অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ: অধ্যক্ষের অপসারণ চান শিক্ষক-কর্মচারীরা
লোকমান ফকির মহিলা ডিগ্রি কলেজ ও অধ্যক্ষ মো. হাছান আলী। ছবি: ঢাকাপ্রকাশ
টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে লোকমান ফকির মহিলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ হাছান আলীর বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে তার অপসারণ চেয়ে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।
এ ঘটনায় রবিবার (১২ মে) সকালে ওই কলেজের ২৯ জন শিক্ষক এবং ১১ জন কর্মচারীদের স্বাক্ষরিত অভিযোগের একটি অনুলিপি জেলা প্রশাসক বরাবর জমা দেওয়া হয়।
এরআগে গত বৃহস্পতিবার ৯ মে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ও লোকমান ফকির মহিলা ডিগ্রি কলেজের সভাপতি বরাবর অপসারণের ওই চিঠি দেন শিক্ষক ও কর্মচারীরা।
লিখিত চিঠিতে বলা হয়েছে, লোকমান ফকির মহিলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ হাসান আলী দায়িত্বে থাকাকালীন সময়ে কলেজের গাছ বিক্রি, ভর্তি ও ফরম পূরণের টাকা আত্মসাৎ, অবৈধ বাড়ি ভাড়া, বিএমটি (বিএম) শাখার টাকা আত্মসাৎ, শিক্ষক নিয়োগে ঘুষ গ্রহণ, টাইমস্কেলের জন্য বাড়তি টাকা আদায় ও ব্যবস্থাপনা অনিয়মের অভিযোগের সত্যতা পায় অডিট কমিটি। এরপর তদন্ত কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে সম্প্রতি গভানির্ং বডি অধ্যক্ষ হাসান আলীকে ৬ মাসের জন্য বাধ্যতামূলক ছুটি প্রদান করা হয়।
সে সময় ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে কলেজের উপাধ্যক্ষ গোলাম রব্বানীকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালনের জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়। এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অধ্যক্ষ হাসান আলী প্রতিকার চেয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলরের কাছে লিখিত আবেদন করে। অধ্যক্ষের আবেদনের ভিত্তিতে গত ২৩ এপ্রিল জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ পরিদর্শক ফাহিমা সুলতানা স্বাক্ষরিত চিঠিতে বাধ্যতামূলক চিঠি বাতিল করে হাসান আলীকে অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব দেওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়।
এদিকে- লোকমান ফকির মহিলা ডিগ্রি কলেজ সূত্রে জানা যায়, কলেজের পরিচালনা পর্ষদ পূর্ণাঙ্গ কমিটি না থাকায় অধ্যক্ষ দায়িত্ব পালনে জটিলতা দেখা দেয়। এতে কলেজের এডহক (আহবায়ক) কমিটি ওই অনিয়মের সত্যতা পাওয়া অধ্যক্ষকে দায়িত্ব না দেওয়ার জন্য ও কলেজকে দুর্নীতি মুক্ত রাখার জন্য এবং অধ্যক্ষ হাসান আলীর অপসারণ চেয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর, জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দেয় শিক্ষক ও কর্মচারীরা।
কলেজের একাধিক শিক্ষকরা জানান, হাসান আলী কলেজে যোগদানের পর থেকেই বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতি করে আসছিল। ইচ্ছেমতো টাকা আত্মসাৎ করেছেন তিনি। তার দুর্নীতির বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। সেই গঠিত তদন্ত কমিটিও তার বিরুদ্ধে ওঠা বিভিন্ন খাতের টাকা আত্মসাৎ, গাছ কর্তনের টাকাসহ বিভিন্ন অনিয়মের সত্যতা পায়। এই নিয়ে দুই বার তাকে লিখিত জবাব দিতে নোটিশও দেওয়া হয়েছিল। পরে চলতি বছরের গত ২২ জানুয়ারি অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রমাণ সত্যতা পাওয়ায় গভর্নিং বডি অধ্যক্ষ হাসান আলীকে বাধ্যতামূলক ৬ মাসের ছুটিতে পাঠায়। কিন্তু ওই দুর্নীতিগ্রস্ত অধ্যক্ষ মো. হাসান আলী কলেজে পুনরায় যোগদান করতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন।
এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির ব্যাপারে জানতে বক্তব্যের জন্য লোকমান ফকির মহিলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মো. হাসান আলীকে একাধিকবার মোবাইল ফোন করলে তিনি রিসিভ করেনি।
লোকমান ফকির মহিলা ডিগ্রি কলেজের (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যক্ষ গোলাম রব্বানী রতন বলেন, যেহেতু পূর্ণাঙ্গ গভর্নিং বডি অধ্যক্ষকে তার অনিয়ম ও দুর্নীতির দায়ে বাধ্যতামূলক ছুটি প্রদান করে গেছে, সেহেতু এডহক (আহ্বায়ক) কমিটি নয়, পূর্ণাঙ্গ গভর্নিং বডি এসেই আবার এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ও লোকমান ফকির মহিলা ডিগ্রি কলেজের সভাপতি মামুনুর রশীদ জানান, বিষয়টি আইনানুগভাবে নিষ্পত্তি করা হবে।