ছেলের বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগে বাবা-মাকে তালাবদ্ধ, তদন্তের নির্দেশ
ছেলের বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগ এনে বাবা-মাকে স্টোর রুমে ২ ঘণ্টা তালাবদ্ধ করে রাখার অভিযোগ উঠেছে লক্ষ্মীপুর সদরের চরশাহী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম রাজুর বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
আদালতের নির্দেশনার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতের নাজির মো. ইয়াছির আরাফাত।
জানা গেছে, এ ঘটনায় বুধবার (২২ মার্চ) দুপুরে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী অঞ্চল চন্দ্রগঞ্জ আদালতের বিচারক আনোয়ারুল কবির আগামী ৩০ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করার জন্য চন্দ্রগঞ্জ থানার ওসিকে নির্দেশনা দেন।
এর আগে গত ১৬ মার্চ একাধিক গণমাধ্যমে ‘অভিযোগ ছেলের বিরুদ্ধে, চেয়ারম্যানের নির্দেশে ২ ঘণ্টা স্টোররুমে তালাবদ্ধ' শিরোনামসহ বিভিন্ন শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ হয়। সংবাদটি বিচারকের নজরে আসলে তিনি বিষয়টি আমলে নিয়ে এ আদেশ দেন।
আদালত সূত্র জানায়, ‘অভিযোগ ছেলের বিরুদ্ধে, চেয়ারম্যানের নির্দেশে ২ ঘণ্টা স্টোররুমে তালাবদ্ধ বাবা-মা’ শিরোনামে ১৬ মার্চ কয়েকটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ আদালতের বিচারকের নজরে আসে। সংবাদে বর্ণিত ঘটনা পর্যালোচনায় প্রচলিত আইনে অপরাধ সংঘটিত হয়ে থাকতে পারে। এতে ঘটনাটির তদন্ত প্রয়োজন। এ ঘটনায় সাক্ষীদের জবানবন্দি ও প্রয়োজনীয় অন্যান্য সাক্ষ্যগ্রহণ করে আদেশের পর থেকে ৩০ দিনের মধ্যে তদন্তপূর্বক আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য চন্দ্রগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।
চন্দ্রগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তহিদুল ইসলাম বলেন, আদালতের নির্দেশনা এখনো হাতে আসেনি। নির্দেশনা কপি পেলে তদন্তপূর্বক নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।
এদিকে পরিষদের স্টোর রুমে আটক রেখে এবং অকথ্য ভাষায় গালাগালির অভিযোগ এনে গত ১৫ মার্চ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে ইউসুফ নামে এক ভুক্তভোগী লিখিত অভিযোগ দেন।
এতে উল্লেখ করা হয়, গত ১২ মার্চ সদর উপজেলাধীন মিয়ার বাজার নামক এলাকায় রিকশাচালক বাবুলের রিকশার ব্যাটারি চুরি হয়। এই ঘটনায় চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম রাজু চরশাহীর ছোট ভল্লবপুর গ্রামের মোহাম্মদ ইউসুফের ছেলে পারভেজ ও একই এলাকার আবুল কাশেমের ছেলে ফিরোজ আলমকে সন্দেহ করেন। ১৩ মার্চ বিকালে চেয়ারম্যান মুঠোফোনে পারভেজের বাবা মোহাম্মদ ইউসুফ ও মা পারুল বেগম এবং ফিরোজের বাবা আবুল কাশেমকে পরিষদে দেখা করতে বলেন।
চেয়ারম্যানের নির্দেশে তারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কক্ষে গেলে চেয়ারম্যান তাদের অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করে এবং পরিষদের স্টোর রুমে দুই ঘণ্টা তালাবদ্ধ আটকে রাখেন। এক পর্যায়ে তাদের থেকে সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য ছাত্তারের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়।
এ প্রসঙ্গে ইউসুফ বলেন, আমার ছেলে যদি এ ঘটনার সাথে জড়িত হয় তাহলে তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক। কিন্তু বিনা কারণে চেয়ারম্যান আমাদের উপর অন্যায় করেছে। তাই আমি ন্যায় বিচারের জন্য ইউএনওর কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।
এদিকে এ বিষয়ে ইউপি সদস্য মো. ছাত্তার বলেন, কাউকে আটকে রাখা হয়নি। সাদা কাগজে সইও নেওয়া হয়নি। শুধু ইউছুফকে বলা হয়েছে তার ছেলে যেন রাত ১১টার পর বাইরে বের না হয়।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম রাজু বলেন, চুরির ঘটনার সাথে পারভেজ জড়িত। সে আরও অনেক জায়গায় চুরি করেছে। তাকে খোঁজ করে পাওয়া না যাওয়ায় তার বাবা ইউসুফকে পরিষদে ডেকে আনা হয়েছে। তবে তাকে তালাবদ্ধ করে রাখা হয়নি। জিজ্ঞাসাবাদের পর তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এখন ষড়যন্ত্র করে আমার বিরুদ্ধে এ অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।
এসআইএইচ