কুড়িগ্রামে ধরলার বুকে পটল চাষ, নজরদারি নেই কৃষি বিভাগের
কুড়িগ্রামে ধরলা নদীর বুকে পটলের বাম্পার ফলন হয়েছে। বাজারে দামও মিলছে আশানুরুপ। কিন্তু রোগবালাইয়ের আশঙ্কায় কীটনাশক ব্যবহার করলেও সরকারি কৃষি বিভাগের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের তদারকি না থাকায় হতাশ কৃষক। জেলা কৃষি বিভাগ বলছে, যেকোনো ধরনের পরামর্শ দিতে প্রস্তুত তার লোকজন।
কুড়িগ্রামের সদর উপজেলার পাঁচগাছী ইউনিয়নের উত্তর ও দক্ষিণ নওয়াবশ গ্রামজুড়ে ধরলা নদীর বুকে প্রায় ৬০ একর জমিকে পটল চাষ করেছেন প্রায় শতাধিক কৃষক। ফলনও হয়েছে আশানুরুপ। কিন্তু হঠাৎ করে বৃষ্টি আর প্রচন্ড খরার কারণে পটলের পাতা লালবর্ণ হয়ে পচে যাচ্ছে। কীটনাশক প্রয়োগ করেও আশঙ্কায় থাকা কৃষক কৃষি বিভাগের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের অনুপস্থিতির কারণে ক্ষুব্দ ও হতাশ। এই বছর চড়া সুদে ঋণ করে পটল চাষ করে পোকার আক্রমণে লোকসানের আশঙ্কায় রয়েছেন তারা।
খামারবাড়ীর দেওয়া তথ্যে চলতি খরিপ মৌসুমে ৪ হাজার ৫১০ হেক্টর সবজির মধ্যে ৩৯০ হেক্টর জমিতে পটলের আবাদ হয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা। শীত মৌসুম চলে যাওয়ার পর বাকী মৌসুমজুড়ে পটল বিক্রি করতে পারবে চাষীরা। বাজারে চাহিদাও প্রচুর। এখন রমজান মাস উপলক্ষে নতুন পটলের চাহিদা আকাশচুম্বি। মাঠে ৪০ থেকে ৪৫টাকা কেজি দাম পড়লেও খুচরা বাজারে ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্চে পটল।
পটল চাষী জুবায়েদ ও লিটন জানান, বৃষ্টি ও প্রচণ্ড খরার কারণে পটল ক্ষেত লালবর্ণ ধারণ করছে। শুকিয়ে যাচ্ছে পাতা ও ডগা। এখন পর্যন্ত কৃষি বিভাগ থেকে কেউ দেখতে আসেনি। কোন খবরও নেয়নি।
আরেক চাষী আমজাদ জানান, রমজান মাসের এই সময়ে বাজারে নতুন পটলের চাহিদা রয়েছে প্রচুর। গতকাল ২ হাজার টাকা মনে পাইকাররা নিয়ে গেছে। আজ একটু দাম পড়েছে। ১ হাজার ৮০০ টাকা দাম বলছে। এখনো দরাদরি চলছে।
উত্তর নওয়াবশ গ্রামের মফিজল হকের ছেলে আল আমিন জানান, গতবার এক একর জমিতে পটল আবাদ করেছি। ক্ষেত তৈরি করতেই প্রায় লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এবার জাংলা খরচ লাগছে না ফলে অর্ধেক খরচে পটল লাগানো হয়েছে। এখন পোকা দমনে কীটনাশক প্রয়োগ করছি। আশা করছি ভালো দাম পাব।
ক্ষোভের সঙ্গে দক্ষিণ নওয়াবশের পটলচাষী মজনু মিয়া জানান, কুড়িগ্রাম জেলায় একসাথে সবচেয়ে বেশী পটল চাষ হয় এই জায়গায়। এখানে অনেক কোম্পানীর লোকজন আসে। বিভিন্ন কথাবার্তা বলে। কিন্তু সরকারি লোকজন তেমন একটা আসে না। এবার এখন পর্যন্ত কৃষি বিভাগ থেকে কেউ খোঁজ-খবর নিতে আসেনি। পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে আমরা জমির ভালোমন্দ দেখাশুনা করি। পোকা-মাকড় রোগবালাই দমনের চেষ্টা করি। কিন্তু সরকারি লোকেরও তো দায়িত্ব চাষীদের ভালোমন্দ দেখা!
ক্ষোভ উগড়ে দিলেন পটল চাষী বায়েজিদ। তিনি জানালেন, দিন দিন কৃষি বিভাগের লোকজন ধান্দাবাজীতে নেমেছে। তারা প্রকৃত কৃষককে কিছু দিতে চায় না। যেসব কৃষক তাদেরকে খুশি করতে পারে তাদেরকে তারা সহযোগিতা করে।
বায়েজিদ আরও বলেন, দেখেন পটল ক্ষেতে সমস্যা দেখা দিয়েছে কিন্তু তারা কোনো খোঁজ-খবর নিচ্ছে না। এগুলা এখন সরকারের দেখা উচিত।
এ ব্যাপারে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক বিপ্লব কুমার মোহন্ত জানান, চরাঞ্চলে পটলের চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। রোগবালাইয়ের বিষয়ে তিনি নিজেসহ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও উপ-সহকারি কৃষি অফিসাররা খবর পেলেই ছুটে যাবে বলে জানালেন তিনি।
এসআইএইচ