পাহাড়ের মানুষ ভালো নেই: সন্তু লারমা
পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ায় পাহাড়ের মানুষ ভালো নেই বলে মন্তব্য করেছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যান ও জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা ওরফে সন্তু লারমা। একইসঙ্গে অজানা কারণে চুক্তি বাস্তবায়ন ‘রুদ্ধ হয়ে আছে’ বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘আমাদের দুর্ভাগ্য পার্বত্য অঞ্চলের অস্তিত্বের যে সংকট সংস্কৃতির যে সংকট, সেই সংকটকে মোকাবিলা করতে প্রতিবিধান করার জন্য আমরা ১৯৯৭ সালে যে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি সাক্ষর করেছিলাম, এখানকার মানুষের জীবনধারার সাবলীলতা-স্বাভাবিকতা নিরাপত্তাসহ সব ধরনের উন্নয়নের যে চুক্তি সাক্ষরিত হয়েছে আজকে সেই চুক্তি কোনো না কোনোভাবে বাস্তবায়নের পথে রুদ্ধ হয়ে আছে।’
সোমবার (১০ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রাঙ্গামাটি বিজু, সাংগ্রাই, বৈসু, বিষু, বিহু, সাংক্রান উৎসবের উদ্বোধনী ও আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। রাঙ্গামাটি পৌর চত্বরে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে রাঙ্গামাটি বিজু, সাংগ্রাই, বৈসু, বিষু, বিহু, সাংক্রান উদযাপন কমিটি।
অনুষ্ঠানে ‘পাহাড়ের পরিস্থতি ভালো নয়’ মন্তব্য করে সন্তু লারমা বলেন, ‘এখানে পরিস্থিতি ভালো নয়, চৈত্র মাস আসলে আমাদের মনে অনেক আশা-আকাঙ্ক্ষা জাগে। বিজু বা চৈত্র মাসকে কেন্দ্র করে এখানকার মানুষরা নতুন করে আশায় বুক বাঁধে, নতুন আশায় জীবনটাকে দেখে। আমাদের ভাবতে হবে ফেলে আসা যে বছরগুলো সে বছরের মধ্যে আমার জীবনটা কেমন ছিল। যে জীবনে আমি নতুন করে প্রবেশ করতে যাচ্ছি, সে জীবন কেমন হতে পারে কেমন করে আসবে, সেটাও আমাদের অবশ্যই ভাবিয়ে তুলে।’
পাহাড়ের কারও ‘জীবনের নিরাপত্তা নেই’ উল্লেখ করে আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যান বলেন, ‘পার্বত্য অঞ্চলের তথা এখানকার স্থায়ী অধিবাসীদের কোনো সুখ-শান্তি ছিল না। তারা নানা দুশ্চিন্তায় বিপর্যস্ত থাকত। আজকে পার্বত্য অঞ্চলের বুকে আমাদের কারও জীবনের নিরাপত্তা নেই। আমাদের সামনে অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ। বিজু, সাংগ্রাই, বৈসু’কে আমরা পালন করছি, অথচ আমাদের অন্তরে প্রশ্ন জাগে আমার আশপাশে আমি কি নিরাপদ? আমি মনে করি যদিও এই সময়টা অনেক আনন্দের দিন অনেক আশা-আকাঙ্ক্ষার দিন। এইদিনে আমরা গুনগুন করে গান গাই, মনে মনে অনেক কিছুই আমরা ভাবি, দেখি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের কথা। কিন্তু চুক্তি সাক্ষরের পরে ২৫ বছর ধরে আমরা কোনো বছর এই আনন্দের দিন, সরলীয়া দিন উদযাপন করতে পারিনি। আজকে অনেকেই এখানে আসেননি, আমাকে দু-কয়েকজন ফোনে বলেছে, তারা আসা যাওয়ার পথে সমস্যায় পড়তে পারেন এজন্য আসেননি। বস্তুত আমাদের এই আনন্দের দিনটি অতীতের মতো হাসি-গানে ভরপুর করার জন্য অবশ্যই এগিয়ে যেতে হবে। বাধা-সমস্যার কারণে চৈত্র মাসের বিজুর দিন আমাদের জীবন থেকে হারাতে বসেছি, সেটা আমরা হারাতে চাই না।’
অনুষ্ঠানে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমাকে প্রধান অতিথি, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমাকে উদ্বোধক, সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্য বাসন্তী চাকমাকে প্রধান আলোচক ও রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অংসুই প্রু চৌধুরীকে সম্মানিত অতিথি করেছিল উদযাপন কমিটি। তবে প্রধান অতিথি ছাড়া সরকার দলীয় রাজনৈতিক দলের তিনজনেরই (উদ্বোধক, প্রধান আলোচক ও সম্মানিত অতিথি) কেউই উপস্থিত হননি। তবে গত বছর একই উৎসবে অংশগ্রহণ করেছিলেন এবারের সম্মানিত অতিথিতে নাম থাকা জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অংসুই প্রু চৌধুরী।
বিজু, সাংগ্রাই, বৈসু, বিষু, বিহু, সাংক্রান উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক প্রকৃতি রঞ্জন চাকমার (অবসরপ্রাপ্ত উপসচিব) সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ সদস্য সাধুরাম ত্রিপুরা, শিক্ষাবিদ অঞ্জুলিকা খীসা, পার্বত্য চট্টগ্রাম আদিবাসী লেখক ফোরামের সাবেক সভাপতি শিশির চাকমা, সিএইচটি হেডম্যান নেটওর্য়াকের সহসভাপতি অ্যাডভোকেট ভবতোষ দেওয়ান, সুজন রাঙ্গামাটির সাধারণ সম্পাদক এম জিসান বখতেয়ার প্রমুখ।
এদিন সকালে পৌরসভা চত্বরে বেলুন উড়িয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন অতিথিরা। পরে আলোচনা সভার পূর্বে পাহাড়ি নৃত্যশিল্পীদের পরিবেশনায় ডিসপ্লে প্রদর্শন করা হয়। আলোচনা সভা শেষে পৌরসভা চত্বর থেকে একটি র্যালি শুরু হয়। র্যালিটি জেলা শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ জেলা শিল্পকলা একাডেমির সামনে গিয়ে শেষ হয়। র্যালিতে পাহাড়ের চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, তঞ্চঙ্গ্যাসহ বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী শিশু-কিশোর, নর-নারীরা ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরিধান করে অংশগ্রহণ করেন।
এদিকে উদযাপন কমিটির তিনদিনের অনুষ্ঠানমালার মধ্যে দ্বিতীয় দিন (মঙ্গলবার) রাঙ্গামাটি মারী স্টেডিয়ামে বিভিন্ন খেলার আয়োজন ও শেষদিন রাজবন বিহার পূর্বঘাটে নদীতে ফুল ভাসানোর আয়োজন রয়েছে।
এসজি