সন্তানের পিতৃ পরিচয়ের দাবিতে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন মা
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে সন্তানের পিতৃ পরিচয়ের দাবিতে মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন মা-ছেলে। চোখের সামনে স্বামী থাকলেও স্ত্রীসহ এক ছেলে সন্তানের খোঁজ-খবর নেয়াতো দূরের কথা টানা ২১ বছর অতিবাহিত হলেও স্ত্রী-সন্তানের স্বীকৃতিটুকুও পাননি বলে অভিযোগ তাদের। আইনের আশ্রয় না নিলেও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও স্ত্রী সাবেত্রী রানী (৪৩) ও তার ছেলে গৌতম চন্দ্র বর্মন (২১)। টানা ২১ বছর স্ত্রী ও একমাত্র ছেলে গৌতমের পিতৃ পরিচয়ের জন্য ঢিলেঢালা ভাবে দাবি জানিয়ে আসলেও সফল হতে পারেননি মা-ছেলে। গৌতম বড় হওয়ায় ২১ বছর পর পিতৃ পরিচয়ের জন্য ছেলে মা সাবেত্রীকে চাপ প্রয়োগ করেন। ছেলের পিতৃ পরিচয়ের জন্য মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন মা সাবেত্রী। স্ত্রীর ন্যায্য অধিকার ও ছেলের পিতৃ পরিচয়ের দাবিতে অনড় মা-ছেলে। টানা ২১ বছর পর স্বামীর ন্যায্য অধিকার ও ছেলের পিতৃ পরিচয়ের জন্য মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘোড়ায় ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
সন্তানের পিতৃ পরিচয় দাবি করা নারী সাবেত্রী রানী জানান, তার বাড়ি কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের নাওডাঙ্গা গ্রামে। একই এলাকার মৃত করুনা কান্ত রায়ের ছেলে গনেশ চন্দ্র বর্মন। গনেশ চন্দ্র বিবাহিত হলেও সাবেত্রীর সাথে পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। এক পর্যায়ের সাবেত্রী ৫ মাসের অন্তঃসত্তা হওয়ায় স্থানীয় লোকজন দুইজনের সম্মতি ক্রমে ২০০২ সালে সাবেত্রীর সাথে গনেশের বিয়ে দেন।
সাবেত্রীর দাবি, গনেশের সাথে বিয়ে হওয়ার ৬ মাস মাস পর ঘরে তুলবেন বলে তাকে প্রতিশ্রতি দেন এবং ৬ মাসের ভরণ পোষণের জন্য ৩ হাজার টাকাও দেন। তার স্বামী গনেশ চন্দ্র টানা ২১-২২ বছরও স্ত্রীর স্বীকৃতি দেননি। সাথে আমার গর্ভে ৫ মাসের ছেলেটার বয়স আজ ২১ বছর। সেই এতিম ছেলেটির পিতৃ পরিচয়টুকুও দিচ্ছেন না।
তিনি জানান, দীর্ঘ ২১ বছর ধরে একমাত্র সন্তানকে নিয়ে চরম কষ্টে খেয়ে না খেয়ে বড় করে তোলেন। দীর্ঘ ২১ বছর ধরে একমাত্র সন্তানকে নিয়ে তিনি মানুষের জমিতে বসবাস করছেন।
সাবেত্রী বলেন, ২১ বছর ধরে আমার সন্তানের পিতৃ পরিচয় দিতে পারছি না। তাই আমার স্বামী গনেশ আমাকে স্ত্রীর স্বীকৃতি না দিলেও কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু আমার একমাত্র সন্তানের পিতৃ পরিচয়ের স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ এলাবাবাসীর সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি। এতে কাজ না হলে তিনি তার ছেলের পিতৃ পরিচয় পেতে আইনের আশ্রায় নিবেন।
