেন। গোপনে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটি একটি কোম্পানির কাছে ভাড়া দিয়ে দেন। এরপর ধান ব্যবসায়ীরা বুঝতে পারে ওসমান লাপাত্তা হয়ে যাচ্ছে। গত দেড়মাস থেকে ওই প্রতিষ্ঠানটি অন্য একটি কোম্পানির দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। কৌশল হিসেবে ওসমান গণি ব্যবসায় লোকসান দেখিয়ে নিজেকে দেউলিয়া ঘোষণা করার পরিকল্পনা করছেন।
উপজেলার মাতাজি হাট এলাকার মোল্লা ট্রেডার্স এর স্বত্ত্বাধিকার সামিউল আলম বলেন, গত কয়েক বছর থেকে ওসমান গণিকে ধান দিয়ে আসছি। নগদ ও বাঁকীতে ধান দিতাম। এভাবে প্রায় ১ কোটি ৩৯ লাখ টাকা পাওনা রয়েছি। পাওনা টাকা চাওয়া হলে বিভিন্ন ভাবে তালবাহানা শুরু করেছে। ঢাকায় বাড়ি-গাড়ি করে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে আলিসান জীবন যাপন করছেন। সম্পদগুলো ছেলে ও মেয়ে-জামাইয়ের নামে লিখে দিয়েছে। এখন নিজেকে দেউলিয়া ঘোষণা করছে। অথচ তার কোটি কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে। আমার মতো ২৬০ জন ব্যবসায়ী প্রায় ৩৫ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। আমরা এখন পথে পথে ঘুরছি।
জেলার ধামইরহাট উপজেলার মেসার্স বেলাল ট্রেডার্স এর স্বত্ত্বাধিকারী আবু আহসান হাবিব। আবু আহসান হাবিব এবং বেলাল ইসলাম দুই ভাই যৌথভাবে ধানের ব্যবসা করেন। আবু আহসান হাবিব বলেন, ওসমান গণির সাথে প্রায় ১৫ বছর থেকে ব্যবসা করে আসছি। ব্যবসা চলমান ছিল। সবশেষ আমন মৌসুম থেকে লেনদেন করা হয়নি। কিন্তু সপ্তাহে ৫০ হাজার করে টাকা দিতো। সবশেষ ফেরুয়ারিতে ১ লাখ টাকা দিয়েছে। লেনদেনের সুবাদে প্রায় ২ কোটি ৮৫ লাখ টাকা বকেয়া পড়ে যায়। পাওনা টাকা দিচ্ছি দিবো বলে সময়ক্ষেপন করছিল। এখন লাপাত্তা হয়ে গেছে। আমরা ছোট ব্যবসায়ী। পুঁজি হারিয়ে এখন পথে বসার উপক্রম হয়েছি। পাওনাদার বা কৃষকের কাছ থেকে ধান নিয়েছিলাম তারা এখন টাকা নেয়ার জন্য চাপ দিচ্ছেন। পাওনাদারদের ভয়ে এখন বাড়ি থেকে পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে।
দিনাজপুর জেলার ডুগডুগিহাট এলাকার মোল্লা ট্রেডার্স এর স্বত্ত্বাধিকারী মাসুদ মোল্লা বলেন, গত ৫ বছর থেকে ওসমানের চালকলে ধান দিয়ে আসছি। তবে গত ৩ বছর থেকে ধান দেয়ার পর টাকা বকেয়া রাখা হচ্ছে। এভাবে প্রায় আমার ৭৮ লাখ টাকা বকেয়া রাখে। বকেয়া টাকা পরিশোধ করতে অনেকবার তাগাদা দিয়েছি। কিন্তু দিচ্ছি দিবো বলে এখন লাপাত্তা। ফোন করা হলে ওসমান ফোন ধরে না। কিন্তু আমার কাছ থেকে অনেক কৃষক টাকা পাওনা রয়েছে। তারা এখন চাপ দিচ্ছে। দুশ্চিন্তার কারণে ইতোমধ্যে ২ বার স্টোক করেছি। বাবাও অসুস্থ। ৭ বিঘা জমি বিক্রি করে কিছুটা দেনা পরিশোধ করেছি। এদিকে ব্যাংকের ৭০ লাখ টাকা ঋণ এখন কোটি টাকায় ঠেঁকেছে। আমরা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এখন পথে বসার উপক্রম। বকেয়া টাকা দ্রুত ফেরত পেতে সকলের সহযোগীতা কামনা করছি।
এ বিষয়ে মহাদেবপুর উপজেলার ওসমান এগ্রো ইন্ডাষ্ট্রিজ (প্রাঃ) লিমিটেড এর চেয়ারম্যান ওসমান গণি বলেন, প্রায় ৩৮ বছর থেকে ব্যবসা করছি। ব্যবসার সুবাদে অনেক টাকা লোকসান হয়েছে। এছাড়া ব্যবসায়ীদের কাছেও আমার দেনা রয়েছে। আমার কাছে নগদ টাকা নাই। পাওনাদারদের বলেছি যে সম্পদ আছে তা বিক্রি করে দেনা পরিশোধ করা হবে।
তিনি আরও বলেন, আমি গত ৩১ জানুয়ারি নিজেকে দেউলিয়া ঘোষণা করার জন্য আদালতে একটি আবেদন করেছি। তবে আমি আমার প্রতিষ্ঠানটি ভাড়া দিয়েছি।