অক্সিজেন প্ল্যান্ট ধর্মঘট প্রত্যাহার, এসআই ক্লোজড
সীতাকুন্ডে সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টে দুর্ঘটনার ঘটনায় মামলার পর মালিককে গ্রেপ্তারের পর শিল্পাঞ্চলে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। গেল বুধবার রাতে গ্রেপ্তার এক পরিচালককে কোমরে দড়ি বেঁধে আদালতে তোলা হয়। তিনি সীমা গ্রুপের পরিচালক পারভেজ উদ্দীন সান্টু। মূলত তাঁকে অপমানজনকভাবে আদালতে ক্ষুব্ধ হন সেখানকার বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিকরা।
এ ঘটনায় শুক্রবার (১৭ মার্চ) মালিকপক্ষের আন্দোলনের ডাকে সারা দিয়ে সব অক্সিজেন প্ল্যান্ট বন্ধ রাখা হয়। সীতাকুন্ড এলাকায় অবস্থিত অন্তত ১২ প্ল্যান্টে অক্সিজেন উৎপাদন হয়নি। তবে শুক্রবার রাতে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের সঙ্গে শিল্প মালিকদের আলোচনার পর ধর্মঘট প্রত্যাহার হয়। তবে শিল্পাঞ্চলে অস্থিরতার শঙ্কা কাটেনি। যে কোন সময় ফের আন্দোলন ধর্মঘট হতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
অক্সিজেন প্ল্যান্ট মালিককে গ্রেপ্তার বিষয়ে বৃহস্পতিবার বিকেলে বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স অ্যান্ড রিসাইক্লার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএসবিআরএ) নেতারা প্রতিবাদ সভায় মিলিত হন। সভায় গ্রেপ্তারের পর কোমরে রশি বেঁধে সীমা গ্রুপের পরিচালক পারভেজ উদ্দীন সান্টুকে আদালতে হাজির করার প্রতিবাদ করেন। এজন্য চট্টগ্রামের সব অক্সিজেন প্ল্যান্ট বন্ধ রাখার ঘোষণা দেন ব্যবসায়ীরা।
সভায় বিএসবিএর সভাপতি মোহাম্মদ আবু তাহের বলেন, অক্সিজেন প্ল্যান্ট মালিকদের গ্রুপের পরিচালক গ্রেপ্তার ও লাঞ্ছনার প্রতিবাদে কারখানা বন্ধের ঘোষণা দেন চট্টগ্রামের অক্সিজেন প্ল্যান্ট মালিকরা। তিনি বলেন, চট্টগ্রামভিত্তিক শিল্প গ্রুপ সীমা অক্সিজেন লিমিটেডের পরিচালক পারভেজ উদ্দীনের মত শীর্ষ ব্যবসায়ীকে কোমরে দড়ি দিয়ে লাঞ্ছিত করার মত ঘটনা দেশের ব্যবসায়ী সমাজের জন্য অপমানজনক। এ ঘটনায় ব্যবসায়ী সমাজ ছাড়াও সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে।
প্রতিবাদ সভায় উপস্থিত ছিলেন বিএসবিএর ভাইস প্রেসিডেন্ট জহিরুল ইসলাম রিংকু, সদস্য লিয়াকত আলী চৌধুরী, মাস্টার আবুল কাশেম, নাঈম শাহ ইমরান, সিমনি গ্রুপের এমডি লায়ন মোহাম্মদ ইমরান, বিএসবিআরএ–এর সদস্যগণ, বায়ার এসোসিয়েশনের প্রতিনিধিসহ অন্যান্য শিল্প গ্রুপের মালিক ও প্রতিনিধিরা।
এ ব্যাপারে মোহাম্মদ আবু তাহের বলেন, প্রশাসনের সঙ্গে ফলপ্রসু আলোচনার পর আজ শনিবারের ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয়েছে। কারখানাগুলো স্বাভাবিক উৎপাদন কাজ অব্যাহত রাখবে। এদিকে শিল্পপতিকে কোমরে দড়ি বেঁধে আদালতে নেয়ায় ক্ষুব্ধ ব্যবসায়ীদের অন্যতম সংগঠন বিজিএমইএ। এ ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বিজিএমইএর প্রথম সহ-সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে এক বিবৃতি পাঠিয়েছেন।
এতে তিনি বলেন, উদ্যোক্তাগণ শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপনের আগে তা পরিচালনার জন্য বিভিন্ন স্তরে চাহিদা মোতাবেক প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ দেন। এক্ষেত্রে সীমা প্ল্যান্টেও অগ্নি নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট কাজে নির্ধারিত কর্মকর্তা নিয়োজিত ছিল। অগ্নিদুর্ঘটনার তদন্ত করে জড়িতদের চিহ্নিত করা হয়নি।
