মায়ের লাশ বাড়িতে রেখে পরীক্ষা দিল দুই বোন
কিছুদিন আগেই ব্রেনস্ট্রোকে আক্রান্ত হন কক্সবাজারের টেকনাফের দুই এসএসসি পরীক্ষার্থী সাদিয়া ফেরদৌস ও শারমিন ইয়াসমিনের মা আনোয়ারা বেগম। এরপর নানা সমস্যায় ভুগছিলেন আনোয়ারা। সোমবার (১ মে) রাতে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে টেকনাফ থেকে কক্সবাজার হাসপাতালে নেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে চট্টগ্রাম নেওয়ার প্রস্তুতিকালে মারা যান তিনি। শোকে কাতর স্বজনরা যখন মরদেহ দাফনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন তখন বাড়িতে মায়ের লাশ রেখে এসএসসি পরীক্ষা দিতে যায় দুই বোন। তারা সাবরাং উচ্চ বিদ্যালয়ের মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থী।
সাদিয়া ও শারমিনের পরীক্ষার কেন্দ্র টেকনাফ উপজেলা সদরের এজাহার সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। সকাল ১০টার আগে চোখ মুছতে মুছতে ওই কেন্দ্রে যান দুই বোন। সহপাঠী ও কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকদের সহযোগিতায় দ্বিতীয় দিনের বাংলা দ্বিতীয় পত্র বিষয়ের পরীক্ষায় অংশ নেয় তারা।
তাদের পরিবার এবং স্থানীয়রা জানান, টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের পানছড়ি পাড়া গ্রামের জহির আহমদের স্ত্রী আনোয়ারা বেগম। হঠাৎ ভোরের দিকে আনোয়ারার মৃত্যু হয়। বাড়িজুড়ে শোকের আবহ, চলছে লাশ দাফনের প্রস্তুতি। মায়ের মৃত্যুর পর সাদিয়া ও শারমিন ভেঙে পড়লেও স্বজনদের কথায় এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্রে পরীক্ষা দিতে যায় তারা।
পরীক্ষা শেষে সাদিয়া ও শারমিন বাড়ি ফেরার পর বিকাল তিনটার দিকে সাবরাং পানছড়ি পাড়া স্কুল মাঠে মা আনোয়ারা বেগমের জানাজার নামাজ হয়। পরে তাদের পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
সাবরাং উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মফিজ উদ দৌল্লাহ বলেন, মা হারানো দুজন শিক্ষার্থী খুবই মেধাবী। তারা দুটি কক্ষে আলাদাভাবে পরীক্ষা দিচ্ছে। তবে মাঝেমধ্যে তাদের কান্নায় ভেঙে পড়তে দেখা গেছে।
দুই কক্ষের দায়িত্বরত শিক্ষক জাকারিয়া আলফাজ ও রিফাত জাহান মিনা জানান, পরীক্ষা শুরু হওয়ার আগে শিক্ষার্থীরা তাদের উৎসাহিত করেছে। তবে মাঝেমধ্যে তাদের কাঁদতে কাঁদতে পরীক্ষার খাতায় লিখতে দেখা গেছে। আমরা তাদের সান্ত্বনা দিয়েছি।
কেন্দ্রসচিব ও সরকারি এজাহার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা শিউলি চৌধুরী বলেন, সাদিয়া ও শারমিন মায়ের মৃত্যুর বিষয়টি আমরা সকালেই জানতে পেরেছিলাম। সবার সঙ্গে বসে পরীক্ষা দিলে তাদের ভালো হবে ভেবে তাদের জন্য বিশেষ কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আমরা চেয়েছিলাম তারা সবার সঙ্গে স্বাভাবিকভাবেই পরীক্ষা দিক। তারা দুই বোন এক হাতে রুমাল দিয়ে বারবার চোখ মুছছিল। আর অন্য হাতে পরীক্ষার খাতায় লিখেছে।
সাদিয়া ও শারমিন বলেন, মা আমাদের অনেক ভালোবাসতেন। চাইতেন আমরা যেন পড়ালেখা করে অনেক বড় হই। তাই এমন অবস্থায়ও আমরা পরীক্ষায় অংশ নিয়েছি। মায়ের আত্মাকে আমরা কষ্ট দিতে চাই না।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো কামরুজ্জামান বলেন, মাকে হারানো যে কারও জন্য খুবই কষ্টদায়ক। তারপরও এসএসসি পরীক্ষার্থী সাদিয়া ও শারমিন মা হারানোর কষ্ট নিয়ে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। আমরাও তাদের পরীক্ষার সময় যতটা সম্ভব পাশে থাকার চেষ্টা করেছি।
এসজি