পর্যটকের অপেক্ষায় কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত
এবার ঈদুল ফিতর উপলক্ষে পর্যটন রাজধানী কক্সবাজারের বিভিন্ন হোটেলে পর্যটকদের জন্য থাকছে নানা ছাড় ও সুযোগ সুবিধা। রমজানে টানা একমাস পর্যটক শূন্য ছিল কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত ও জেলার অন্যান্য পর্যটন কেন্দ্র। রমজানে শেষে এসে পর্যটক বরণে প্রস্তুতি নিয়েছন এখানকার ব্যবসায়ীরা।
ইতোমধ্যে কক্সবাজার শহরের পাঁচ শতাধিক হোটেল-মোটেল ও ২৫০ রেস্তোরাঁয় ধোয়া-মোছা ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ সম্পন্ন করেছেন তারা।
এবার ঈদুল ফিতরের সরকারি ছুটি ৫ দিন হলেও টানা ১০ দিন কক্সবাজারে ভরপুর থাকবে পর্যটক। এতে অন্তত হাজার কোটি টাকার ব্যবসা হবে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত ছাড়াও পর্যটক স্বাগত জানাতে জেলার অন্যান্য পর্যটন কেন্দ্রগুলোতেও প্রস্তুতি চলছে পুরোদমে। যেমন- ইনানী, হিমছড়ি, দরিয়ানগর, মহেশখালীর সোনাদিয়া, আদিনাথ মন্দির, রামুর বৌদ্ধ মন্দির, রাবার বাগান এবং টেকনাফের মাথিনের কূপ ও শাহপরীর দ্বীপে ভ্রমণে যেতে পারবেন পর্যটকরা। তবে সেন্টমার্টিন পর্যটকরা ভ্রমণে যেতে পারবেন না।
ব্যস্ত জীবনের ক্লান্তি দূর করতে দেশের মানুষের বেড়ানোর সবচেয়ে পছন্দের তালিকায় রয়েছে কক্সবাজার। এখানে না এলে মানুষের জীবন যেন অনর্থক।
বিশেষ দিন ও টানা ছুটিতে এখানকার পাহাড়-সমুদ্র, নদী ও ঝরনা দেখতে ভিড় করেন পর্যটকরা।
এ বছর রমজান মাসেই পড়েছে মহান স্বাধীনতা দিবস ও পহেলা বৈশাখ। যে কারণে এই দুই বিশেষ দিনেও পর্যটকের দেখা মেলেনি এখানে। এমনকি তারকামানের হোটেল ও রিসোর্টগুলোতেও কক্ষ ভাড়ায় ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দেওয়া হলেও, পর্যটকদের সাড়া মেলেনি।
পর্যটন ব্যবসায়ীরা বলছেন, প্রতি বছর ঈদের ছুটিতে পুরো সপ্তাহ পর্যটকে ভরপুর থাকে। তখন হোটেল-মোটেল ও রিসোর্টগুলোতে কক্ষ সংকটও দেখা দেয়। এ বছরও এই সময়ে লাখো পর্যটকের সমাগম হবে কক্সবাজারে।
বেশিরভাগ ব্যবসায়ী ও মালিক হোটেল-রেস্তোরাঁর সংস্কার ও সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ প্রায় শেষ ।
হোটেল গ্রান্ড বিচের পরিচালক শাহ নেওয়াজ বলেন, ঈদ উপলক্ষে হোটেল পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে। পর্যটকরা এলে একটি পরিষ্কার ও মনোরম পরিবেশ পাবেন।
পর্যটন ব্যবসায়ী আব্দুর রহমান বলেন, ঈদের ছুটিতে ব্যাপক পর্যটক সমাগমের আশা করা হচ্ছে। পর্যটকদের বরণে সেভাবে প্রস্তুতিও নিচ্ছে সবাই। তবে ঈদ পর্যন্ত তীব্র তাপপ্রবাহ থাকলে আশানুরূপ পর্যটক নাও আসতে পারেন, এমন শঙ্কাও রয়েছে।
তারকামানের হোটেল কক্স-টুডের জেনারেল ম্যানেজার আবু তালেব বলেন, রমজানে কক্ষ ভাড়ায় ৪০-৫০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দেওয়া হয়েছিল। ঈদেও ভ্রমণে পর্যটকদের উৎসাহিত করতে আকর্ষণীয় ছাড় রয়েছে।
একইভাবে শহরের অভিজাত হোটেল ওশান প্যারাডাইস, সায়মন বিচ, সি-গাল, সি প্যালেস, লং বিচ, কল্লোল, মিডিয়া ইন্টারন্যাশনালসহ বিভিন্ন হোটেল, গেস্ট হাউস, কটেজ ও রিসোর্টে ঈদের ছুটিতে ১০ থেকে ৩০ শতাংশ ছাড় রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
কক্সবাজার হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, রমজান মাসজুড়ে কক্সবাজারে কোন পর্যটক আসেনি। এখন ঈদের ছুটিতে পর্যটক আসবেন। এবার ঈদে সরকারি ছুটি ৫ দিন থাকলেও অন্তত ১০ দিন কক্সবাজারে বিপুল সংখ্যক পর্যটক অবস্থান করতে পারেন। এতে প্রায় হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ইতিমধ্যে অনেক পর্যটক রুমের জন্য যোগাযোগ শুরু করেছেন। কাশেম ভ্রমণপিপাসুদের অনলাইনে হোটেল বুকিং দেওয়ার পরামর্শ দেন।
কক্সবাজার পর্যটন সেলের ম্যাজিস্ট্রেট মাসুম বিল্লাহ বলেন, ঈদের ছুটিতে পর্যটকদের ভ্রমণ আনন্দময় করে তুলতে যাতে কোনো অসুবিধা না হয়, সেদিকে সার্বক্ষণিক নজরদারি থাকবে জেলা প্রশাসনের। পাশাপাশি পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মাঠে থাকবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। আমাদের লক্ষ্য থাকবে কোনো পর্যটক যেন কোনোভাবে হয়রানির শিকার না হন।
কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার শেহরিন আলম বলেন, ঈদের ছুটিতে পর্যটকের পদচারণায় আবারও চিরচেনা রূপে ফিরবে সৈকতসহ পর্যটন এলাকা। নিরাপত্তা জোরদার করে পর্যটকের সেবা দিতে প্রস্তুত পুলিশ । এজন্য সার্বিক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
শেহরিন আলম জানান, সৈকত ছাড়াও জেলার অন্যান্য পর্যটন কেন্দ্রে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
এসএন