তিন ফসলি জমিতে খাল খনন
নীলফামারীর ডিমলায় ফসলি জমিতে খাল খননকে কেন্দ্র করে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) সঙ্গে কয়েক দফা সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়েছে এলাকাবাসীর। স্থানীয়দের দাবি তিন ফসলি কৃষিজমি ও ক্ষেতের ফসল নষ্ট করে এ খাল খনন করা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলার বুড়িতিস্তা নদীর রামডাঙ্গা এলাকায় আবারও পাউবো ও ঠিকাদারের লোকজনের সঙ্গে এলাকাবাসীর সংঘর্ষ হয়। এতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দুইজন আহত হন। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। আহতরা হলেন- জাহাঙ্গীর আলম(২৫) ও ইদ্রিস আলী (৩২)।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কৃষি জমিতে জলাধার খনন নিয়ে গ্রামবাসীর সঙ্গে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিরোধ চলে আসছে। এরই জেরে বারবার খনন কাজে বাধা দেন গ্রামবাসী। বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে খননকাজে আবারও বাধা দেয় গ্রামবাসী। কথা কটাকাটির এক পর্যায়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন তারা। একপর্যায়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে সংঘর্ষ থামায়।
নীলফামারী পাউবো সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার বালাপাড়া ও সদর ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে বুড়িতিস্তা নদী বয়ে গেছে। পাউবো কর্তৃপক্ষ তিস্তা সেচ প্রকল্পের আওতায় নদী ও জলাধার খননের জন্য দরপত্রের মাধ্যমে বেশ কয়েকটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দেয়। এতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৯৯ কোটি টাকা।
একাধিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রায় মাস দুয়েক আগে নদী ও জলাধার খননের কাজ শুরু করে। এতে নদী এলাকায় চাষাবাদ করা মানুষ আপত্তি করেন। একপর্যায়ে এলাকাবাসী তাদের জমি রক্ষার দাবিতে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করে। বিষয়টি সুরাহা না হওয়ায় তারা খনন কাজে বাধার সৃষ্টি করে।
গ্রামবাসীর দাবি, নদী এলাকায় হাজার হাজার মানুষের পৈতৃক ও ক্রয়সূত্রে পাওয়া জমি রয়েছে। এসব জমি কেটে অপরিকল্পিতভাবে অস্তিত্ব না থাকা খাল খনন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তাদের। এ ছাড়া খাল খননের নামে সরকারি বালু নিলাম ছাড়াই বিক্রি করছে ঠিকাদার। প্রতিবাদ করলেই ঠিকাদারের লোকজন গ্রামবাসীর উপর হামলা করে উল্টো মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে।
রামডাঙ্গা গ্রামের সবিতা রানী, পারভীন আক্তার, নুর আলমসহ অন্তত ২০ জন বাসিন্দা বলেন, কাগজপত্র অনুযায়ী তারা জমির মালিক। সেখানে নদী না থাকলেও তাদের জমি কেটে নদী করা হচ্ছে। খননকাজে আমাদের আপত্তি নেই। কিন্তু মূল নদী বাদ দিয়ে কৃষি জমিতে ফসল নষ্ট করে খননকাজ চলছে।
তারা বলেন, খাল খনন নয় মাটি ও বালু বিক্রিই তাদের মূল উদ্দেশ্য। প্রতিদিন সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত শতশত ট্রলিতে খাল খননের বালু বিক্রি করছে ঠিকাদার ও পাউবোর লোকজন। এতে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।
নদী সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বুড়িতিস্তা নদীতে পানির প্রবাহ খুব কম। পানির প্রবাহ নিশ্চিত না করে নদী ও জলাধার খনন করা অর্থ অপচয় ছাড়া কিছুই না। শুকনো মৌসুমে এই জলাধার কোনো কাজেই আসবে না। তিস্তা সেচ প্রকল্পের সঙ্গে এ নদীর কোনো সংযোগ নেই। অপরিকল্পিত খননের ফলে তিন ফসলি কৃষিজমি নষ্ট হচ্ছে। এতে বছরে প্রায় ৪০ কোটি টাকার ফসল উৎপাদন কমে যাবে।
এ বিষয়ে নীলফামারী পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আতিকুর রহমান বলেন, সংঘর্ষ আমাদের লক্ষ্য নয়। সবার সঙ্গে সমন্বয় করে আমরা খনন কাজ এগিয়ে নিতে চাই । এসব বিষয় নিয়ে আগেও গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা হয়েছে। আমরা সবার সহযোগিতায় সমন্বয় করে খননকাজ করার চেষ্টা করব।
ডিমলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা লাইছুর রহমান বলেন, এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, এর আগে বেশ কয়েকবার জলাধার খনন কাজে পাউবো ও ঠিকাদারিপ্রতিষ্ঠানের লোকজনের সঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দাদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে । এসব ঘটনায় ৭৯ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ছয় শতাধিক ব্যক্তিকে আসামি করে মামলা করে পাউবো।
এসএন