এবার কলা গাছের সুতা থেকে শাড়ি তৈরি

বান্দরবান পার্বত্য জেলায় পাহাড়ের আনাচে কানাচে আছে অসংখ্য কলা গাছ। সেই কলা গাছের কলার কাদি কেটে নেওয়ার পর কলা গাছটি পচে যায় অথবা জমির মালিককে ওই গাছটি কেটে সরিয়ে ফেলে দিতে হয়। এখন দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি মেশিন দিয়ে কলা গাছের খোলস ছাড়িয়ে তৈরি হচ্ছে সুতা। কলা গাছ এখন আর ফেলনা নয়। আর এই কলা গাছের তন্তু থেকে তৈরি শুকনা সুতা দিয়ে শাড়ি তৈরি করলেন সিলেটের মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মাঝেরগাঁত্ত গ্রামের ভানুবিল এলাকার রাধাবতী দেবী। জেলা প্রশাসকের অনুরোধে শাড়ি তৈরিতে বান্দরবানে আসেন তিনি। ১৫ দিনের চেষ্টায় পূর্ণাঙ্গ একটি শাড়িও তৈরি করে ফেলেন।
৬৬ বছর বয়স্ক রাধাবতী দেবী বলেন, এর আগে শাড়ি বানিয়েছি অনেক। তবে কলার সুতা দিয়ে শাড়ি বানায়নি কখনো। এ প্রথম শাড়ি বানালাম। দেশে আমারটিই কলা গাছের সুতা দিয়ে বানানো প্রথম শাড়ি। আমিই জন্ম দিলাম।
তিনি আরও বলেন, ১২ হাত শাড়ি তৈরি করতে পারব কিনা চিন্তায় ছিলাম। সব উপাদান পেলে শাড়িটি তৈরি করতে আমার ১৫ দিন সময় লেগেছে। এই শাড়িটি তৈরি করতে কলা গাছের ১ কেজি সুতা লেগেছে। শুধু কি শাড়ি, সেই সুতা দিয়ে বানানো হচ্ছে ব্যাগ, কলম দানি, ম্যাট, দোলনাসহ বিভিন্ন কিছু। এগুলোর চাহিদাও বেশি। সুতা দিয়ে তৈরি বিভিন্ন জিনিস বানানোর বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থী এবং গৃহিণীরা।
প্রশিক্ষণ নেওয়া শিক্ষার্থী বান্দরবান ইসলামিয়া সিনিয়র আলিম মাদ্রাসার ৮ম শ্রেণির সাবিনা ইসলাম বলেন, ‘আমি প্রশিক্ষণ নিয়েছি। গত চার মাস ধরে আমি কলা গাছের সুতা দিয়ে বিভিন্ন জিনিস তৈরি করছি। পড়ালেখার পাশাপাশি এখন আমি কলম দানি, ম্যাট, ব্যাগ বানাতে পারি।’
আরেক শিক্ষার্থী বান্দরবান সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির লিজা বড়ুয়া বলেন, ‘প্রথম কলা গাছের সুতা দিয়ে পণ্য তৈরি করছি। পড়ালেখায় সময় দেওয়ার পাশাপশি আমি সুতা দিয়ে বিভিন্ন কিছু বানাই। এখন ফ্লোর মেট বানাচ্ছি । ব্যাগ বানাতে পারি। চিন্তা করছি কলম দানি কীভাবে তৈরি করব সেটা শিখব। আমি শিখে আমি অনেক জনকে শিখাবো।’
নিজেকে স্বাবলম্বী করার চেষ্টায় থাকা কালাঘাটার বাসিন্দা গৃহিণী জান্নাতুল ফেরদৌস জানান, কলা গাছের সুতা দিয়ে আগে কখনো কিছু করেনি। গত ৪ মাস আগে কলা গাছের সুতা দিয়ে জিনিস বানানো শিখেছি। এখন ফ্লোর ম্যাট, ওয়াল ম্যাট, দোলনা আমি তৈরি করতে পারি । আমি ৪ হাজার টাকা দিয়ে একটি ফ্লোর ম্যাট বিক্রি করেছি। এ ছাড়াও দোলনা, কলম দানি আমি বিক্রি করেছি। আমি নিজে শিখেছি। এলাকার অনেক জনকে শিখাচ্ছি। জেলা প্রশাসকের উদ্যোগে আমরা কাজ করছি।’
এ বিষয়ে বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক সাইং সাইং উ নিনি জানান, এটা পাইলট প্রকল্পে । এই প্রকল্পে ৪০ জনের মতো কাজ করছে। আমাদের লক্ষ্য কলা গাছের সুতা দিয়ে বৈচিত্র্যময় পণ্য তৈরি করা, এলাকার মানুষ বিশেষ করে নারীদের কর্মসংস্থান তৈরি করা। তবে শাড়ির টেকসইয়ের বিষয়ে গবেষণা প্রয়োজন। গবেষণার মাধ্যমে এটার আরও উন্নতি করতে হবে। এরইমধ্যে অনেকে এই শাড়ি কেনার জন্য অর্ডার করছে।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি জানান, আমি জানি না বাংলাদেশের আর কোথাও এখন পর্যন্ত কলা গাছের সুতা থেকে কেউ শাড়ি তৈরি করেছেন কি-না? যদি না করে থাকেন তবে এটিই হবে কলা গাছের সুতার প্রথম শাড়ী। আর যদি কোথাও তৈরি হয়ে থাকে যে কেউ জানলে ছবিসহ জানাতে পারেন।
এসআইএইচ
