হুমায়ূন কবিরের দুই লাখ টাকার পুঁজি এখন ২৫ লাখ
বেশিক্ষণ হাঁটতে পারেন না কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার মিথিলাপুরের মো. হুমায়ূন কবির। কথা বলতেও অসুবিধা হয়। এক হাত চল হয়ে গেছে। কিন্তু এত এত প্রতিবন্ধকতাও থামাতে পারেনি হুমায়ূনকে। ৪৫ বছর বয়সি এ মানুষ দীর্ঘদিন চাকরি করেছেন বিভিন্ন বহুজাতিক কোম্পানিতে। কিন্তু স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে তার একটি হাত প্যারালাইজড হয়ে যায়। কিন্তু শারীরিক এই প্রতিবন্ধকতাকে পাশ কাটিয়ে তিনি নিজ গ্রামে গড়ে তুলেছেন বহুমুখী এগ্রো ফার্ম।
ফার্মে গরু-ছাগল লালন-পালন ছাড়াও তিনি পুকুরে চাষ করেন মাছ। এ ছাড়া জমিতে শাক-সবজি এবং গরুর খাবার ঘাস চাষও করেন। চার বছর আগে মাত্র দুই লাখ টাকার পুঁজি নিয়ে ফার্ম শুরু করেন হুমায়ূন। এখন তার খামারের পুঁজি প্রায় ২৫ লাখ টাকা।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করে প্রায় ১৩ বছর তিনটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে চাকরি করেছেন হুমায়ূন। ২০১৮ সালের শুরুর দিকে শারীরিক প্রতিবন্ধকতার শিকার হয়ে চাকরি হারান। এরপর স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে ফিরে আসেন গ্রামের বাড়িতে। কিন্তু সেখানে আর বসে থাকেননি। বন্ধুদের সহায়তায় শুরু করেন খামারের কার্যক্রম। প্রথমে দুই লাখ টাকা পুঁজি নিয়ে একটি গরু ও ছাগল কিনে পরীক্ষামূলক খামার চালু করেন। এরপর লাভের টাকায় ধীরে ধীরে বাড়াতে থাকেন খামারের পরিধি। ‘টাটকা এগ্রো ফার্ম’ নামে তার খামারের আওতাধীন এখন রয়েছে ১১টি গরু, মাছ চাষের তিনটি পুকুর। এ ছাড়াও পৈত্রিক ৩৩ শতক জমিতে শাকসবজি এবং ৪০ শতক জমিতে ঘাস চাষ করছেন তিনি। এসব কাজে তাকে সহায়তা করছেন তার ভাই ও বন্ধুরা।
প্রতিবন্ধকতাকে জয় করা হুমাযূন কবিরের এ সাফল্যে অভিভূত তার বন্ধু ও এলাকাবাসী। তারা বলছেন, হুমায়ূন কবির আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা। দুর্ঘটনার পর থেমে না থেকে সে যেভাবে এগিয়ে চলেছে তা সত্যিই অতুলনীয়।
হুমায়ূন কবিরের প্রবাসী বন্ধু মুমিনুর রশিদ বলেন, সে আগে ভালো চাকরি করতো। কিন্তু হঠাৎই একটি স্ট্রোকে সে চলাচলের স্বাভাবিক সক্ষমতা হারায়। কিন্তু এই প্রতিকূল অবস্থার মাঝে হুমায়ূন থেমে থাকেনি। তার অদম্য ইচ্ছা শক্তি নিয়ে এগিয়ে চলেছে। বন্ধু হিসেবে আমরা তার জন্য গর্ব করি। তার আগামী জীবনে সফলতা কামনা করি।
হুমায়ূন কবিরের প্রতিবেশী জামাল উদ্দিন বলেন, তার হাটতে সমস্যা হয়, কথা বলতে সমস্যা হয়, এক হাত প্যারালাইজড। এই অবস্থার মধ্যে তিনি পুকুরে মাছ চাষ করছেন, জমিতে শাকসবজি ও ঘাষ চাষ করছেন এবং খামারে গরু লালন পালন করছেন। এটা সত্যিই অসামান্য একটা ব্যাপার। মিথিলাপুরের মানুষের জন্য তিনি অনুপ্রেরণা।
প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে এগিয়ে চলা দুই সন্তানের জনক হুমায়ূন কবির জানান, দেশের স্বনামধন্য কৃষি ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব শাইখ সিরাজের অনুপ্রেরণায় তিনি গড়ে তুলেছেন এই খামার। পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা পেলে খামারের পরিধি আরও বাড়াতে চান, স্বপ্ন পূরণে এগিয়ে যেতে চান আরও অনেক দূর।
এসএন