স্বতন্ত্র প্রার্থীর মৃত্যুতে নওগাঁ-২ আসনে ভোট স্থগিত
ছবি: সংগৃহীত
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নওগাঁ-২ (পত্নীতলা ও ধামইরহাট) আসনের ভোট স্থগিত করেছেন জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. গোলাম মওলা। শুক্রবার ( ২৯ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬ট ১৫ মিনিটে) এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে গণমাধ্যমকর্মীদের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তিনি।
বিজ্ঞপ্তিতে তিনি উল্লেখ করেছেন, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ এর ১৭(১) অনুচ্ছেদের বিধান অনুযায়ী ৪৭, নওগাঁ-২ সংসদীয় আসনের নির্বাচন সংক্রান্ত সকল কার্যক্রম বাতিল ঘোষণা করা হলো।
এর আগে ওই আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আমিনুল হক এদিন ভোরে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু বরণ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
আমিনুল হক ২০০৬ সালে নওগাঁর পত্নীতলা উপজেলার নজিপুর পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হন। তিনি নওগাঁ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক। এছাড়া তিনি ১৯৮৬ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত পত্নীতলা উপজেলা আওয়ামী লীগের একাধিকবার সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
আগামী ৭ জানুয়ায়ী অনুষ্ঠিতব্য দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাতিল হওয়া মনোনয়নপত্র তিনি উচ্চ আদালতের রিট আবেদনের মাধ্যমে ফেরত পেয়ে স্বতন্ত্র এমপি পদপ্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দীতা করছিলেন। তবে নির্বাচনের মাঠে স্বতন্ত্র ওই প্রার্থীর কোনো গণসংযোগ বা তেমন কোনো প্রচার প্রচারনা চোখে পড়েনি এলাকাবাসীর।
স্থানীয়রা জানান, প্রার্থীতা ফিরে পেতে ঢাকায় অবস্থানকালে গত ২৭ ডিসেম্বর অসুস্থতাজনিত কারণে ও হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী আমিনুল হক ঢাকার একটি হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ধামইরহাট উপজেলার লক্ষনপাড়া গ্রামের মৃত নুর মোহাম্মদের ছেলে নজিপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা আমিনুল হক শুক্রবার ভোর রাতে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী সহ ১ পুত্র সন্তান ও অসংখ্য গুনগ্রাহী রেখে যান।
আমিনুল হকের ছেলে আছিফুল হক তার বাবার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, মামলার শুনানিতে অংশ নিতে গত সোমবার ঢাকায় যান আমিনুল হক। ঢাকায় যাওয়ার পর থেকেই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। মঙ্গলবার রাতে তাকে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসাপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ ভোর ৫টার দিকে তার মৃত্যু হয়। তিনি ডায়াবেটিসজনিত সমস্যা, হৃদরোগসহ বিভিন্ন জটিল রোগে ভুগছিলেন।
আছিফুল হক আরও জানান, শুক্রবার বিকেলে আমিনুল হকের মরদেহ গ্রামের বাড়ি নওগাঁর নজিপুরে পৌঁছাতে পারে। জানাজা শেষে সন্ধ্যায় পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নওগাঁ-২ আসন থেকে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করতে চেয়ে আমিনুল হক দলের মনোনয়ন চেয়েছিলেন। দল থেকে মনোনয়ন না পেয়ে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। কিন্তু নির্বাচন কমিশন তার মনোনয়নপত্রে বিভিন্ন অসঙ্গগতি তুলে ধরে প্রার্থিতা বাতিল করে দেয়। পরে আমিনুল হক প্রার্থিতা ফিরে পাওয়ার জন্য হাইকোর্টে রিট করেন। রিটের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট গত বুধবার তার প্রার্থিতা বৈধ বলে রায় দেন। বৃহস্পতিবার নওগাঁ জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে তাকে ঈগল প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়। প্রতীক পাওয়ার পরদিনই তার মৃত্যু হলো।
নওগাঁ-২ আসনে আমিনুল হক ছাড়া আরও তিনজন প্রার্থী রয়েছেন। তারা হলেন আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য শহীদুজ্জামান সরকার, জাতীয় পার্টির প্রার্থী তোফাজ্জল হোসেন ও আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা ইঞ্জিনিয়ার এইচ এম আখতারুল আলমও এই আসনে প্রতিদ্বন্দীতা করছেন।
ধামইরহাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার আসমা খাতুন মুঠোফোনে বলেন, এই উপজেলায় গ্রামের বাড়িতে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় আগামীকাল শনিবার দাফন হবে বীর মুক্তিযোদ্ধা আমিনুল হকের।
উল্লেখ্য, স্বতন্ত্র প্রার্থী আমিনুল হক মারা যাওয়ায় ওই আসটির ভোট স্থগিত হবে বলে ইতিমধ্যে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ।