কুড়িগ্রামে ২ কোটি টাকার মাদকদ্রব্য জব্দ, গ্রেপ্তার ১১০
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে মাদক বিরোধী অভিযানে ২ কোটি টাকার মূল্যের মাদকদ্রব্য জব্দ করেছে পুলিশ। এ ছাড়াও গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১১০ জন মাদক চোরাকারবারিকে। তবে পলাতক আসামি রয়েছেন ৬৪ জন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ফুলবাড়ী উপজেলা ভারত সীমান্তবর্তী হওয়ায় খুব সহজেই বালারহাট, গোরকমন্ডল, চাঁদেরবাজার, আব্দুল্ল্যার বাজার, গংগাহাট, কাশিয়াবাড়ী, অনন্তপুর, বেড়াকুটি, কাশিপুর, কাশিপুর কলেজ মোড়, খরিবাড়ী, কালিরহাট, বোর্ডের হাট, মিয়াপাড়া বাজার, হক বাজারসহ বিভিন্ন এলাকার চোরাকারবারিরা মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। পুলিশের মাদক বিরোধী অভিযান ২৪ ঘণ্টা চলমান থাকলেও কোনোভাবেই থামছে না মাদক ব্যবসা। ফলে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে তরুণ ও যুব সমাজ। এ নিয়ে চরম উদ্বিগ্ন অভিভাবকসহ সচেতন মহল।
আরও জানা গেছে, ফুলবাড়ী উপজেলাজুড়ে প্রায় দুই শতাধিক স্পটে প্রকাশ্যে মাদক কেনাবেচা ও সেবন করে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। এই সব স্পটে পুলিশ অভিযান চালিয়ে ২০২২ সালের ২ ফেব্রুয়ারি থেকে চলতি বছরের ১৩ মে পর্যন্ত প্রায় ১৫ মাসে গাঁজা ৬৪৯ কেজি ৮৭৫ গ্রাম, ফেনসিডিল ১ হাজার ৬৮৩ পিস, ইয়াবা ট্যাবলেট ৬ হাজার ২০১ পিস, বিয়ার মদ ১৬ বোতল ও স্ক্যাপ সিরাপ ৯৫২ পিস জব্দ করা হয়। এসব মাদকসহ ১১০ জন মাদক চোরাকারবারিকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে পুলিশ বাদী হয়ে ১৭৪ জনের নামে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করে। এসব জব্দকৃত মাদক দ্রব্যর সরকারি মূল্য ৯১ লাখ ১৬ হাজার ৭০০ টাকা।
এ ছাড়াও জিডি মূলে পরিত্যাক্ত অবস্থায় গাঁজা ২০ কেজি ৩০০ গ্রাম, ফেনসিডিল ৮৭ বোতল, স্ক্যাপ সিরাপ ২৭০ বোতল ও ইয়াবা ২২০ পিস উদ্ধার করা হয়েছে। এসব জব্দ করা মাদকের সরকারি মূল্য ২ লাখ ৬৭ হাজার ৯৫০ টাকা। তবে বেসরকারিভাবে এগুলোর মূল্য প্রায় ২ কোটি টাকা বলে জানা গেছে।
সেই সাথে গত ১৫ মাসে স্কুল-কলেজসহ বিভিন্ন এলাকায় মাদক ব্যবসা ও সেবনে যাতে স্কুল-কলেজের তরুণ-যুব সমাজ জড়িয়ে না পড়ে সে লক্ষ্যে ১ হাজারও অধিক জনসচেতনমূলক উঠান বৈঠক করা হয়েছে।
তা ছাড়াও মাদক মামলায় উদ্ধার করা গাড়ির সংখ্যা কুড়িয়ার সার্ভিস লেখা কাভার্ড ভ্যান ১টি, মাইক্রোবাস ২টি, পিকআপ ভ্যান ২টি, অটো চার্জার গাড়ি ২টি, মোটরসাইকেল ২০টি, বাইসাইকেল ৫টি, শ্যালো মেশিন ১টি, নৌকা ১টি ও নগদ টাকা ৮ হাজার ৫০০ টাকা। এসব গাড়ির মোট মূল্য ৮৩ লাখ ৯৮ হাজার টাকা।
এ বিষয়ে সীমান্তঘেষা নাওডাঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলাম বন্ধন জানান, বালারহাট ও নাওডাঙ্গা ইউনিয়নে মাদকের রমরমা ব্যবসা সেটা সবার জানা আছে। বিশেষ করে সারাদিন মোটসাইকেলযোগে দূর-দূরান্তের মাদক সেবীদের ঢল নামে ইউনিয়ন জুড়ে। সেটা বর্তমান ওসি যোগদান করার পর থেকে মাদক নিয়ন্ত্রণসহ মাদক সেবীদের সংখ্যা কমায় বালারহাটের মানুষ কিছুটা স্বস্তিতে আছে। তবে পুলিশের একটি টিম নাওডাঙ্গা বকুলতলা বাজার, গোরকমন্ডল বিডিআর বাজার ও বালারহাট অবস্থা করলে মাদক সেবীদের আনাগোনা কমে যাবে বলে আমার বিশ্বাস।
এ ব্যাপারে ফুলবাড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ ফজলুর রহমান জানান, গত ১ বছর ২ মাস ২২ দিনে প্রায় ২ কোটি টাকার মাদক উদ্ধার ও ১৭৪ জনের বিরুদ্ধে মামলাসহ ১১০ মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, প্রতিদিনই আমাদের পুলিশ বাহিনীর মাদক বিরোধী অভিযান চলমান রয়েছে এবং অভিযানে গাঁজা ২৭ কেজি, ৩৩ কেজি, ৪২ কেজি ও ৫২ কেজির বড় চালান আটক করতে সক্ষম হয়। পুলিশ বাহিনীকে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ সমাজের বিশিষ্ট জনসহ সচেতন মানুষগুলো যদি সহযোগিতা করে তাহলে ফুলবাড়ী উপজেলায় মাদক নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
এসআইএইচ