মর্গে বাবার মরদেহ, পরীক্ষাকেন্দ্রে রিয়া
রাতে চোখের সামনে বাবাকে কুপিয়ে হত্যা করে প্রতিপক্ষ। সকালে বাবার মরদেহ বরগুনা সদর হাসপাতালের মর্গে রেখে এসএসসি পরীক্ষা দিল স্কুলছাত্রী।
বরগুনা সদরের আয়লা পাতাকাটা ইউনিয়নের ঘটনা এটি। ওই স্কুলছাত্রীর নাম সানজিদা ইসলাম রিয়া। সে একই ইউনিয়নের পাকুরগাছিয়া ঠান্ডার ক্লাব এলাকার নিহত শফিকুল ইসলাম পনুর মেয়ে। রিয়া এবার সদরের কেওড়াবুনিয়া ইউনিয়নের জর্জিয়া কিন্ডারগার্টেন থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। রিয়ার পরীক্ষাকেন্দ্র সদরের কেওড়াবুনিয়া ইউনিয়নের আয়লা মাধ্যমিক বিদ্যালয়।
এ বিষয়ে ওই বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি জাহিদুল ইসলাম জুয়েল বলেন, সানজিদা আমাদের কেওড়াবুনিয়ার জর্জিয়া কিন্ডারগার্টেন থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ইতোমধ্যে দুটি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে তার বাবা দুর্বৃত্তদের হামলার শিকার হয়ে নিহত হন। কিন্ত মেয়ে পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। বুধবার (৩ মে) বরগুনা সদর হাসপাতালের মর্গে বাবার মরদেহ দেখে পরীক্ষাকেন্দ্রে পরীক্ষা দিয়েছে মেয়ে রিয়া। আমরা তাকে সার্বিক সহযোগিতা করেছি।
পরীক্ষা শেষে সানজিদা ইসলাম রিয়া বলে, বাবার মরদেহ মর্গে দেখে পরীক্ষা দিতে যাওয়ার চেয়ে কষ্টের আর কিছুই নেই। বাবার স্বপ্ন ছিল আমি লেখাপড়া করে মানুষের মতো মানুষ হব। বাবাকে তো আর ফিরে পাব না, পরীক্ষাটা না দিলে বাবার স্বপ্ন ভেঙে যেত। তাই পরীক্ষায় অংশ নিয়েছি। আমার বাবাকে যারা হত্যা করেছে আমি তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
নিহত শফিকুল ইসলাম পনুর স্ত্রী ও পরীক্ষার্থী রিয়ার মা ছবি আক্তার বলেন, বুধবার রাতে ঠান্ডা বাহিনীর ২০-২৫ জন রামদা, টেঁটা দিয়ে আমাদের সামনেই আমার স্বামীকে কুপিয়ে মেরে ফেলেছে। আমি আমার স্বামীকে বাঁচাতে গেলে আমাকেও ওরা মারধর করে। আমার মেয়ে রিয়াকে তার বাবার লাশ মর্গে রেখে পরীক্ষা দিতে হয়েছে। এর চেয়ে দুর্ভাগ্যজনক পরিস্থিতি আর কী থাকতে পারে। আমি এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।
এ বিষয়ে বরগুনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আবদুল হালিম বলেন, ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। ইতোমধ্যে উভয় পক্ষের ১০ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য আটক করা হয়েছে, তবে এখন পর্যন্ত কেউ কোনো মামলা দায়ের করেননি।
প্রসঙ্গত, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বরগুনা সদরের আয়লা পাতাকাটা ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের বর্তমান সদস্য মোতাহার মৃধা সমর্থক ঠান্ডা গ্রুপ ও ওই ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য শফিকুল ইসলাম পনু গ্রুপের মধ্যে বিরোধ চলছিল। এ বিরোধের জেরে নির্বাচনের দেড় বছর পর মঙ্গলবার (২ মে) রাত সাড়ে ৮টার দিকে দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের একপর্যায়ে পনুকে কুপিয়ে হত্যা করে প্রতিপক্ষরা। এর আগেও বেশ কয়েকবার পনুকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করার অভিযোগ রয়েছে ঠান্ডা বাহিনীর বিরুদ্ধে।
এসজি