আড়াই মাসেও শুরু হয়নি দুই শ্রমিক হত্যা মামলার তদন্ত
রাজশাহীতে দিন-দুপুরে চোর অপবাদ দিয়ে দুই শ্রমিককে পিটিয়ে হত্যার আড়াই মাস পেরিয়ে গেলেও তদন্তই শুরু করেনি পুলিশ। সংশ্লিষ্ট তদন্ত কর্মকর্তা তদন্ত শুরু করতে না পারার কারণ হিসেবে মরদেহের ময়নাতদন্ত রির্পোট না পাওয়াকে দোষারোপ করছেন। অথচ রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগ দুই সপ্তাহ আগেই জানায়, রির্পোট অনেক আগেই প্রস্তুত হয়ে আছে। তদন্ত কর্মকর্তা যদি রির্পোট না নিয়ে যান তবে তারা কি করতে পারেন!
এদিকে পুলিশের এমন উদাসীনতা ও আসামিদের পক্ষ থেকে ভুক্তভোগী পরিবারের উপর অব্যাহত চাপের কারণে অর্থের বিনিময়ে ঘটনাটিকে ধামাচাপা দেয়ার অভিযোগও উঠেছে।
জানা গেছে, রাজশাহী নগরীর বিসিক শিল্প এলাকায় গত ২ ফেব্রুয়ারি একটি খাদ্যপণ্য প্রস্তুতকারী কোম্পানির মালিকের বাসায় দুই নির্মাণ শ্রমিককে পিটিয়ে গুরুতর আহত করা হলে এদিন দিবাগত রাতেই তাদের মৃত্যু হয়। মারা যাওয়া শ্রমিকরা হলেন-চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ থানার চৈতন্যপুর গ্রামের মো. রাকিবুল ইসলাম ও নওগাঁ জেলার মান্দা থানার সাগুনিয়া গ্রামের মো. রেজাউল করিম (৫০)।
পরে ওইদিন রাতেই মো. রাকিবুল ইসলামের স্ত্রী সুমা খাতুন বাদী হয়ে বোয়ালিয়া থানায় চারজনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করে। এরপরই ৪ জনকে গ্রেপ্তার করে বোয়ালিয়া মডেল থানা পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- সপুরা বিসিক এলাকার মো. আব্দুল মালেকের ছেলে মো. আব্দুল্লাহ, এয়ারপোর্ট থানার বায়া বাড়ইপাড়ার মৃত মনির উদ্দিনের ছেলে মো. মাসুম রেজা (৫০), মো. শফিকুল ইসলামের ছেলে মো. মঈন উদ্দিন রিয়াল (১৯) ও রাজপাড়া থানার সিলিন্দা বাগানপাড়ার মো. মোশারফের ছেলে মো. ইমরান (২১)। বর্তমানে আসামিরা জামিনে না কি? জেলহাজতে আছে? এই তথ্যও নেই তদন্ত কর্মকর্তার কাছে।
ঘটনার পর প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাদ দিয়ে সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ জানায়, আসামি আব্দুল্লাহর বাড়িতে এই দুই নির্মাণ শ্রমিক কাজ করছিল। ২ ফেব্রুয়ারি দুপুরে বাড়িতে থাকা টাকা চুরির সন্দেহে আব্দুল্লাহ ও তার সহযোগীরা মিলে রাকিবুল ও রেজাউলকে রশি দিয়ে বেঁধে লোহার রড ও গাছের ডাল দিয়ে পিটিয়ে এবং পায়ের নখ উপরিয়ে গুরুতর আহত করে। এরপর আশপাশের লোকজন রাত ৯ টায় ৯৯৯ এর মাধ্যমে বোয়ালিয়া মডেল থানা পুলিশকে ঘটনাটি জানায়। বোয়ালিয়া মডেল থানা পুলিশ খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে রাকিবুল ও রেজাউলকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যায়। সেখানে নেয়ার পর হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে রাকিবুলকে মৃত ঘোষণা করেন। আর রেজাউল চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে।
এ ঘটনায় মামলার পরপরই সপুরা পুলিশ ফাঁড়ি ইনচার্জ সোহেল রানাকে তদন্ত ভার দেওয়া হয়। অথচ তিনি অন্যের ঘাঁড়ে দোষ চাপিয়ে তদন্তই শুরু করেননি।
গত ১ মে সপুরা পুলিশ ফাঁড়ি ইনচার্জ সোহেল রানা ঢাকাপ্রকাশ-কে জানান, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট না পাওয়ায় তিনি তদন্ত শুরু করতে পারছেন না। এর পরই রামেকের ফরেনসিক বিভাগে খোঁজ নেওয়া হলে বিভাগের প্রধান ডা. কফিল উদ্দিন জানান, রিপোর্ট প্রস্তুত আছে। তদন্ত কর্মকর্তা নিয়ে গেলেই হবে। তারপর সোহেল রানাকে একাধিকবার মুঠোফোনে কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
গত বৃহস্পতিবার ফোন রিসিভ করে সপুরা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ বলেন, তিনি একটি প্রোগ্রামে আছেন। কথা বলতে পারবেন না। সর্বশেষ শুক্রবার (১৯ মে) মুঠোফোনে তিনি জানান, ময়নাতদন্ত রির্পোট এখনও পাননি। আর আসামিরা বর্তমানে কি অবস্থায় আছে সেটাও তার জানা নেই।
এদিকে মো. রাকিবুল ইসলামের স্ত্রী সুমা খাতুন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমরা কি অবস্থায় আছি, সেই খবর নিয়ে আর কি হবে? কেউ কারও না। যার হারিয়েছে। সেই বুঝছে।
অন্যদিকে এ বিষয়ে ইমারত নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়ন (ইনসাব) রাজশাহীর সভাপতি নবাব আলী জানান, ঘটনাটির পর তারা প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। কিন্তু নিহতের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তারা তেমন একটা সাড়া দেয়নি। অর্থের বিনিময়ে দুই পক্ষ মিমাংসা করছে এমন গুঞ্জন শুনেছি। এর বাইরে আর কিছু জানা নেই।
এসআইএইচ