কুড়িগ্রাম সীমান্তে ভারতের বন্য হাতির তাণ্ডবে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি

কুড়িগ্রামের রৌমারী সীমান্তে ভারতীয় বন্য হাতির তাণ্ডবে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। গত দুদিনে ভারত সীমান্ত পেরিয়ে বন্য হাতি বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি করে। এ অবস্থায় ঢাক-ঢোল বাজিয়ে আগুন জ্বালিয়ে ও পটকা ফাটিয়ে হাতি তাড়ানোর চেষ্টা করেন কৃষকরা।
সোমবার সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, ভারতের মেঘালয় রাজ্যের গারো পাহাড় থেকে নেমে আসে তিনটি বন্য হাতি। শনিবার (২২ এপ্রিল) রাত ৯টার দিকে রৌমারী সীমান্তের আন্তর্জাতিক সীমানা পিলার ১০৭১ এর কাছে আলগারচর এলাকা দিয়ে এসব বন্য হাতি লোকালয়ে ঢুকে পড়ে। গত দু’দিন ধরে (শনিবার রাত ৯টা-রবিবার ভোর পর্যন্ত) এসব হাতি উপজেলার আলগারচর, খেওয়ারচর, বকবান্ধা, ঝাউবাড়ী, পাটাধোয়াপাড়া, কলাবাড়ী, বারবান্ধা, চুলিয়ারচর, বড়াইবাড়ী, পূর্ব দুবলাবাড়ী এ ১০ গ্রামে তাণ্ডব চালায়। এসময় খেয়ে ফেলাসহ তছনছ করে জমির বোরো ধান। পরে রোববার ভোরেই সীমানা পিলার ১০৭১ এর কাছ দিয়ে ভারতে চলে যায় এসব হাতি। তবে এখনো আতঙ্ক কাটেনি সীমান্তবর্তী এলাকার কৃষকদের মাঝে। প্রতি বছরে কয়েকবার ভারতীয় বন্য হাতি বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঢুকে ফসলসহ ঘরবাড়ির ব্যাপক ক্ষতি করে। যাতে ভারতীয় বন্য হাতি বাংলাদেশের অভ্যন্তরে না ঢুকতে পারে সেজন্য সংশ্লিষ্টদের কাছে জোর দাবি জানান সীমান্তবর্তী এলাকার মানুষ।
ঝাউবাড়ী গ্রামের গোলাম হোসেন জানান, তার ২০ শতক জমির বোরো ধান খেয়ে ফেলাসহ নষ্ট করেছে হাতি। রক্ষা পায়নি সরবেশ আলীর ১৫ শতক জমির ধান, সোহান আলীর ১২ শতক জমির ধান, ইউনুছ আলীর ২০ শতক জমির ধান, কলাবাড়ী গ্রামের মোবারক হোসেনের ২১ শতক জমির ধান, আব্দুল কাদেরের ১৩ শতক জমির ধান, বারবান্ধা গ্রামের রঞ্জু মিয়ার ১০ শতক জমির ধান ও চুলিয়ারচর গ্রামের নজরুল ইসলামের ৩০ শতক জমির ধানসহ শতাধিক কৃষকের বোরো ধান নষ্ট করেছে ভারতীয় বন্য হাতি।
পাটাধোয়াপাড়া গ্রামের আব্দুল হাই জানান, ভারত থেকে নেমে এসে রবিবার রাতে তাঁর সেচ মেশিনের পাইপ ভাঙচুর করেছে বন্য হাতি।
যাদুরচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সরবেশ আলী বলেন, ভারতীয় তিনটি বন্যহাতি বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঢুকে কৃষকের জমির ধান খেয়ে ফেলেছে। নষ্ট করেছে ফসল। এতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে এখানকার কৃষকদের। এভাবে ভারতীয় বন্য হাতি প্রবেশ করতে থাকলে সীমান্তবর্তী এলাকার কৃষকরা নিঃস্ব হয়ে যাবে বলেও জানান তিনি।
রৌমারী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, শনিবার রাত থেকে রবিবার ভোর পর্যন্ত ভারতীয় বন্য হাতির আক্রমণে বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। প্রতি বছর এ মৌসুমেই বন্য হাতি এভাবে ক্ষতি করে আসছে। তিনি জানান, দু’দিনে রৌমারী সদর ইউনিয়নের ফুলবাড়ী ব্লকে ৮৫ হেক্টর ও চুলিয়ারচর ব্লকে ২ দশমিক ২৫ হেক্টর এবং যাদুরচর ইউনিয়নের পাহাড়তলী ব্লকে হেক্টর। মোট ৫ দশমিক ১হেক্টর জমির বোরো ধান ক্ষতি করেছে ভারতীয় বন্য হাতি।
চিলমারী উপজেলা সামাজিক বনায়ন নার্সারি ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এ জেড ইকবাল হোসেন খানের মোবাইলে একাধিকবার কল করলেও তার ব্যবহৃত ফোনটি বন্ধ পাওয়া গেছে।
রৌমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবিএম সরোয়ার রাব্বী বলেন, এ বিষয়ে ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের কাছে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে এবং ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
এসএন