এসব না করেই একজন শিল্পোদ্যোক্তাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে অপমানজনকভাবে কোমরে দড়ি বেঁধে আদালতে উপস্থাপন করা হয়। এতে শিল্পমালিক মহলে ভীষণ ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এতে বিভিন্ন শ্রেণীর শিল্প উদ্যোক্তাগণ চরম হতাশা ব্যক্ত করেছেন। এ ধরনের কর্মকাণ্ড সরকার ও আইনশৃক্সখলা বাহিনীর বিরুদ্ধে ব্যবসায়ী সমাজকে ক্ষেপিয়ে তোলার পাঁয়তারা কিনা তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।
তিনি আরও বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষিতে বর্তমান অর্থনৈতিক মন্দাবস্থায় শিল্প মালিকগণ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক সহযোগিতায় নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও ব্যাপক শিল্পায়নে প্রাণান্তর প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। এ ধরনের ন্যাক্কারজনক ঘটনার ফলে ব্যবসা বাণিজ্য সহ শিল্প প্রসারে উদ্যোক্তাগণ আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন। যা বর্তমান অর্থনৈতিক মন্দাবস্থায় দেশের শিল্পায়নে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
বিবৃতিতে তিনি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে শিল্প উদ্যোক্তাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা বিবেচনায় তাঁদেরকে যথাযথ মূল্যায়ন ও সম্মান নিশ্চিতকরণসহ ভবিষ্যতে এ ধরনের ন্যাক্কারজনক ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান। দড়ি বেঁধে আদালতে নেওয়ায় এসআই ক্লোজড।
চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডের কদমরসুল এলাকায় বিস্ফোরণের ঘটনার মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টের পরিচালক পারভেজ উদ্দিন সান্টুকে কোমরে দড়ি বেঁধে আদালতে নেওয়ার পর থেকে ক্ষোভের সৃষ্টি। এই অভিযোগে এক এসআইকে ক্লোজড করা হয়েছে। অরুণ কান্তি বিশ্বাস নামে ওই এসআই শিল্প পুলিশে কর্মরত।
বুধবার (১৫ মার্চ) পারভেজ উদ্দিন সান্টুকে হাতকড়া পরিয়ে এবং কোমড়ে দড়ি বেঁধে আদালতে তোলার একটি ছবি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছবিটি ভাইরাল হয়। বুধবার রাতেই শিল্প পুলিশের ওই এসআইকে ক্লোজড করা হয়। চট্টগ্রাম শিল্প পুলিশের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সুলাইমান জানান, এসআই অরুণের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
শনিবার (৪ মার্চ) বিকেল ৪টা ৫৫ মিনিটে কদমরসুলের কেশবপুর এলাকায় সীমা স্টিলের অক্সিজেন প্ল্যান্টে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। ভয়াবহ এ বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে কয়েক কিলোমিটার এলাকা। ঘটনাস্থলের প্রায় আধা কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ছিটকে পড়ে বিস্ফোরিত ইস্পাতের টুকরো। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ২১ ইউনিটট ঘটনাস্থলে গিয়ে ২৩ ঘণ্টায় আগুণ নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় এই ৭ জন নিহত হয়েছে। আহত হন প্রায় ৩০ জন।
এ ঘটনা নিয়ে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটি গত ১৪ মার্চ তদন্ত রিপোর্ট জমা দেন। জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামানের কাছে দেওয়া রিপোর্টে দুর্ঘটনা রোধে নানা সুপারিশ করা হয়। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন জমা দেওয়ার ৪ ঘন্টার মধ্যেই ওই রাতেই সীমা অক্সিজেনের পরিচালক পরিচালক পারভেজ উদ্দিন সান্টুকে গ্রেপ্তার করে শিল্প পুলিশ। গ্রেপ্তার পারভেজ সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টে বিস্ফোরণের ঘটনায় সীতাকুন্ড থানায় দায়েরকৃত মামলার দুই নম্বর আসামি।
এএজেড