বিদ্যুৎ উৎপাদন এখন ব্যয়বহুল জিনিস: জুনায়েদ সাকি

রংপুরে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেছেন, সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদনের নামে উন্নয়নের কথা বলছেন। বাস্তবে এই বিদ্যুৎ উৎপাদন এখন একটা ব্যয়বহুল জিনিসে পরিণত হয়েছে। সরকারের বিদ্যুৎ নীতি যেভাবে চলছে, তাতে এই বিদ্যুৎ এখন আমদানি নির্ভর হয়ে গেছে।
জ্বালানি দিক থেকেও বিদ্যুৎ আমদানি নির্ভর, উৎপাদিত বিদ্যুৎও আমদানি নির্ভর। শনিবার (১৮ মার্চ) সন্ধ্যায় বাংলাদেশ কৃষক-মজুর সংহতির দুই দিন ব্যাপী ১ম কেন্দ্রীয় সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রংপুর সরকারি সিটি কলেজ সংলগ্ন ঈদগাহ মাঠে এ কথা বলেন।
সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ কৃষক মজুর সংহতির কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক দেওয়ান আবদুর রশিদ নীলু।বক্তব্য রাখেন ভাসানী গবেষক ও প্রামাণ্যচিত্র নির্মাতা সৌমিত্র দস্তিদার, কৃষক নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা আমজাদ হোসেন, কিষানী সংগঠক মাহমুদা খানম।
জোনায়েদ সাকি বলেন, এই আমদানি নির্ভরতা এবং কতিপয় ব্যবসায়ী গোষ্টিকে বিদ্যুৎ সংকটের সমাধানের নামে রেন্টাল, কুইক রেন্টাল ব্যবস্থা তৈরি করেছিল সরকার। যেটা ২০১৪ সালে সমাপ্ত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেটা সমাপ্ত না করে এখনও পর্যন্ত লাইসেন্স ক্রমাগতভাবে বাড়িয়ে তুলে উৎপাদনে না রেখে ক্যাপাসিটি চার্জ দেওয়া হচ্ছে।
আমরা এমন একটা সরকারের অধীনে আছি। যে সরকার পরপর তিন দফায় ১৪ বছর ধরে ক্ষমতায় আছে। তাঁরা ২০১৪ সালের পর থেকে জনগণের ভোটকে তোয়াক্কা করে না। ভোট ছাড়া তাঁরা জবরদস্তী কায়দায় রাষ্ট্র ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে নানাভাবে জনগণের অধিকারকে খর্ব করে জবরদস্তি কায়দায় দমন পীড়ন করে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রেখেছে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের দিকে যদি তাকাই, তাহলে দেখব-সরকারের ক্ষমতা ব্যবহার করে মুষ্টিমেয় গোষ্টি এখন বিপুল পরিমাণ ধনসম্পদ তৈরি করেছেন। এই সম্পদ তাঁরা রাষ্ট্র ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে বিদেশে পাচার করে দিচ্ছেন।
কতিপয় ব্যক্তি, গোষ্টি, গ্রুপ সরকারের ক্ষমতা বলে বেশ কয়েকটি ব্যাংকের মালিক হয়েছে যাচ্ছে। হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যাংক থেকে ঋণ নিচ্ছে। এক একটি বড় প্রকল্পের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা দুর্নীতির মাধ্যমে তাঁরা আহরণ করছে। এই টাকা দেশে বিদেশে নানা ভাবে আছে।
বিশেষভাবে বিদেশে পাচার হচ্ছে বিপুল অর্থ। আন্তজাতিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান খবর দিচ্ছে বছরে এখান থেকে অন্তত পক্ষে ১৪ থেকে ১৫ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে যায়। এই সরকারের আমলে দেশ থেকে ৭০-৮০ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে গেছে বিদেশে।
জোনায়েদ সাকি কৃষি ভর্তুকি নিয়ে বলেন, সরকার কৃষিতে ভর্তুকি দিচ্ছে। কিন্তু সেই ভর্তুকি কোন কাজে আসছে না কৃষকের। যারা উৎপাদনের সাথে জড়িত তাদের হাতে কিছু নাই। কৃষকেরা উৎপাদন পণ্যের ভালো দাম পাচ্ছে না। ইউনিয়ন পর্যায়ে ক্রয় কেন্দ্র খোলা হলে, সরকার নির্ধারিত মূল্যে ফসল বিক্রি করতে পারলে কৃষকেরা ক্ষতির মুখে পরতো না।
লুটেদারদের হাতে ক্ষমতা, যারা শুধু লুটপাটে ব্যস্ত। কৃষকেরা উৎপাদনে উৎসাহ হারিয়ে ফেলছে, নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে। জনগণের টাকায় চলা সরকার কৃষকের উন্নয়নে ভুমিকা রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। এ সরকারের কোন জবাবদিহিতা না থাকায় উন্নয়নের নামে বড় বড় প্রকল্প হলেও তা জনগণের কোন কাজে আসছে না, বরং দুর্নীতি দিন দিন বাড়ছে।
জনগণের কষ্টের কথা চিন্তা না করে, কয়েক দফায় বিদ্যুৎ-এর দাম বাড়ানো হয়েছে। মাসে মাসে দাম বাড়বে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। দেশের বিদ্যুৎ খাত আজকে একটি গোষ্ঠির পকেট ভারি করছে। দুর্নীতির মাধ্যমে বিদ্যুৎ উন্নয়ন করতে গিয়ে শুধুই কষ্ট বাড়ছে জনগণের।
এএজেড
