ধর্ষণ মামলার আসামীকে গ্রেফতার করছে না পুলিশ, লজ্জায় দেশে আসেছে না স্বামী
ছবি: সংগৃহীত
নাটোর শহরের প্রবাসীর স্ত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনার ২ মাস পার হলেও এখন পর্যন্ত কোন আসামীকে গ্রেফতার করেনি পুলিশ। ধর্ষণের স্বিকার ওই নারীর অভিযোগ টাকার বিনিময়ে আসামিরা তাকে এবং তার স্বজনদেরকে নানাভাবে হুমকি ধামকি দিয়ে আসছে। এ অবস্থায় দুই বাচ্চা নিয়ে বিপদে জীবন-যাপন করছেন ওই নারী।
শনিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) সকালে নাটোর শহরের একটি রেস্তোরাঁয় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব বলেন গত ১৮ ডিসেম্বরে নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার বাঁশিলা গ্রামে সংঘবদ্ধধর্ষণের শিকার প্রবাসীর স্ত্রী ।
ভুক্তভোগী প্রবাসীর স্ত্রী বলেন, ‘কৌশলে ঘরের দরজা খুলে, আমার গলায় ছুরি ধরে তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে ওরা। মামলা করেছি ২ মাস হয়ে গেলেও পুলিশ আসামিদের কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারে না। তারা প্রভাবশালী হওয়ায় গ্রেপ্তার হয় না। এ লজ্জায় স্বামী আমার দেশে আসে না। দুটা বাচ্চা নিয়ে খুব বিপদে মধ্যে আছি।’
তিনি বলেন, একজন নারীর জন্য তার মান-সম্মান সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সম্মান না থাকলে তার বেঁচে থাকা মূল্যহীন হয়ে যায়। আমার মত একজন বিবাহিত নারীর জন্য এই বিষয়টা আরও দুঃখজনক। আমি সর্বস্ব হারিয়ে আজ অসহায়। এ মুহূর্তে শুধু বেঁচে আছি, আমার ওপর যারা নির্যাতন করেছে তাদের উপযুক্ত বিচারের আশায়। তা না পেলে আমার বেঁচে থাকার অর্থ থাকবে না।
ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে প্রবাসীর স্ত্রী জানান, তার স্বামী জীবিকার প্রয়োজনে দীর্ঘ ছয় বছর ধরে বিদেশে অবস্থান করছে। তিনি (প্রবাসীর স্ত্রী) গত ১৮ ডিসেম্বর রাত ১১টার সময় নিজ বাড়িতে শয়নকক্ষের দরজা বন্ধ করে ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় একই গ্রামের তুহিন আলী (২২), ওসমান আলী (৪৫), জীবন (২৪) ও শুভ প্রামাণিক কৌশলে দরজা খুলে তার ঘরে ঢোকে। পরে হত্যার হুমকি দিয়ে মুখ চেপে ঘর থেকে বের করে অন্য আসামিদের সহযোগিতায় আসামি তুহিন তাকে ধর্ষণ করে। এ ঘটনায় পরদিন ১৯ ডিসেম্বর তারিখে আসামিদের বিরুদ্ধে ভুক্তভোগী তিনি (প্রবাসীর স্ত্রী) নিজে বাদী হয়ে নলডাঙ্গা থানায় মামলা করেন।
প্রবাসীর স্ত্রী বলেন, আমার মামলা করার দুই মাস অতিবাহিত হচ্ছে অথচ পুলিশসহ আইনশৃঙ্ক্ষলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা আমার মামলার আসামিদের কাউকেই গ্রেপ্তার করেনি। তারা নিজেরাও আদালতে আত্মসমর্পণ করেনি। এই সুযোগে আসামিরা সংশ্লিষ্ট ডাক্তার-পুলিশ কর্মকর্তাদেরকে ম্যানেজ করে মামলাটি তাদের পক্ষে নেওয়ার চেষ্টা করছে। আসামিরা আমাকে ও আমার স্বজনদেরকে নানাভাবে হুমকি ধামকি দিচ্ছে।
আসামিরা অনেক প্রভাবশালী, তারা টাকা পয়সা দিয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে। আসামি তুহিন গ্রেপ্তার হলে ডিএনএ টেস্টের মুখোমুখি হবে-এই ভয়ে গ্রেপ্তার এড়িয়ে যেতে যা যা করা দরকার তাই করছে। আপনারা জানেন যে, পুলিশ ইচ্ছা করলে যে কোনো অপরাধীদের গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়। পুলিশ না পারলে র্যাবকে দায়িত্ব দেন। কিন্তু আমার ক্ষেত্রে কোনো পদক্ষেপই নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেন এই ভুক্তভোগী।
ভুক্তভোগীর চাচা শ্বশুর আব্দুর রশিদ বলেন, তদন্তকারী কর্মকর্তা আসামিদের বাড়িতে গিয়ে গল্প করে চলে যায়, আর আমাদের এসে বলে আসামিদের ধরে দিতে। আমাদের কাজ কী আসামি ধরা?
এ বিষয়ে জানতে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আলিম সরদারকে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি।
নলডাঙ্গা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনোয়ারুজ্জামান বলেন, গ্রেপ্তার এড়ানোর জন্য আসামিরা এমন কৌশল অবলম্বন করেছে যা হয়তো আমাদের আয়ত্ত্বের বাইরে। তবে আসামিদের গ্রেপ্তারে আমাদের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।