ঈদের আনন্দে যমুনার পাড়ে বিনোদন প্রেমীদের ঢল
বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্বের দক্ষিণে গরিলাবাড়ী পাথরঘাট এলাকায় দর্শনার্থীদের ঢল। ছবি: ঢাকাপ্রকাশ
যান্ত্রিক জীবনে কর্মব্যস্ততার ফাঁকে পরিবার-পরিজন ও প্রিয় মানুষকে সাথে নিয়ে ঈদ-উল ফিতর আনন্দকে উপভোগ করতে মেতেছে বিনোদন প্রেমীরা। এ উৎসবকে কেন্দ্র করে টাঙ্গাইলের অন্যতম বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব পাড়ে যমুনা নদীর তীরবর্তী গরিলাবাড়ী এলাকায় পাথরঘাটে গড়ে উঠেছে বিনোদন কেন্দ্র। যমুনা নদীর উপর নির্মিত বঙ্গবন্ধু সেতু ও নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে রেল সেতু দেখতে ছুটে আসছেন টাঙ্গাইলসহ দেশের নানা প্রান্তের বিনোদন প্রেমী মানুষ। এই বিনোদন কেন্দ্রে সন্ধ্যায় সূর্যাস্ত দেখা মেলায় প্রকৃতির পরিবেশ হয়ে ওঠে মনোরম।
শুধু তাই নয়, বঙ্গবন্ধু সেতু ছাড়াও রয়েছে আনন্দ পার্ক, বঙ্গবন্ধু সেতু রিসোর্ট, জাদুঘর, শিশু পার্ক, বঙ্গবন্ধু স্মৃতি ম্যুরাল, বঙ্গবন্ধু সেনানিবাস কপি হাউজ ও বিপণী-বিতান মার্কেট, সুইমিংপুল, হরিণ দেখার দৃশ্য, বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব গোল চত্বর এবং ঔষধি গাছের বাগান। দর্শনার্থীদের জন্য রয়েছে নৌকা বা ছোট ট্রলারযোগে যমুনা নদী পথে সেতু দেখার ব্যবস্থা। এদিকে, ঈদকে কেন্দ্র করে পাথরঘাটে অর্ধশত নৌকা সারিবদ্ধভাবে মাঝিরা সাজিয়ে রেখেছেন দর্শনার্থীদের জন্য। এখানে খেললা দোকানও ফুসকাসহ ফাস্ট ফুড নানা রকম দোকানপাট গড়ে উঠেছে।
ঈদের প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিন বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্বপাড়ের পাথরঘাট এলাকায় দেখা যায়- যমুনার পাড়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে সূর্যাস্ত দেখছেন, কেউ তাদের পছন্দের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে বেড়াতে আসেন। এখানে নৌকা বা ট্রলার দিয়ে ঘুরতে জনপ্রতি ৫০ টাকা দিয়ে বঙ্গবন্ধু সেতুকে দেখছেন খুব কাছ থেকে। এছাড়াও পাশেই নির্মাণাধীন রেল সেতুর কাজ দেখছেন। অনেকেই শিশুদের জন্য বিভিন্ন খেলনা কিনে দিচ্ছেন। আবার কেউ কেউ কেনাকাটাও করছেন। এতে করে বিকালে ব্যাপক মানুষের উপচে পড়া ঢল নেমে যায়।
গাজীপুরের চন্দ্রা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্বপাড়ে ঘুরতে আসা জান্নাতুল আক্তার, কলি ইসলাম বলেন, ‘সারা বছর আমরা কর্ম ব্যস্ততা ও সংসার নিয়ে থাকি। ঈদের দিন অন্যদিনগুলো থেকে আমাদের কাছে বিশেষ একটি দিন। তাই ঈদের আনন্দ পরিবারের সাথে উপভোগ করতে বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্বপাড়ে আসছি। এখানে হাজার হাজার মানুষের সমাগম দেখা যাচ্ছে। সত্যিই খুব ভাল লাগছে এখানে এসে। প্রতি উৎসবেই ঘুরতে আসব এখানে। তাছাড়া এই বিনোদন কেন্দ্র কম খরচে বিভিন্ন স্পটও ঘুরে দেখা যাচ্ছে। পরিবেশটাও বেশ মনোরম।
বগুড়ার শেরপুর থেকে আসা ব্যাংক কর্মকর্তা রানা মন্ডল বলেন, এরআগে সেতু দেখতে পরিবার নিয়ে আসা হয়নি। এবার যেহেতু লম্বা ছুটি পেয়েছি তাই ঈদ উপলক্ষে ঘুরতে এসেছি। পরিবারের লোকজন এই প্রথম বঙ্গবন্ধু সেতু সরাসরি দেখতে পেল। এখানে এসে খুব ভাল লাগছে। বাচ্চারাও অনেক আনন্দ উল্লাস করছে এখানে আসতে পেরে। যমুনার তীরে এই জায়গাটি যেহেতু বিনোদন বা পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত লাভ পেয়েছে তাই সরকারের উচিত আরও উন্নত ব্যবস্থা করা। এতে করে আরও লোকজনের সমাগত হবে।
স্থানীয় বাসিন্দা ও শিক্ষক হাসান মাহমুদ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণ হওয়ার পর থেকে এ সেতু দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন ছুটে আসে। বর্তমানে আরেকটি যুক্ত হয়েছে সেটি হলো নির্মাণাধীন রেল সেতু। টাঙ্গাইলে তেমন কোনো বিনোদন কেন্দ্র না থাকায় বঙ্গবন্ধু সেতু এলাকাকে বেছে নেন বিনোদন প্রেমীরা। তবে, বিনোদন কেন্দ্রের মান তেমনটা উন্নত না। সরকারিভাবে উদ্যোগ নিলে এখানে দেশের বৃহত্তম বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠতে পারে। এতে করে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হতে পারবে সরকার ও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।’
বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব নৌ ফাঁড়ির এএসআই শাহ্ আলম বলেন, দর্শনার্থীদের নিরাপত্তায় গত ঈদের মতো এ ঈদেও বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া স্থানীয় ও দূর-দূরান্ত থেকে আসা সাধারণ দর্শনার্থীসহ রাজনীতিবিদ দেশের বিশিষ্টদের নিরাপত্তার ব্যাপারে নৌ পুলিশ সতর্ক রয়েছে। সে লক্ষ্যে আমাদের পুলিশ দুইটি টিমের সদস্যরা সার্বক্ষণিক কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়া ঘুরতে আসা কোনো দর্শনার্থী এখন পর্যন্ত কোন অপ্রীতিকর বা হয়রানিমূলক অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে তাৎক্ষণিক তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।