১৫ টাকার চালের কার্ডপ্রতি ১৫০০-২৫০০ টাকা আদায়ের অভিযোগ
নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নাম ভাঙ্গিয়ে উপজেলার চরএলাহী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুর রাজ্জাকের যোগসাজশে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ১৫ টাকার চালের নতুন কার্ডপ্রতি ১৫০০-২৫০০ হাজার টাকা আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। হতদরিদ্রদের মাঝে কেজিপ্রতি ১৫ টাকা দরে চাল বিতরণের জন্য খাদ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক বিনা পয়সায় এসব কার্ড সরবরাহ করলেও কার্ড নবায়নে এবং নতুন কার্ড দিতে এসব টাকা নেওয়া হয়েছে।
সরেজমিনে চরএলাহী ইউনিয়নে গেলে এমন অভিযোগ করেন কার্ডধারী হতদরিদ্র নারী-পুরুষ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নারী অভিযোগ করে বলেন, টাকা ছাড়া নতুন কার্ড এবং পুরাতন কার্ড নবায়ন হয় না। ১৫০০ টাকার এক টাকাও কম নেয় না। অনেক উপাস থেকে মানুষের থেকে এনে এ টাকা দিয়েছি। না হলে কার্ড পাবো না। তাহলে না খেয়ে মারা যাবো।
স্থানীয়দের অভিযোগ, উপজেলার ৮ নম্বর চরএলাহী ইউনিয়নের ১ হাজার ১৭০ জন হতদরিদ্রের কাছ থেকে ইতিমধ্যে প্রায় ১৮ থেকে ২০ লাখ টাকা আদায় করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়াম্যান ও ইউনিয়ন পরিষদ সচিব কামাল উদ্দিনের যোগসাজশে চরএলাহী ইউনিয়নের বর্তমান ডিলার মিজান ও তৎকালীন ডিলার রাজীব কর্মসূচির আওতায় থাকা কার্ডধারীদের কাছ থেকে এসব টাকা সংগ্রহ করে ইউপি চেয়ারম্যান আবদুর রাজ্জাককে দেন ইউপি সদস্য এবং ডিলাররা। উপজেলা খাদ্য অফিস, ইউপি সচিব ও দুইজন ডিলার এবং ১০ জন ইউপি সদস্য আদায় করা এই টাকার ভাগের একটা অংশ পান।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, এই কর্মসূচির আওতায় হতদরিদ্রদের মাঝে কম দামে চাল সরবরাহের জন্য চরএলাহী ইউনিয়নের ১১৭০ জন মানুষকে কার্ড দেওয়া হয়। এ কার্ড নবায়নের জন্য এবং নতুন কার্ড দিতে প্রত্যেক কার্ডধারীর কাছ থেকে ১৫০০-২৫০০ টাকা নেওয়া হয়েছে। আর এই টাকা আদায় করেছেন খাদ্য অধিদপ্তরের নির্ধারিত ডিলাররা স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আবদুর রাজ্জাক, তার পরিষদের সদস্যরা এবং তাদের মনোনীত লোকজন।
কার্ডধারী একাধিক ব্যক্তি বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও অফিস খরচের নাম করে এই টাকা আদায় করেছেন ডিলাররা। আবার চাল বিতরণের সময় অতিরিক্ত ৩০ টাকা অবৈধভাবে আদায় করেছেন সংশ্লিষ্ট ডিলার সালাউদ্দিন ও মিজান।
চরএলাহী ১নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ইসলাম জানান, আগে আমরা ১০ টাকার চালের কার্ড বিনা পয়সায় পেয়েছি। পরে ডিলার মিজান ইউএনও’র নাম ভাঙ্গিয়ে টাকা সংগ্রহ করে।
চেয়ারম্যানকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, কিছু জানেন না। যারা টাকা দিয়েছে তাদের এক পরিবারে ৪-৫ জনেও কার্ড পেয়েছে। যারা টাকা দিতে পারেনি। তারা কার্ড পায়নি। কার্ড প্রতি ১৫০০ থেকে ২৫০০ টাকা আদায় করা হয়।
স্থানীয় বাসিন্দা বাচ্চু মিয়া জানান, আমার থেকে কার্ড দেওয়ার জন্য ১৫০০ টাকা নেওয়া হয়েছে। পরে আমাকে কার্ড না দিয়ে টাকা ফেরত দেওয়া হয়। একেক জনের কাছ থেকে ১৫০০ থেকে ২৫০০ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয়।
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ডিলার মিজানের চাল বিতরণের সময় ট্যাগ অফিসারের দায়িত্ব পালন করেন খোদ ইউপি চেয়ারম্যান আবদুর রাজ্জাক।
একাধিক ডিলার জানান, এসব অনিয়মের আরেক মূলহোতা হচ্ছে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ের সাইলো অপারেটর শাহাদাত হোসেন শামীম। তিনি নিজেকে অফিস সহকারী পরিচয় দেন। তার কারসাজিতে এখানে তৃণমূলে কার্ড বিতরণে ব্যাপক অনিয়ম হয়। তাকে ঘুষ দেওয়া ছাড়া কাজ করা যায় না।
এদিকে অভিযুক্ত ডিলার মিজানুর রহমান মিজান অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে বলেন,কাগজে কলমে আমি তো ডিলার নয়। এ বিষয়ে আমি জানি না। ডিলার আমার ছোট ভাই মোজাম্মেল হক।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চরএলাহী ইউনিয়ন পরিষদ সচিব কামাল উদ্দিন বলেন, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ১৫ টাকার কেজির চালের কার্ডে টাকা নেওয়ার বিষয়ে তার জানা নেই। এ বিষয়ে কেউ কোনো অভিযোগ করেনি।
এ প্রসঙ্গে জানতে একাধিকবার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক রাজীব চন্দ্র রায়ের মুঠোফোনে কল করা হলেও তিনি কোনো সাড়া দেননি। তবে অফিস সহকারী শাহদাত হোসেন শামীম তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ নাকচ করে দেন।
এ বিষয়ে চরএলাহী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুর রাজ্জাক বলেন,এ বিষয়ে আমি জানি না। তবে এ রকম কোনো ঘটনা ঘটে নাই। এ রকম কোনো প্রমাণাদি নেই। চেয়ারম্যানের যোগসাজশে হয়েছে এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, তথ্য প্রমাণ থাকলে বিচার হবে।
এ ব্যাপারে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো.মেজবা উল আলম ভূঁইয়া বলেন, কেউ এ বিষয়ে অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এসআইএইচ