তেলের চাহিদা মেটাতে কক্সবাজারে বেড়েছে সরিষা চাষ
দেশে এখন তেলের দাম আকাশচুম্বী। সেটি হোক সয়াবিন অথবা সরিষার তেল। তেল কিনতে হলে সয়াবিন তেলের জন্য গুণতে হবে লিটার প্রতি ২০০ টাকা আর সরিষার তেলের জন্য ৩৫০ টাকা। এ জন্য তেলের চাহিদা মেটাতে ধান বা অন্য ফসলের পাশাপাশি সরিষা চাষে ঝুঁকছেন কক্সবাজারের প্রত্যন্ত অঞ্চলের কৃষকরা ৷ তাই কক্সবাজারের বিভিন্ন অঞ্চলে বিস্তীর্ণ জমিতে সরিষার ব্যাপক চাষ করা হয়েছে ।
জেলার ৯টি উপজেলায় বিশেষ করে চকরিয়া, পেকুয়া, রামু, উখিয়া, কক্সবাজার সদর, টেকনাফ ও ঈদগাঁওয়ের ক্ষেত অথবা পতিত জমিতে হলুদ সমৃদ্ধ এই শস্যের চাষ করেছেন কৃষকরা। তারা তাদের জমিতে অন্য ফসলের পাশাপাশি সরিষা চাষ করছেন। আগে সরিষা চাষে তেমন আগ্রহ না থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে সরিষা চাষে ঝুঁকছেন কৃষকরা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, কক্সবাজারের ৯ উপজেলায় ৯২৫ হেক্টর জমিতে এই বছর সরিষার আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে চকরিয়ায় ৫০০ হেক্টর, পেকুয়ায় ১০০ হেক্টর, সদরে ১০০ হেক্টর, রামুতে ১০০ হেক্টর এবং অন্যান্য উপজেলায় বিচ্ছিন্নভাবে ১২৫ হেক্টর জমি সরিষা চাষের আওতায় এসেছে। ধান বা অন্য ফসলের তুলনায় লাভজনক হওয়ায় কৃষকরা সরিষা চাষের দিকে ঝুঁকছেন।
রামুর কৃষক মো. রহমতুল্লাহ বলেন, দেশে এখন তেলের মূল্য অনেক। তেল ছাড়া কিছুই হয় না। অনেক নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার আছে সারাদিন কাজ করে বাড়ি ফেরার আগে বাজার সদাই করে তেল কেনার টাকা থাকে না। আমি নিজেও এর ভুক্তভোগী। এই যে জমি দেখছেন- এখানে দুই বছর আগেও ধান, ফুলকপি, বাঁধাকপি, মুলা, আলু ও মরিচ চাষ করতাম। তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে এখন সব বাদ দিয়ে শুধু সরিষা চাষ করছি। এতে সরিষা বিক্রি করে আমিও ভালো টাকা পাচ্ছি এবং পরিবারে তেলের চাহিদাও মিটছে।
চকরিয়া উপজেলার ঢেমুশিয়া এলাকার কৃষক শরীফ উদ্দিন বলেন, এবার আমি ৫ বিঘা জমিতে সরিষার আবাদ করেছি । আগের বছর এই জমিতে ধান চাষ করতাম। ধানের চেয়ে সরিষা চাষ লাভজনক হওয়ায় সরিষা চাষ বেঁচে নিলাম। এবার ভালো ফলনের আশা করছি।
তিনি আরও বলেন, সেচ, সার, কীটনাশক, শ্রমিক খরচসহ প্রতি বিঘায় খরচ পড়েছে ৫-৬ হাজার টাকা। ফলন ভালো হলে সব খরচ বাদ দিয়ে বিঘা প্রতি ১৫-২০ হাজার টাকা লাভ হবে।
সদরের ঝিলংজার খরুলিয়ার হিন্দুপাড়া গ্রামের কৃষক বাপ্পি দাশ বলেন, প্রতি বছর বাইরে থেকে ভালো বীজ সংগ্রহ করে সরিষার আবাদ করি। চলতি মৌসুমে তিন কাঠা জমিতে সরিষা চাষ করেছি। বেশ ভালো ফুল এসেছে। আশা করি ফলন ভালো হবে।
পিএমখালী গ্রামের কৃষক নজির হোসেন বলেন, এ বছর ৮ বিঘা জমিতে সরিষার চাষ করেছি। গত বছর ৩৮০০-৪০০০ টাকা মণে সরিষা বিক্রি করেছিলাম। মোটামুটি লাভ হয়েছিল। আশা করছি এবারও ভালো ফলন হবে।
রামুর দক্ষিণ মিঠাছড়ি এলাকার করিম উল্লাহ বলেন, আগের দিনে ধান মৌসুম শেষে অযথা জমি পড়ে থাকত। এখন আর সেই দৃশ্য চোখে পড়ে না। প্রায় সব জমিতেই আবাদ হয় সরিষা । এতে দেশে তেলের চাহিদা মিটছে এবং কৃষকরাও লাভবান হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, বৈরী আবহাওয়া ও পোকা-মাকড়ের উপদ্রব না হলে সরিষা বিক্রি করে ভালো লাভ হবে বলে আশা করছি।
এ ব্যাপারে কক্সবাজার সদর উপজেলা কৃষি বিভাগের উপ-সহকারী কর্মকর্তা সুপন বড়ুয়া বলেন, আমাদের ভোজ্য তেলের চাহিদার ৪০ শতাংশ দেশে উৎপাদন নিশ্চিত করতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কাজ করে যাচ্ছে। সরিষা আবাদ বাড়াতে প্রণোদনা কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। কৃষক যেন ভালো ফলন পান সেজন্য কৃষি বিভাগের টিম মাঠে কাজ করছে। আশা করছি বাম্পার ফলন হবে।
কক্সবাজার জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ কবির হোসেন বলেন, জেলায় এই বছর ৯২৫ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। কৃষকদের ভালোমানের বীজ ও সার সরবরাহ করা হয়েছে। কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এবার সরিষার ভালো ফলন হবে বলে আশা করছি।
তিনি আরও বলেন, গেল কয়েক বছরে কক্সবাজার জেলায় সরিষা চাষে বেশি ঝুঁকছেন কৃষকরা। এতে করে দেশে তেলের চাহিদা মিটবে এবং কৃষকও লাভবান হচ্ছেন। এটি আসলেই পজিটিভ দিক।
এসআইএইচ