পিতৃ পরিচয়হীন ছেলে গৌতম চন্দ্র বর্মন (২১) বলেন, ‘অনেক কষ্টে আমার মা অন্যের জমিতে থেকে আমাকে খেয়ে না খেয়ে বড় করে তোলেন। চোখের সামনে বাবা থাকলেও আমাকে ছেলের স্বীকৃতি দিচ্ছেন না । মাসহ এলাকার অনেক লোকের মুখে শুনেছি আজ গনেশ নামের ওই ব্যক্তি আমার বাবা। কিন্তু আমি একদিন বাবার কাছে ছেলের স্বীকৃতি চাইলে তিনি অস্বীকৃতি জানান। সেই দিন অনেক বড় কষ্ট পেয়েছি। তাই আমার মাসহ পিতৃ পরিচয়ের জন্য মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছি। কেন আমি বাবা থাকার পরেও ছেলের স্বীকৃতি পাবো না। প্রয়োজনে আইনের আশ্রয় নিবো তিনি সবার সহযোগীতা চেয়েছেন।’
এ প্রসঙ্গে স্থানীয় মিলন দে জানান, গনেশ ভালোবেসে সাবেত্রীকে বিয়ে করেছেন আমি তার কালের সাক্ষী। সাবেত্রী প্রতিবন্ধী ও গরীব বলে স্ত্রীর স্বীকৃতিটুকুও দেয়নি। এটা চরম অন্যায় করেছে গনেশ। সাবেত্রীর গর্ভের সন্তানটির বয়স এখন ২১ বছর। ২১ বছর ধরে গৌতম বাবার ভালবাসা থেকে বঞ্চিত। ছেলেতো কোনো দোষ করেনি। গনেশ নিজেই তাকে (সাবেত্রী) বিয়ে করেছেন। আমরা চাই সাবেত্রীর ছেলে গৌতমকে যেন গনেশ ছেলের স্বীকৃতি দেয়।
এদিকে গনেশ চন্দ্র বর্মনের সাথে কথা হলে তিনি জানান, ওই সময় আমি একটা ভুল করেছি। সেই ভুলের জন্য সাবেত্রীর সাথে মালা পড়িয়ে স্ত্রীর স্বীকৃতি দেই। তবে তাকে কোনো দিন ঘরে তোলাসহ স্বামীর স্বীকৃতি দেইনি এবং সাবেত্রী কোনো দিন আমার কাছে স্ত্রী অধিকার নিয়ে আসবে না বলে সেই সময় হালের গরু ও জমি বন্ধক রেখে তার ভরণ পোষনের জন্য টাকা দিয়েছি। এখন ২১ বছর পর এসে ছেলের পিতৃ পরিচয়ের দাবি জানালে হবে না। এটা কোন ক্রমেই সম্ভব না বলে জানান তিনি।
এ ব্যাপারে নাওডাঙ্গা ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য মমিনুল ইসলাম মন্টু জানান, গনেশ চন্দ্র রায় বিবাহিত হলেও সাবেত্রীর সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। এক পর্যায়ে গনেশের সাবেত্রী ৫ মাসের অন্ত:সত্তা হয়। আমি সেই সময় ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য। অন্ত:সত্বার বিষয়টি জানাজানি হলে উভয় পক্ষের সম্মতি ক্রমে হিন্দু রীতি অনুযায়ী আমিসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তির উপস্থিতিতে ২০০২ সালে বিয়ে সম্পন্ন হয়। সেই সময় গনেশ স্ত্রী সাবেত্রীকে ৬ মাস সময় পর ঘরে তুলবেন বলে ৬ মাসের ভরনপোষণের জন্য ৩ হাজার টাকাও দেন। পরে সে কোনোক্রমেও ঘরে তোলেননি। বিয়ের ২১-২২ বছর হয়ে গেলেও সাবেত্রী পাচ্ছেন না স্ত্রীর স্বীকৃতি ও ছেলে পাচ্ছে না পিতৃ পরিচয়। বিষয়টি বড়ই বেদনাদায়ক ঘটনা। তবে গনেশের উচিত হবে অনন্তত ছেলে গৌতমের পিতৃ পরিচয় দেওয়াটা খুবই জরুরি। কারণ ছেলে বড়ই এতিম।
তিনি আরও জানান, টানা ২১ বছর ধরে বাবা থাকার পরেও বাবা শব্দটা ব্যবহার করতে না পাড়াটা ছেলের জন্য যে কত বড় কষ্টের। তাই গৌতম যেন দ্রুত তার বাবার স্বীকৃতি পায় সেই দাবি জানাচ্ছি।
নাওডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. হাছেন আলী জানান, ২১ থেকে ২২ বছর আগের ঘটনা। তবে বিষয়টি দুই পক্ষই আমাকে জানিয়েছে। দেখি দুই পক্ষকে নিয়ে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করা হবে।
এসআইএইচ