উল্লাসকর দত্তের বাড়ি অধিগ্রহণের গেজেট সম্পন্ন
অবশেষে বিপ্লবী উল্লাসকর দত্তের সরাইলের বাড়িটির একাংশ অধিগ্রহণের গেজেট সম্পন্ন হয়েছে। এখন অধিগ্রহণ পক্রিয়ার কাজটি করবেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। গতকাল বুধবার ওই বাড়ির সামনে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের একটি সাইনবোর্ডও সাটানো হয়েছে। ফলে শতাধিক বছর আগের গর্বিত ইতিহাস ও ঐতিহ্য রক্ষার সুবাতাস বইছে সরাইলে। সফল হয়েছেন বাড়িটি সংরক্ষণের জন্য আন্দোলনকারী জেলা উপজেলার সাহিত্য সাংস্কৃতিক সংগঠন সমূহ, স্থানীয় ইতিহাস সংরক্ষণ পরিষদ ও গণমাধ্যম কর্মীদের সংগঠন।
সূত্র জানায়, অগ্নিযুগের অগ্নিপুরূষ বিপ্লবী উল্লাসকর দত্তের সরাইলের কালীকচ্ছ (বাঘবাড়ি) গ্রামের পৈত্রিক ভিটিতে গত বছরের নভেম্বর মাসে বহুতল ভবন নির্মাণের কাজ করেছিলেন ক্রয়সূত্রে মালিকানা দাবীদার ব্যক্তিরা। উল্লাসকর দত্তের পৈত্রিক একটি পরিত্যাক্ত দালান ঘর ভেঙ্গে ফেলার পক্রিয়া চলছিল। বাধ সাজে জেলা উপজেলার শিল্পী, সাহিত্য সাংস্কৃতিক সংগঠন, ইতিহাস সংরক্ষণ পরিষদ ও সাংবাদিক সংগঠন প্রেসক্লাব।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সরাইল উদীচী শিল্পী গোষ্ঠি ও প্রেসক্লাবসহ অন্যান্য সংগঠনের নেতৃত্বে বাড়ির সামনে কাজ বন্ধ করে ঐতিহাসিক স্মৃতি রক্ষার দাবীতে একাধিক মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। উপজেলা সদরে মানববন্ধন হয়েছে। সাবেক এমপি জিয়াউল হক মৃধা, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, সরাইল সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মৃধা আহমাদুল কামাল, মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ বদর উদ্দিন, জেলা উদীচীর সভাপতি জহিরূল ইসলাম স্বপন, সম্পাদক মো. ফেরদৌস রহমান, সরাইল প্রেসক্লাবের সভাপতি মো. আইয়ুব খান, সম্পাদক মোহাম্মদ মাহবুব খান, সরাইল উদীচীর সভাপতি মো. মোজাম্মেল পাঠান, সম্পাদক মো. সুমন পারভেজ, স্থানীয় উল্লাসকর দত্তের স্মৃতি রক্ষা পরিষদের নেতৃবৃন্দ, টেলিভিশন জার্নালিষ্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি মো. শফিকুর রহমানসহ সকলেই বাড়িটি রক্ষার দাবী নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে সাক্ষাত করেন। এবং একটি স্মারকলিপিও দিয়েছেন।
মো.শাহিনুর ইসলাম ও তৌফিক আহমেদের নেতৃত্বে গঠিত কেন্দ্রীয় স্মৃতিরক্ষা পরিষদও কাজ করেন। বিষয়টি আমলে নেন জেলা প্রশাসন ও সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়। তারা বাড়িটি সরজমিনে পরিদর্শন করেন। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে ওই বাড়ির ১৫ শতক জায়গা অধিগ্রহণের জন্য গেজেটভুক্ত হয়েছে। এখন অধিগ্রহণের কাজটি সম্পন্ন করবেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসন।
সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ সরওয়ার উদ্দীন গেজেট হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, অধিগ্রহণের কাজটি পক্রিয়াধীন রয়েছে। আর প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সাইনবোর্ড লাগানোর কথা শুনেছি। তবে কে বা কারা লাগিয়েছেন জানি না। জেলা প্রশাসক মো. শাহগীর আলম বলেন, অধিগ্রহণ পক্রিয়াধীন এ বিষয়টি জানা আছে। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সাইন বোর্ডের বিষয়টি আমার জানা নেই।
প্রসঙ্গত: ১৮৮৫ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ এপ্রিল সরাইলের কালীকচ্ছের দত্তপাড়ার এই বাড়িতেই জন্ম গ্রহন করেছিলেন বিপ্লবী এই নেতা। তার পিতার নাম দ্বিজ দাস। ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে গুরূত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। ১৯০৮ খ্রিষ্টাব্দের ২ মে মুরারি পুকুর পাড়ে ব্রিটিশদের হাতে ধরা পড়েন।
১৯০৯ খ্রিষ্টাব্দে অলিপুর বোমা মামলা নামের বিখ্যাত মামলায় উল্লাসকর ও বারীন ঘোষের ফাঁসীর আদেশ হয়। কিছুদিন পর সাজা পরিবর্তন করে আন্দামানের সেলুলার জেলে যাবৎ জীবন দ্বীপান্তরের সাজা দেওয়া হয়। সেই সেলুলার জেলে উল্লাসকরকে শারীরিক নির্যাতন সইতে হয়। ফলে তিনি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দে মুক্তি পেয়ে তিনি ফিরে যান কলকাতা শহরে।
১৯৩১ খ্রিষ্টাব্দে আবারও গ্রেপ্তার করা হয়। কারাদণ্ড দেওয়া হয় ১৮ মাসের। ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে ভারত বিভাগের পর তিনি সরাইলের কালীকচ্ছ গ্রামের দত্তপাড়ায় নিজ বাড়িতে ফিরে আসেন। ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দে ৬৩ বছর বয়সে উল্লাসকর বিশিষ্ট নেতা বিপিন চন্দ্র পালের বিধবা মেয়েকে বিয়ে করেন। ওই বাড়িতে ১০ বছর বসবাসের পর তিনি কলকাতায় যান। জীবনের শেষ সময়টুকু কাটান শিলচরে। ১৯৬৫ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ই মে শিলচরেই তিনি শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন।
এএজেড