৬ শতাধিক নারীর টাকা উদ্যোক্তার পকেটে, নীরব প্রশাসন
সরকারের দেওয়া দরিদ্র মাতৃত্বকালীন ভাতা প্রদানের নামে লাখ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার নারগুন ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তা ও ইউসিবি ব্যাংকের এজেন্ট ফজলে এলাহীর (বাবু) বিরুদ্ধে। মাসের পর মাস ধর্ণা দেওয়ার পর টাকা না পেয়ে হয়রানি আর ভোগান্তির শিকার হয়ে অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে সংশ্লিস্ট চেয়ারম্যানকে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী নারীরা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, উদ্যোক্তার পদে বসেই তিনি সেবাপ্রত্যাশীদের জিম্মি করে উপার্জন করছেন অবৈধ অর্থ। সম্প্রতি ওই ইউনিয়নের ছয় শতাধিক নারীর গর্ভকালীন ভাতা আত্মসাতের অভিযোগ এই উদ্যোক্তার বিরুদ্ধে। গত তিন বছর ধরে ওই উদ্যোক্তা প্রতারণার মাধ্যমে এসব দরিদ্র নারীর ভাতার টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। সমাজের অবহেলিত এসব নারীর ভাতার অর্থ আত্মসাৎ করায় ওই উদ্যোক্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
জানা যায়, দেশের হতদরিদ্র পরিবারের নারীদের মাতৃত্বকালীন ভাতা প্রদান করে থাকে সরকার। প্রতি জন নারীকে মাসে ৮০০ টাকা করে মোট ৩৬ মাস এই ভাতা প্রদান করা হয়। ওই ইউনিয়নের ৬৪৮ জন হতদরিদ্র নারীকে মাতৃত্বকালীন ভাতার আওতায় আনা হয়। ইউনিয়ন উদ্যোক্তার মাধ্যমে এই ভাতা বিতরণের ব্যবস্থা করা হয়।
দুই সন্তানের জননী জয়ন্তী রানী। শ্রমিক স্বামীর আয় আর বাড়িতে সেলাই কাজের উপার্জিত সামান্য অর্থে চলে অভাবের সংসার। শুধু জয়ন্ত রানী নয়, তার মতো ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার নারগুন ইউনিয়নের সালমা, সুমী ও জেসমিন আক্তারের পরিবারের দিন কাটে অভাব-অনটনে। এমন অনেক অসহায় পরিবারকে সংশ্লিস্ট ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে মাতৃত্বকালীন ভাতা প্রদান করছে সরকার। যার অর্থ আসে ইউসিবি এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যেমে। কিন্তু সহজ-সরল এসব পরিবারের সুবিধাভোগীদের ভুল বুঝিয়ে মোবাইলের পাসওর্য়াড ও ফিঙ্গার প্রিন্ট নিয়ে কৌশলে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে নারগুন ইউনিয়নের ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তা ও ইউসিবি ব্যাংকের এজেন্ট ফজলে এলাহী (বাবু)।
এরই মধ্যে সুবিধাভোগীদের কয়েক শ নারীর ৭ থেকে ৮ লাখ টাকা মাতৃত্বকালীন ভাতা হাতিয়ে নিয়েছে ওই উদ্যোগতা। আর টাকা উদ্ধারে প্রতিদিনিই ইউনিয়ন পরিষদে ভিড় করছেন ভুক্তভোগী নারীরা। লিখিত অভিযোগ দিলেও এখনো কোন ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ। তবে টাকা আত্মসাতের পর থেকে পলাতক রয়েছে ওই উদ্যোগতা।
ভুক্তভোগী নারীরা অভিযোগ করে ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, মাসের পর মাস ধর্না দিলেও প্রশাসন সেই উদ্যোগতার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। আমরা গরীব বলেই সরকার আমাদের টাকা দিচ্ছে। আর সেই টাকা আত্মসাৎ করে ঘুরে বেড়াচ্ছে উদ্যোগতা ফজলে এলাহী বাবু। আমরা চাই তাকে আইনের আওতায় এনে টাকা আদায় করা হোক।
মাতৃত্বকালীন অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানিয়ে নারগুন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সেরেকুল ইসলাম জানান, উদ্যোগতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে রেজুলেশন করে উপজেলা প্রশাসনকে জানানো হবে।
এ ব্যাপারে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু তাহের মো. সামসুজ্জামান জানান, কোনো মায়ের টাকা যেন আত্মসাৎ করতে না পারে সেই বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এসআইএইচ