সোলার পাম্পে বদলাল ঠাকুরগাঁওয়ের কৃষকদের ভাগ্য
বাড়তি খরচ বা ঝামেলা না থাকায় সোলারের দিকে আগ্রহ বাড়ছে ঠাকুরগাঁওয়ের কৃষকদের। অনেক সময় সেচ দিতে না পেরে কৃষকদের স্বপ্নের ফসল জমিতেই নষ্ট হয়ে যেত। সময়ের বিবর্তনে এখন সবকিছুই আধুনিক হয়েছে। আধুনিক হয়েছে দেশের বৈদ্যুতিক ব্যবস্থাও। পাশাপাশি ব্যবহার বেড়েছে সোলার প্যানেলের। কৃষি উৎপাদনের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ডিজেলের দাম দফায় দফায় বেড়ে যাওয়ায় কৃষি খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। তবে প্রযুক্তির ব্যবহারে কৃষকরা সমস্যা কাটিয়ে উঠছেন।
চলতি মৌসুমে ঠাকুরগাঁওয়ে ৬০ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত না হলে এই আবাদ থেকে দুই লাখ ৬৮ হাজার মেট্রিক টন ধান উৎপাদন হবে বলে ঢাকাপ্রকাশ-কে জানিয়েছেন জেলা কৃষি সস্প্রসারণ অধিদপ্তর।
গ্রামের পর গ্রামজুড়ে যে নয়নাভিরাম সবুজ সমারোহ তার পেছনে এই সোলার প্যানেলটি কৃষকের নিয়ামক শক্তি হিসেবে কাজ করছে। আর এখান থেকে উৎপাদিত সৌর বিদ্যুতে কেবল পাম্পের চাকাই নয়, কৃষকের ভাগ্যের চাকাও ঘুরছে। গতকাল ঠাকুরগাঁও-বালিয়াডাঙ্গী সড়কের আশপাশের জমিতে সোলার প্যানেল ব্যবহারের মাধ্যমে সেচ দিয়ে বোরো আবাদ করতে দেখা গেছে কৃষকদের।
কৃষক রমজান আলী ঢাকাপ্রকাশ-কে জানান, মৌসুমের শুরুতে ডিজেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় তারা ধান চাষ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ে যান। বাড়তি খরচে বোরোর জমিতে সেচ কীভাবে দেবেন তা নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন তিনি। তবে সোলার প্যানেল তাদের দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি দিয়েছে।
সদর উপজেলার কালমেঘ এলাকার রফিকুল ইসলাম নামের এক কৃষক জানান, সোলারের মাধ্যমে পানি দিলে সমস্যা হয় না। বাড়তি লোকের প্রয়োজন নেই। কিন্তু আগে যখন শ্যালো মেশিন দিয়ে পানি দিতাম তখন বাড়তি লোক লাগত। খরচও হতো বেশি। সেই সাথে শ্যালো দিয়ে পানি দিতে প্রচুর শ্রম দিতে হতো।
তিনি আরও বলেন, এখন আমি সোলারের মাধ্যমে জমিতে সেচ দিচ্ছি।
কৃষক ফজলুল হক ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ‘শ্যালো বা বরেন্দ্র ডিপ টিউবয়েলের মাধ্যমে জমিতে সেচ নিতে গেলে নানা ভোগান্তি পোহাতে হতো। এর সঙ্গে ডিজেলের দাম বাড়া বড় ধরনের দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু সব সমস্যার সমাধান করে দেয় সোলার প্যানেল। এখন সেচ নিয়ে কোনো ভাবনা নেই।’
নাজমুল নামে আরেক কৃষক বলেন, ‘এক বিঘা জমিতে শ্যালো মেশিনে সেচ নিতে ৪ থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকা খরচ হতো। কিন্তু সোলারে সেই একই পরিমাণ জমিতে সেচ দিতে খরচ হচ্ছে তিন হাজার টাকা। এতে বাড়তি খরচের বদলে উল্টো সাশ্রয় হচ্ছে।’
সেচের টাকা সাশ্রয় হওয়ায় ফসলের বাড়তি যত্ন নেওয়া সম্ভব হচ্ছে বলে জানান কৃষক জয়নাল আবেদীন। তিনি বলেন, সেচ নিয়ে যেহেতু চিন্তা করতে হচ্ছে না বরং টাকা সাশ্রয় হচ্ছে সেই টাকায় এখন সার, কীটনাশক প্রয়োগের পাশাপাশি ধানের বাড়তি পরিচর্যা করা সম্ভব হচ্ছে।
এ ব্যাপারে ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সিরাজুল ইসলাম ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ‘একটি সোলার পাম্প দিয়ে ২৫-৩০ বিঘা জমিতে মৌসুমভর সেচ দেওয়া সম্ভব। কিন্তু পাম্প বসানোর সময় করা খরচ ছাড়া এই পদ্ধতিতে সেচ দিতে তেমন খরচ নেই বললেই চলে। ফলে কৃষকদের লাভবান হওয়ার সুযোগ রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, জেলায় বর্তমানে ১০৭টি সোলার প্যানেল পাম্প রয়েছে। এসব পাম্পের মাধ্যমে চার হাজার বিঘা জমিতে সেচের সুবিধা পাচ্ছেন কৃষকরা। পরিবেশ রক্ষায় অবদান রাখা এবং খরচ কমানোর মাধ্যমে লাভজনক চাষাবাদে সোলার প্যানেল প্রযুক্তি ব্যবহার করতে কৃষকদের উৎসাহিত করা হচ্ছে।
এসআইএইচ